৪এ, ৪বি চৌরঙ্গি প্লেসের রক্সি বিল্ডিং পুরসভার সম্পত্তি। কিন্তু অভিযোগ, ওই বাড়ির একটি বড় অংশ প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত একাধিক ব্যক্তির মালিকানাধীন সংস্থার দখলে থাকায় কিছু করতে সাহস পায়নি পুর প্রশাসন। এ বার সেই সম্পত্তি নিজেদের দখলে আনতে উদ্যোগী পুর কর্তৃপক্ষ। এমনটা চান বর্তমান মেয়র ফিরহাদ হাকিমও। বুধবার সন্ধ্যায় ওই বিল্ডিংয়ের বর্তমান অবস্থান দেখা হয়। এ বার তা দখলে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে চায় পুর প্রশাসন।
কলকাতা পুরসভার নথি অনুসারে, ১০০ বছরেরও আগে বেঙ্গল প্রপার্টিজ নামে একটি সংস্থাকে লিজ দেওয়া হয়েছিল বাড়িটি। ৯৯ বছরের লিজ চুক্তি হয়েছিল, যা শেষ হয়েছে ২০০৭-’০৮ সালে। কিন্তু লিজ শেষ হওয়ার পরেও তা দখলে রেখে দিয়েছিল বেঙ্গল প্রপার্টিজ। তৃণমূল পুর বোর্ড ক্ষমতায় বসার পরে বিষয়টি গোচরে আসে। ওই সংস্থাকে জানিয়ে দেওয়া হয়, ফের ৯৯ বছরের জন্য লিজ নিতে হলে ৭১ কোটি ৩৪ লক্ষ ১১ হাজার টাকা দিতে হবে। সংস্থাটি তা দিতে নারাজ হওয়ায় পুরসভা সম্পত্তি নিজের দখলে ফেরাতে মামলা করে। ২০১৭ সালের অগস্ট মাসে হাইকোর্ট রায় দেয়, সংস্থাটি ফের লিজ চাইলে ওই পরিমাণ টাকাই দিতে হবে। তা না হলে সম্পত্তির দখল পাবে পুরসভাই। বলা হয়, চুক্তি শেষ হওয়ার পরেও যাঁরা সেখানে রয়েছেন, তাঁরা ‘আনঅথরাইজড অকুপায়ার’। তাঁদের সরিয়ে দেওয়ার কথাও বলা হয় রায়ে।
সেই কাজ করতে গিয়েই পুরসভা জানতে পারে, ভবনের চারটি তলে প্রায় ১০ হাজার বর্গফুট জায়গা ‘সাব লিজ’-এর ভিত্তিতে দখলে রেখেছে আর একটি সংস্থা। পুরসভার নথি অনুসারে, ওই সংস্থার মালিক দিলীপ সাহা নামে এক ব্যক্তি। সংস্থার নথিভুক্ত ঠিকানা, ১৩৯ ডি/৩ মহারানি ইন্দিরাদেবী রোড, পর্ণশ্রী, বেহালা। ঠিকানাটি প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের তৎকালীন বাসস্থান লাগোয়া। পুরসভা সূত্রের খবর, বিষয়টি আরও খোলসা হয় ২০১৭ সালের মেয়র পরিষদের এক বৈঠকের নথির ভিত্তিতে। সেখানে ওই ‘সাব লিজ’ নেওয়া সংস্থাকে রক্সি ভবনের এক ‘অকুপায়ার’ বলে চিহ্নিত করে তাদের সঙ্গেই নতুন করে লিজ চুক্তি করার কথা বলা হয়েছিল। আরও বলা হয়েছিল, পুরসভার মালিকানাধীন এই বাড়ির একটি বড় অংশ লিজ দিয়ে পুরসভা পাবে মাসে বর্গফুট পিছু ৪ টাকা। যা পুরসভা নিজেদের বাজারের দোকান থেকে নেয়। অর্থাৎ, ১০ হাজার বর্গফুটের জন্য পুরসভা পাবে মাসে ৪০ হাজার টাকা।
এখানেই শেষ নয়। ওই ভবনে কলকাতা এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্রুভমেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (কেইআইআইপি)-এর অফিস করার জন্য সিদ্ধান্ত প্রায় পাকা হয়ে গিয়েছিল। ঠিক হয়েছিল, গ্রহীতা সংস্থা বাড়িটি বর্গফুট প্রতি ১০৫ টাকা দরে কেইআইআইপি-কে ভাড়া দেবে। যা থেকে ওই সংস্থার আয় হবে মাসে প্রায় ১১ লক্ষ টাকা। সেই চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার সময়ে বেঁকে বসেন একদল পুর অফিসার। পুর কমিশনারকে তাঁরা জানান, ওই সংস্থা পুরসভার বাড়ি লিজে পাওয়ার অধিকারী নয় বলেই মত তাঁদের। পুরসভারই একটি দফতর আবার ১০৫ টাকা দরে বাড়িটি ভাড়া নেবে ওই সংস্থার কাছ থেকে। যার জন্য সরকারকে মাসে প্রায় ১১ লক্ষ টাকা গচ্চা দিতে হবে। বিষয়টি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হতেই রক্সি সংক্রান্ত ফাইল চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছিল কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল অব ইন্ডিয়া (ক্যাগ)। তার পর থেকে ওই ভবন সংক্রান্ত সব কাজ বন্ধ রয়েছে। এমনকি, পুর প্রশাসনও ওই সংস্থার কাছ থেকে সম্পত্তির দখল নিতে পারেনি।
এ বার মেয়র পদে বদল হতেই নড়েচড়ে বসেছে পুরসভা। সম্প্রতি গোটা বিষয়টি জানানো হয় মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে। পুরসভা সূত্রের খবর, প্রশাসনিক কর্তাদের মেয়র বলেছেন, সেই সম্পত্তি পুরসভার অধীনে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। সেই মতো নতুন করে রক্সির ফাইল খোলার কাজও শুরু হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আইনগত পদ্ধতি তো আছে। যা করা দরকার, করুক। এ নিয়ে আমার কোনও মাথা ব্যথা নেই।’’