বেআইনি নির্মাণের পুরনো ‘রোগ’, অমিল দাওয়াই

কোথাও ‘মানবিকতা’! কোথাও আইনি জটিলতা! কোথাও আবার অন্য কোনও কারণে পিছিয়ে যায় বেআইনি নির্মাণ ভাঙার কাজ।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৯ ০০:৫০
Share:

—ফাইল চিত্র।

অপরিসর, আঁকাবাঁকা গলি। শেষ প্রান্তে পাঁচতলা একটি বাড়ি। নীচে কয়েক জন জড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে। ছাদের উপর থেকে দড়ির মাধ্যমে বস্তা ভর্তি ভাঙা ইট নেমে আসছে। বাড়ির ভিতরে এক চিলতে হাঁটার রাস্তা। সেই চিলতে ফাঁকে সিঁড়ির মুখে দাঁড়িয়ে আফতাব হোসেন বললেন, ‘‘এক বছর ধরে তো বাড়ি ভাঙার কাজ চলছে। কিন্তু আমরা কোথায় যাব বলুন তো! প্রোমোটার তো বেআইনি বাড়ি তৈরি করে চলে গিয়েছে। এখানে পঞ্চাশটার মতো পরিবার রয়েছে। তাদের কী হবে?’’

Advertisement

নারকেলডাঙা নর্থ রোডের যে বাড়িটির নীচে দাঁড়িয়ে আফতাব এই কথাগুলো বলছিলেন, সেই বাড়িটি সম্প্রতি খালি করার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। কারণ, বাড়িটি বেআইনি ভাবে নির্মিত বলে অভিযোগ। কিন্তু বাড়ি কী ভাবে ফাঁকা করা যাবে, তা নিয়েই ধন্দে পড়েছেন পুরকর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, আদালতের নির্দেশ অবশ্যই মান্য করা হবে। কিন্তু বাড়িটিতে প্রায় দুশো জনের বাস! এ দিকে, বাড়িটির অবস্থার কথা জানিয়ে কলকাতা পুরসভা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল। যাতে তারা প্রয়োজনীয় বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে পারে। এর পরেই কোর্ট পুলিশকে নির্দেশ দেয় বাড়িটি খালি করার। পুরসভা সূত্রের খবর, তাতেও সমস্যা কাটেনি। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রকাশ উপাধ্যায় বলছেন, ‘‘বেআইনি নির্মাণ আমি সমর্থন করি না। কিন্তু অনেক সময়েই মানবিকতার খাতিরে তা মেনে নিতে হয়!’’

কোথাও ‘মানবিকতা’! কোথাও আইনি জটিলতা! কোথাও আবার অন্য কোনও কারণে পিছিয়ে যায় বেআইনি নির্মাণ ভাঙার কাজ। পুরকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, নারকেলডাঙা নর্থ রোডের ঘটনাটি শহরের বেআইনি নির্মাণের মানচিত্রে বিন্দুতে সিন্ধুদর্শন মাত্র। কারণ, এ সমস্যা নতুন নয়। পুরসভার এক কর্তার কথায়, ‘‘বেআইনি নির্মাণের তো আবার অনেক ধরন রয়েছে। কোথাও শুধু একটি ছোট্ট অংশ বেআইনি ভাবে নির্মিত, কোথাও একটা তল, কোথাও সিঁড়ির একাংশ। এগুলো তবু ঠিক আছে। কিন্তু সমস্যা হয় যখন পুরো বাড়িটাই বেআইনি ভাবে তৈরি হয়। তখন বোঝা যায় না, কী করা হবে।’’

Advertisement

অথচ গোটা নির্মাণই বেআইনি, শহরে এমন ক’টা বাড়ি রয়েছে, তার তথ্যও নেই পুরসভার কাছে। কেউ অভিযোগ করলে তখন পুরসভা জানতে পারে যে সংশ্লিষ্ট নির্মাণটি বেআইনি। বরোভিত্তিক দল থাকলেও পুরকর্মীর অভাবে অনেক সময়েই বেআইনি নির্মাণের উপর নজরদারির কাজটা ঠিক ভাবে করা যায় না বলে পুরসভা সূত্রের খবর। কিন্তু বেআইনি নির্মাণের ‘রোগ’ এত পুরনো হওয়া সত্ত্বেও কেন সে সম্পর্কে সঠিক তথ্য নেই পুরসভার কাছে? এই প্রশ্ন উঠেছে পুর প্রশাসনের একাংশের মধ্যে। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘নির্দিষ্ট করে সংখ্যা বলা মুশকিল। ক’টা ভাঙার অর্ডার রয়েছে, সেটা বলা সম্ভব। তবে বেশির ভাগ বেআইনি নির্মাণই পুরসভা ভেঙে দেয়। কয়েকটি জায়গায় হয়তো অসুবিধায় পড়তে হয়।’’ দু’নম্বর বরোর চেয়ারম্যান সাধন সাহা বলেন, ‘‘বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে গেলে অনেক সময়েই যে ঝক্কির মুখোমুখি হতে হয় সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই।’’ ছয় নম্বর বরোর চেয়ারম্যান সঞ্চিতা মণ্ডল বলেন, ‘‘অনেক জায়গায় আমরা বোঝানোর চেষ্টা করি। কাজ না হলে আইনের দ্বারস্থ হতে হয়। কিন্তু আইনি জটে জড়িয়ে গেলেই নির্মাণ ভাঙতে অনেকটা সময় লেগে যায়।’’

পুরকর্তাদের মতে, বেআইনি নির্মাণ রুখতে ইতিমধ্যেই একাধিক পদক্ষেপ করা হয়েছে। ছোটখাটো ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার পাশাপাশি লুকিয়ে-চুরিয়ে যাতে বেআইনি নির্মাণ কেউ না করেন, তাই নাগরিকদের আবেদনে সাড়া দিয়ে কেসভিত্তিক পর্যালোচনা করা হচ্ছে মেয়র পরিষদের বৈঠকে। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘এত কিছু করেও বেআইনি নির্মাণ ঠেকানো যাচ্ছে না। তেমন নির্মাণ ভাঙতে গিয়ে ঝামেলার মুখে পড়তে হচ্ছে পুরকর্মী-পুলিশকেও! এ রোগ সারছে না।’’

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement