পুজোর মণ্ডপে ডেঙ্গি নিয়ে প্রচারে ৩৫ লক্ষ খরচ, সাফল্য এল কি?

সঙ্গ, ‘স্বাস্থ্য বান্ধব শারদ সম্মান ২০১৯’। আগামী শনিবার এই প্রতিযোগিতার সেরাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেবে পুরসভা।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:৩৪
Share:

সচেতনতায়: ডেঙ্গি রুখতে পাড়ায় পাড়ায় মাইকে ঘোষণা স্বাস্থ্যকর্মীদের। কসবায়। নিজস্ব চিত্র

ডেঙ্গি রুখতে ঘটা করে শুরু হয়েছিল শারদ-সচেতনতা। কিন্তু তাতে আদৌ কোনও লাভ হল কি? শহরের বর্তমান ডেঙ্গি পরিস্থিতিতে এই প্রশ্নই ঘুরছে কলকাতা পুর প্রশাসনের অন্দরে। প্রসঙ্গ, ‘স্বাস্থ্য বান্ধব শারদ সম্মান ২০১৯’। আগামী শনিবার এই প্রতিযোগিতার সেরাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেবে পুরসভা।

Advertisement

দুর্গাপুজোর সময়ে বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে ডেঙ্গি-সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দিতে গত বছর থেকেই সক্রিয় হয়েছিল পুর প্রশাসন। ডেঙ্গি নিয়ে যথাযথ প্রচারের জন্য পুজো কমিটিগুলিকে সম্মানিতও করা হয়েছিল। পুরসভা সূত্রের খবর, ২০১৯-এ ওই সম্মানের জন্য প্রায় সাড়ে ৩৫ লক্ষ টাকা খরচ হচ্ছে। কিন্তু ওই টাকা খরচের পরেও কতটা জনসচেতনতা তৈরি হয়েছে, তা নিয়ে সংশয়ী পুরকর্তাদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, যে ভাবে শহরবাসীদের একটি বড় অংশ এখনও ডেঙ্গি সম্পর্কে সচেতন নন, তাতে এক কোটি টাকা খরচ করলেও পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।

২০১৮ সালে ডেঙ্গি সচেতনতার জন্য দুর্গাপুজোর মণ্ডপগুলিকে বেছে নিয়েছিল পুরসভা, কারণ সেখানে সহজেই বহু মানুষের কাছে পৌঁছনো যায়। সেই সূত্রেই চালু হয়েছিল ‘স্বাস্থ্য বান্ধব শারদ সম্মান’। গত বছর প্রতিযোগিতায় প্রায় ১৬০০ পুজো যোগ দেয়। পুরসভা সূত্রের খবর, এ বছর প্রতিযোগিতার জন্য মোট ৩৫ লক্ষ ৬৮ হাজার ৪০০ টাকা খরচ হয়েছে। তার মধ্যে ১৫ লক্ষ ৪৮ হাজার ৪০০ টাকা দেওয়া হয়েছে ‘ন্যাশনাল আর্বান হেলথ মিশন’-এর খাত থেকে। বাকি ২০ লক্ষ ২০ হাজার টাকা এসেছে পুর রাজস্ব থেকে। পুর-তথ্য বলছে, রাজস্বের টাকা থেকে প্রথম রাউন্ডে বরো স্তরে ডেঙ্গি-বিরোধী প্রচারের জন্য প্রথম তিনটি পুরস্কার বাবদ ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র, খামের জন্য লেগেছে ৫ লক্ষ টাকা। ১৬টি বরোয় সেরা প্রতিযোগীদের পুরস্কার বাবদ ৪ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা এবং রানার্সদের জন্য ব্যয় হয়েছে ৩ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। ‘মেয়রস চয়েস’ পুরস্কারের জন্য লেগেছে আরও ৪ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘আমাদের তরফে যদি কোনও খামতি থাকে, সে ব্যাপারে অভিযোগ করলে

Advertisement

আমরা অবশ্যই শুনব। কিন্তু আমরা তো চেষ্টা করছি।’’

কিন্তু চেষ্টা করা সত্ত্বেও শহরের ডেঙ্গির এই বাড়বাড়ন্ত কেন?

পুজো-কমিটিগুলির একাংশের মতে, তাঁরা বড়জোর দু’সপ্তাহ সময় পেয়েছিলেন প্রচারের জন্য। পুজোর পরেও যে এলাকায় ডেঙ্গি নিয়ে

প্রচার করেছে সংশ্লিষ্ট ক্লাবগুলি, সেখানে ডেঙ্গি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কিন্তু যেখানে ডেঙ্গি-প্রচার শুধুই পুজোর ওই ক’দিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, সেখানেই ডেঙ্গির প্রাদুর্ভাব বেশি। কাশী বোস লেনের পুজো কমিটির কর্তা সোমেন দত্ত বলছেন, ‘‘পুজোর পরেও

ব্যক্তিগত স্তরে উদ্যোক্তারা যেখানে প্রচার চালিয়েছেন, সেখানে সচেতনতা বেড়েছে। বাকি জায়গাগুলোয় তেমন ভাবে হয়নি।’’ দক্ষিণ কলকাতার এক পুজোকর্তা আবার বলছেন, ‘‘শুধু তো পুজো উদ্যোক্তাদের উপরে ভরসা করলে হবে না। সংশ্লিষ্ট এলাকায় স্বাস্থ্যকর্মী বা পুরসভা কী ভাবে কাজ করছে, সেটাও এ ক্ষেত্রে বিবেচ্য।’’ ডেপুটি মেয়র তথা মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘ডেঙ্গি-লড়াই শুধু কেন্দ্রীয় বা বরো স্তরে কাজ করেই আটকানো সম্ভব নয়। সকলে সচেতন না হলে ডেঙ্গি ঠেকানো মুশকিল।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement