কাজ করিয়ে নিতে হলে নির্দিষ্ট বৃত্তে টাকা ‘খাওয়াতে হয়’। ফাইল ছবি
টাকা না দিলে পরিষেবা পাওয়া যায় না। কাজ করিয়ে নিতে হলে নির্দিষ্ট বৃত্তে টাকা ‘খাওয়াতে হয়’। দরপত্রের মাধ্যমে কোনও কাজের বরাত সোজা পথে পাওয়া সম্ভব নয়। টেবিলের তলার লেনদেন ছাড়া কাজের বরাত পাওয়া অসম্ভব।— অতীতে আর্থিক দুর্নীতির এমন হাজারো অভিযোগ উঠেছে কলকাতা পুরসভার বিরুদ্ধে। সেই অভিযোগের সত্যতা কি এ বার পরোক্ষে স্বীকার করে নিলেন পুর কর্তৃপক্ষও? পুর প্রশাসনের একাংশে এই গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
এর মূলে রয়েছে পুরসভার সাম্প্রতিক এক নির্দেশ। যেখানে পুরসভার অর্থ দফতরের মুখ্য আধিকারিককে মাসে চার বার সমস্ত অ্যাকাউন্ট পরীক্ষা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুধু কেন্দ্রীয় পুর ভবন বা বরো অফিস নয়, খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে পুরসভার অধীনস্থ সমস্ত আর্থিক ইউনিটের অ্যাকাউন্টই।
সেই সঙ্গে দফতরভিত্তিক কোনও আর্থিক অসঙ্গতি থাকলে তা চিহ্নিত করা এবং তার ভিত্তিতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, তার বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের কথাও বলা হয়েছে। আর এই সমস্ত তথ্য-সহ রিপোর্ট এর পরে সরাসরি জমা দিতে হবে মেয়র ফিরহাদ হাকিমের কাছে।
যার পরিপ্রেক্ষিতে পুর আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, পুরসভার আর্থিক লেনদেনে অস্বচ্ছতা নিয়ে অতীতে অনেক বিতর্ক হয়েছে। ‘গোপনে টাকা দেওয়া’ ছাড়া পুরসভায় যে কোনও কাজ হয় না, এবং সেই টাকার ‘ভাগ’ যে একদম শীর্ষ স্তরে যায়, জনমানসে সেই ধারণা রয়েছে। আর সেই ধারণা, সেই সমস্ত অভিযোগকেই পরোক্ষে ‘মান্যতা’ দিলএই নির্দেশ!
যদিও মেয়র বিষয়টিকে এই ভাবে দেখতে নারাজ। তাঁর ব্যাখ্যা, আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত বিষয়ে অতীতে পুরসভার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। কিন্তু তাঁর সময়ে আর্থিক লেনদেনে অসঙ্গতি থাকার জন্য পুরসভার বিরুদ্ধে কোনও রকম প্রশ্ন যাতে না ওঠে, তা-ই এই পদক্ষেপ। এর একটাই উদ্দেশ্য— স্বচ্ছ ভাবে প্রতিষ্ঠান চালানো।
ফিরহাদের কথায়, ‘‘সে কারণেই সব অনলাইন করে দেওয়া হচ্ছে। যাতে আর্থিক দুর্নীতি বা অসঙ্গতির অভিযোগ কেউ করতে না পারেন। হয়তো এ ভাবে আর্থিক লেনদেনে অস্বচ্ছতা পুরোপুরি আটকানো যাবে না। তবে চেষ্টা করলে অনেকটাই আটকানো সম্ভব।’’
যদিও তাতে গুঞ্জন থামছে না। পুর প্রশাসন সূত্রের খবর, বিশেষ পুর কমিশনার, ডিরেক্টর জেনারেল, কন্ট্রোলিং অফিসার-সহ সব পুরকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নির্দিষ্ট সময় অন্তর দফতরের কাজকর্ম সরেজমিনে খতিয়ে দেখার জন্য। যার ভিত্তিতে একটি ‘ইনস্পেকশন রিপোর্টে’ বিশদে তথ্যের উল্লেখ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট রিপোর্টে ৩২টিবিষয়ের উল্লেখ রয়েছে।
সেগুলির মধ্যে অন্যতম হল, দফতরভিত্তিক কোনও আর্থিক অসঙ্গতি হয়ে থাকলে তা চিহ্নিতকরণ এবং তার বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ। কর্মী-আধিকারিকদের সম্পত্তির খতিয়ান জানানোর (ডিক্লারেশন) উপরেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কেউ না দিয়ে থাকলে তা চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে।
এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘হয়তো কোথাও কিছু অসঙ্গতি ধরা পড়েছে। সেটা যাতে বড় আকার নিতে না পারে, তাই এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। না-হলে পুর অর্থ দফতরকে আলাদা করে সমস্ত অ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখে খোদ মেয়রকে রিপোর্ট করার নির্দেশ দেওয়া হত না! তা-ও মাসে চার বার।’’
যদিও ফিরহাদের যুক্তি, ‘‘প্রতিষ্ঠান চালাতে গেলে সব সময়েই কোনও ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নির্দেশ দেওয়া হয় না। বরং অবাঞ্ছিত ঘটনা ঠেকাতেও আগাম নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রেও সেটাই ঘটেছে।’’