অকেজো: নন্দরাম মার্কেটের আগুন নেভানোর সময়ে কাজ করেনি এই গভীর নলকূপটি। রবিবার। নিজস্ব িচত্র
হাতের সামনে গভীর নলকূপ। যার বয়স মাত্র এগারো। অথচ শনিবার নন্দরাম মার্কেটে লাগা আগুন নেভাতে ওই নলকূপ থেকে জলই বেরোল না! অভিযোগ উঠছে, রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ার কারণেই এমন অবস্থা। রক্ষণাবেক্ষণ হয় কি না, তা-ও জানা নেই পুরসভার!
ওই দিন নন্দরাম মার্কেটে আগুন লাগার পরে নলকূপ থেকে জল নিতে গিয়ে দমকলকর্মীরা দেখেন, সেখান থেকে জল বেরোচ্ছে না। কারণ, গভীর নলকূপটিই খারাপ। ফলে জল ফুরিয়ে যাওয়ায় দমকলকে তা আনতে অন্যত্র যেতে হয়। এ দিকে, ২০০৮ সালে নন্দরাম মার্কেটের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পরে শহর জুড়ে পুরসভা ও দমকল যৌথ ভাবে ১৩টি গভীর নলকূপ বসিয়েছিল। নন্দরাম মার্কেটের সামনে ব্রেবোর্ন রোডের উপরে তারই একটি নলকূপ রয়েছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, ওই নলকূপটি কাজ করলে দমকল আরও দ্রুত জল দিতে পারত। ফলে আগুন নিয়ন্ত্রণ করা যেত আগেই।
পুরসভা সূত্রের খবর, ২০০৮ সালের আগে পর্যন্ত শহরে ৮৩টি গভীর নলকূপ ছিল। নন্দরাম মার্কেটে আগুন লাগার পরে আরও ১৩টি বসানো হয়। এক পুর আধিকারিক বলেন, ‘‘যে সব এলাকা ঘিঞ্জি, যেখানে দমকল ঢুকতে পারে না তেমন জায়গা বেছে এই নলকূপগুলি বসানোর সিদ্ধান্ত হয়। কারণ, স্থানাভাবের কারণে ওই সব এলাকায় জলাধার করাও অনেক সময়ে সম্ভব ছিল না। নন্দরাম মার্কেট বড়বাজারের ঘিঞ্জি এলাকা বলে ওখানেও গভীর নলকূপই বসানো হয়েছিল।’’
কেন গভীর নলকূপ কাজ করল না?
এর সঠিক কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি। যদিও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, নলকূপটির কোনও রক্ষণাবেক্ষণই হয় না। অভিযোগের সত্যতা মিলছে প্রাক্তন এবং বর্তমান মেয়র পারিষদের উত্তরেই। যে সময়ে ওই নলকূপগুলি বসানো হয়েছিল, তখন গভীর ও অগভীর নলকূপ মেরামতি সংক্রান্ত পুর দফতরের মেয়র পারিষদ ছিলেন তারক সিংহ। রবিবার তারকবাবু বলেন, ‘‘গভীর নলকূপ বসানোর পরে ১৫ দিন অন্তর পুরসভা ও দমকলের যৌথ ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করার কথা ছিল। সেগুলি পরে রক্ষণাবেক্ষণ
হয়েছে বা হচ্ছে কি না, তার কোনও ধারণা নেই।’’ বর্তমানে ওই দফতরের মেয়র পারিষদ সামসুজ্জামান আনসারি। তিনি বলেন, ‘‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’’
নন্দরাম মার্কেট ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য দেবদাস মুহুরি বলেন, ‘‘আমাদের মার্কেটের জলাধার থেকে ছাদের ট্যাঙ্কে জল পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তা পর্যাপ্ত ছিল না। মার্কেটের সামনেই রয়েছে গভীর নলকূপ। অথচ কাজই করল না! সেই পুরনো পদ্ধতিতেই দমকলককে বারবার জল আনতে যেতে হল। এ সবের জন্য দেরি হয়ে গেল।’’
রবিবার দুপুরে নন্দরাম মার্কেটে গিয়ে দেখা গেল, বিশাল মার্কেটের সব দোকান বন্ধ। আগুন লাগার পরপরই সিইএসসি বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দিয়েছিল। তার মধ্যে থেকেই দোকানদারেরা একে একে তাঁদের পোড়া জিনিসপত্র বার করে নিচ্ছেন। অগ্নিনির্বাপণে ব্যবহার করা দমকলের জলে ভরে রয়েছে মার্কেটের বেশির ভাগ তলা। শনিবার ন’তলায় যেখানে আগুন লেগেছিল তা এখন পুরো নিয়ন্ত্রণে। নতুন করে আর কোথাও আগুন লাগেনি। এক দোকানদার রতন চৌধুরী বলেন, ‘‘সারাদিন ধরে জল পড়ে দোকানের সিলিং নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সিলিং ফুটো হয়ে দোকানে জল পড়ছে।’’ ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ থাকায় মার্কেটের সব দোকান বন্ধ। সিইএসসি-এর কাছে তাই সোমবার বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার আবেদন করবেন তাঁরা।
এ দিন দমকলের ডিজি জগমোহন বলেন, ‘‘শনিবার নন্দরাম মার্কেটে আগুন লাগার পরে কোথায় কোথায় জলের সমস্যা হয়েছিল এবং কেন হয়েছিল সে সব খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’