ফাইল চিত্র।
রাস্তার নতুন নামকরণ এবং বাস্তবে তা কার্যকর করা নিয়ে বিভিন্ন দফতরের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবের বিষয়টি স্বীকার করে নিল কলকাতা পুরসভা। সেই অভাব কী ভাবে কাটানো যায়, আপাতত তা নিয়েই চিন্তাভাবনা চলছে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। এ প্রসঙ্গে রবিবার পুর প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারপার্সন ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘পুরসভার রোড রিনেমিং কমিটি ও ইঞ্জিনিয়ারিং দফতরের মধ্যে একটা সমন্বয় তৈরি করতে হবে। সেখানে একটা ফাঁক থেকে গিয়েছে। ফলে এখন থেকে যখনই কোনও রাস্তার নতুন নামকরণ হবে, নির্দেশিকা জারি করে সেই সংক্রান্ত তথ্য পুর কমিশনার জানিয়ে দেবেন দফতরগুলিকে।’’
বালিগঞ্জের ম্যান্ডেভিল গার্ডেন্সের নাম ‘কথাসাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সরণি’ হওয়া নিয়ে যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে, রবিবারই সেই খবর প্রকাশিত হয়েছে। ২০১৯ সালে ম্যান্ডেভিল গার্ডেন্সের নতুন নাম প্রয়াত কথাসাহিত্যিকের নামে হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। এমনকি, এখনও সেখানে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের নামে কোনও ফলক বা সাইনেজ বসেনি। খবরটি প্রকাশ্যে আসার পরেই পুর কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এমনিতে পুরসভার রাস্তা নামকরণ কমিটি (রোড রিনেমিং কমিটি) রাস্তার নতুন নামের বিষয়টি বিবেচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়। অনেক সময়ে কোনও এলাকা থেকে আবেদনের ভিত্তিতে, আবার কখনও কোনও এলাকার সঙ্গে বিশিষ্ট ব্যক্তির সম্পর্কের ভিত্তিতে পুরসভা নিজেই নামকরণের সিদ্ধান্ত নেয়।
পুর প্রশাসন সূত্রের খবর, রাস্তা নামকরণ কমিটির বৈঠকের আয়োজনের দায়িত্বে থাকে পুর সচিবালয় দফতর। সচিবালয় সূত্রের খবর, রাস্তার নতুন নাম আনুষ্ঠানিক ভাবে গৃহীত হওয়া মাত্র অর্থাৎ, পুরসভার মাসিক অধিবেশনে পাশ হওয়ার পরে সেই সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন সংবাদপত্রে দেওয়া হয়। তার পরে সেই তথ্য পুরসভার সিভিল ও অ্যাসেসমেন্ট দফতরকে জানিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর হল কি না, সেটি নিয়ে ‘ফলো-আপ’-এর ক্ষেত্রে ঘাটতি থাকে। সেই ঘাটতি মেটাতেই পুর প্রশাসকের এই সিদ্ধান্ত।
পুর আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, আট বছর আগে ২০১৩ সালে পুরসভা ঘোষণা করে, এখন থেকে রাস্তা, সেতু, উড়ালপুল-সহ কোনও কিছুর নতুন নামকরণ হলে কেন সেই নাম হল, যে বিশিষ্ট ব্যক্তির নামে ওই নাম হল, তাঁর সঙ্গে কলকাতার যোগসূত্র কী— এমন সমস্ত তথ্য নামফলকে উল্লেখ করা থাকবে। এরকম ১৭টি নামফলক সেই সময়ে তৈরি করা হয়েছিল। যার উদ্বোধন করেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য্যোপাধ্যায়। কিন্তু তার পরে নামফলক তৈরি হয়েছে কি না, হলেও সেগুলি কোথায়, সেই প্রশ্ন তুলেছেন পুর আধিকারিকদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, সেই সময়ে বলা হয়েছিল, শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নামফলকগুলি বসানো থাকবে। তা হলে সেগুলি গেল কোথায়! শুরুর দিকে সিভিল দফতর এই নামফলকগুলি তৈরি করত। পরে তাতে ভাটা পড়ে। এখন নামফলক তো দূর, রাস্তার ফলক লাগাতেও বছর পেরিয়ে যায়। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘অনেক সময়ে যে ফলকও লাগানো হয় না, তা ম্যান্ডেভিল গার্ডেন্সের ঘটনাতেই বোঝা গেল!’’