ফাইল চিত্র।
লন্ডনে বেশ কয়েক বছর কাটানোর পরে স্বাভাবিক ভাবেই কলকাতা পুরসভার পরিষেবা নিয়ে বিরাট কিছু প্রত্যাশা ছিল না। কিন্তু দেশে ফেরার পরে কিছুটা অবাকই হয়েছিলাম। রাস্তাঘাট, জমা জল, লোডশেডিং, ট্যাক্সির উপদ্রব, নাগরিক কর প্রদানের ঝঞ্ঝাট— সবেতেই যথেষ্ট উন্নতি উপলব্ধি করেছিলাম।
তবু বলব, এখনও কয়েকশো যোজন পথ হাঁটা বাকি আছে। নাগরিক হিসাবে প্রথমেই যেটা মনে পড়ে, অনলাইন পদ্ধতিতে পরিষেবা পাওয়া ও কর প্রদানের বিষয়টা অনেক সহজ হতে পারত। কলকাতা পুরসভার ওয়েবসাইটে ঢুকলে অনেক পরিষেবাই দেখা যায়। কিন্তু পদ্ধতি সেই প্রস্তর যুগের। যা আজকের দিনে অত্যন্ত বেমানান। বিদেশে দেখেছিলাম, কর জমা দেওয়ার বিষয়ে সরকারের কী অসাধারণ তৎপরতা! সেখানে এ শহরে অনলাইনে সরকারের ঘরে টাকা জমা দিতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়। মনে হয়, যেন দায়টা আমাদেরই। কে না জানে, আজকের দিনে দালাল ও ফড়েদের পাশ কাটিয়ে দুর্নীতি দমনে সাহায্য করে এই অনলাইন পরিষেবা। সে ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিকে সহজ করে নাগরিকের সুবিধাজনক করতে হবে। মনে রাখতে হবে, সরকারের ঘরে কর বেশি ঢুকলে আখেরে লাভ সরকারেরই।
একটা জিনিস দেখছি, রেলিং-দেওয়াল নিয়মিত রং করা হচ্ছে। সেটা ঠিক আছে, তবে পরিকাঠামোগত রক্ষণাবেক্ষণের অগ্রগতি অনেক বেশি কাম্য। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, শহরের শতাধিক বছরের পুরনো নিকাশি ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন বোধহয় কাম্য ছিল। তা না হওয়ায় বেহাল নিকাশি শহরের বড় যন্ত্রণা। যার জন্য ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বাৎসরিক বিভীষিকা হয়ে উঠেছে। অথচ এই সব রোগ সম্পূর্ণ প্রতিরোধযোগ্য। তবে কোভিড প্রসঙ্গে পুর কর্তৃপক্ষের দু’টি ভূমিকার প্রশংসা করতেই হয়। একটি হল, পুরসভা পরিচালিত প্রতিষেধক প্রদান কর্মসূচি এবং অন্যটি, ২০২০ সালের দুর্গাপুজোয় কোভিড-বিধি পালন।
আরও একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ এলইডি আলোর ব্যবহার। বিদ্যুৎ অপচয়কারী আলো সরিয়ে, সাশ্রয়কারী এলইডি আলো আরও কয়েক বছর আগেই লাগানো উচিত ছিল। এতে পুরসভার বিদ্যুৎ বাবদ খরচ অনেকটাই কমছে। সেই বেঁচে যাওয়া টাকা তো অন্যান্য জনহিতকর কাজেও ব্যবহার করা যাবে। বিদ্যুতের প্রসঙ্গ তুলতেই মনে এল, মৃত্যু-ফাঁদ হয়ে থাকা ল্যাম্পপোস্ট নিয়ে কিন্তু অনেক সচেতন হতে হবে। আর আকাশ ঢেকে যাওয়া তারের জঙ্গলকে অবিলম্বে মাটির নীচে পাঠানো প্রয়োজন। যাতে আয়লা বা আমপানের মতো বড় ঘূর্ণিঝড়ের পরে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে গাছে কোপ না পড়ে। সৌন্দর্যায়ন ও রাস্তা সম্প্রসারণের নামে গাছ-বলিও বন্ধ করতে হবে।
শহরের পরিবেশ রক্ষার বড় কবচ পূর্ব কলকাতা জলাভূমি। পূর্ব দিকের এই জলাভূমি নিয়ে প্রশাসনের এখনই গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কারণ, এই জলাভূমিই কলকাতার দূষণকে অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করে। একে এখনই প্রোমোটারের কালো হাত থেকে রক্ষা করা প্রয়োজন। আমাদের এ-ও মনে রাখতে হবে, শহরের জলাশয় ও সবুজ দিনে দিনে সঙ্কুচিত হচ্ছে। এই হারে চললে দ্রুত কলকাতা পৃথিবীর চার নম্বর থেকে এক নম্বর দূষিত শহরে নেমে যাবে।
সেই অবনমন যাতে না হয়, পুর প্রশাসকেরা গুরুত্ব দিয়ে ভাববেন নিশ্চয়ই। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা তাঁরা আশু গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবেন, এই আশাই রাখব।