KMC

KMC: বিলম্বে বোধোদয়! পাঁচ হাজার পুকুর হারিয়ে শহরের জলাশয় নিয়ে উদ্যোগ পুরসভার

যাবতীয় পরিসংখ্যান বলছে যে, ধারাবাহিক ভাবে পুকুর বোজানো হয়েছে শহরে।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২২ ০৬:৪০
Share:

ফাইল চিত্র।

একেই বলে বিলম্বে বোধোদয়। শহরের জলাশয় নিয়ে কলকাতা পুরসভার সাম্প্রতিকতম সিদ্ধান্তকে এ ভাবেই ব্যাখ্যা করছেন অনেকে।

Advertisement

পুরসভা সূত্রের খবর, চলতি মাসে মেয়র পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামী দিনে পুরসভার ওয়ার্ডভিত্তিক জলাশয়ের তালিকা থেকে কোনও পুকুর, ডোবা বা জলাশয় বাদ দিতে গেলে আগে পুরকর্তাদের সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে হবে। পুরসভার পরিবেশ ও ঐতিহ্য দফতরের ইঞ্জিনিয়ার এবং মূল্যায়ন ও রাজস্ব দফতরের আধিকারিকের যৌথ পরিদর্শনের উপরে ভিত্তিতে তৈরি রিপোর্ট পেশ করতে হবে মেয়র পরিষদের বৈঠকে। সেই রিপোর্ট ছাড়া তালিকা থেকে জলাশয়, পুকুর বাদ দেওয়ার প্রস্তাব মেয়র পরিষদের বৈঠকে তোলা যাবে না বলে সব দফতরকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন পুর কর্তৃপক্ষ। পুর প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে, এত দিন মূলত পুকুর বোজানোর অভিযোগ পেলে তবেই সেখানে যেতেন পুরকর্তারা। কিন্তু এ বার সব ক্ষেত্রেই তা করা হবে।

যার পরিপ্রেক্ষিতেই পরিবেশকর্মীদের প্রশ্ন, কয়েক হাজার জলাশয়, পুকুর হারিয়ে যাওয়ার পরে চৈতন্য হল পুরসভার? পুকুর, জলাশয় বোজানোর ধারাবাহিক অভিযোগ সত্ত্বেও এত দিন কেন পদক্ষেপ করেনি তারা? শুধুমাত্র ‘পুকুর বোজানো রুখতে পুরসভা বদ্ধপরিকর’, এই ‘নিষ্ফল’ অভয়বাণী দেওয়া ছাড়া? নদী বিশেষজ্ঞ সুপ্রতিম কর্মকার বলছেন, ‘‘কলকাতার মাটির নীচে কাদার স্তর রয়েছে। সেই স্তর ভেদ করে জল ঢোকে না মাটিতে। কাজেই কলকাতাকে বাঁচানোর আদি ও অকৃত্রিম পথ পুকুর সংরক্ষণ। সেই পুকুর বুজে যাওয়া মানে শহরের বাস্তুতন্ত্রের বুকে কুড়ুল মারা।’’ ‘ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ ওয়ার্কিং গ্রুপ ২’-এর রিপোর্ট উল্লেখ করে জলাভূমি গবেষক ধ্রুবা দাশগুপ্ত জানাচ্ছেন, আগামী দিনে কলকাতায় অতিরিক্ত তাপমাত্রা এবং বাতাসে আর্দ্রতা বাড়ার কথা বলা হয়েছে। বাড়বে ঘূর্ণিঝড়ের দাপট। তাঁর কথায়, ‘‘এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে জলাভূমিকে বাঁচাতেই হবে। না হলে আমাদের কেউ বাঁচাতে পারবে না।’’

Advertisement

আর সেখানে শহরের বুক থেকে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে পুকুর, জলাশয়। শুধু তাই নয়, জলাশয় সংক্রান্ত পুর তালিকাতেও বিস্তর অসঙ্গতি রয়েছে বলে জানাচ্ছেন পরিবেশবিদ-গবেষকদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, ১৯৯৬ সালে শহরের পুকুর সংক্রান্ত একটি তালিকা তৈরি করেছিল পুরসভা। তা প্রকাশ্যে আসে ২০০১ সালে। সংশ্লিষ্ট তালিকায় পুকুরের সংখ্যা ছিল প্রায় দেড় হাজার। এর পরে ২০০৬ সালে পুরসভার সংশোধিত তালিকায় জলাশয়ের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় চার হাজারে। শহরের পুকুর-জলাশয় নিয়ে গবেষণা করা, পরিবেশবিদ মোহিত রায়ের কথায়, ‘‘অর্থাৎ, সেই ১০ বছরে আড়াই হাজারেরও বেশি পুকুর, জলাশয় অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল তালিকায়।’’

ঘটনাপ্রবাহ বলছে, কেন্দ্রীয় সরকারের ‘ন্যাশনাল অ্যাটলাস অ্যান্ড থিম্যাটিক ম্যাপিং অর্গানাইজেশন’ (ন্যাটমো) ২০০৬ সালে (তখন ১৪১টি ওয়ার্ড ছিল) শহরের মানচিত্র বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছিল, পুকুর-জলাশয়ের সংখ্যা ছিল ৮৭০০। মোহিতবাবুর কথায়, ‘‘বছর সাতেক আগে উপগ্রহ-চিত্রে দেখা গিয়েছিল, সেই সংখ্যাটা পাঁচ হাজারের কাছাকাছি। বর্তমানে তা প্রায় চার হাজারে এসে দাঁড়িয়েছে।’’

অর্থাৎ যাবতীয় পরিসংখ্যান এটাই বলছে যে, ধারাবাহিক ভাবে পুকুর বোজানো হয়েছে শহরে। পরিবেশ ও ঐতিহ্য দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ স্বপন সমাদ্দার
অবশ্য জানাচ্ছেন, জলাশয় সংক্রান্ত পুরনো তালিকা ‘আপডেট’ করার জন্যই এই সিদ্ধান্ত। তাঁর কথায়, ‘‘বর্তমানে পুকুরের সংখ্যা সাড়ে তিন হাজারের মতো। এর মধ্যে একটিও পুকুর, জলাশয় বোজাতে দেবে না পুরসভা। তার জন্য যা করার, সব
করা হবে।’’

পুরসভা তা করুক, মনে করছেন পরিবেশবিদেরা। কিন্তু প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে— এত দেরিতে কেন?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement