অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ কসবার সিলভার পয়েন্ট হাই স্কুল। —নিজস্ব চিত্র।
কসবা এলাকার একটি বেসরকারি স্কুলের পাঁচ তলা থেকে ‘পড়ে’ মৃত্যু হয়েছিল দশম শ্রেণির ছাত্র শেখ শানের। গত ৪ সেপ্টেম্বরের সেই ঘটনায় স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছিল মৃত ছাত্রের পরিবার। ঘটনার মাত্র তিন দিনের মাথায় অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হল ওই বেসরকারি স্কুল সিলভার পয়েন্ট হাই স্কুলকে। একটি নোটিস দিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, পড়ুয়াদের নিরাপত্তাই তাঁদের কাছে অগ্রাধিকার পাবে। তবে একই সঙ্গে জানানো হয়েছে, পরবর্তী নোটিস না দেওয়া অবধি স্কুল বন্ধ থাকবে।
বৃহস্পতিবার সকালে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পৌঁছে দিতে গিয়ে অভিভাবকেরা দেখেন, মূল ফটকে একটি নোটিস ঝোলানো আছে। বুধবারের এই নোটিসে রয়েছে প্রিন্সিপালের স্বাক্ষর। ছাত্রমৃত্যুর ঘটনাটিকে ‘অনভিপ্রেত’ বলে অভিহিত করে ওই নোটিসে বলা হয়েছে, জল্পনার ভিত্তিতে স্কুলকে খারাপ ভাবে দেখানো হচ্ছে। একটি পরিবার হিসাবে সোমবারের ঘটনায় যে তাঁরা শোকগ্রস্ত, সে কথাও জানিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। তবে স্কুল বন্ধের এই সিদ্ধান্তে আতান্তরে পড়েছেন বাকি পড়ুয়াদের অভিভাবকেরা। শিক্ষাবর্ষের মাঝপথে তাঁরা ছেলেমেয়েদের অন্য স্কুলে ভর্তি করাতে পারবেন কি না, তা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে তাঁদের মধ্যে।
মৃত পড়ুয়ার বাবা শেখ পাপ্পু সোমবারেই স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মানসিক চাপ সৃষ্টি করার অভিযোগ তুলে বলেছিলেন, ‘‘আজ একটি প্রজেক্ট জমা দেওয়ার কথা ছিল। দিতে পারেনি বলে ওকে বকাবকি করা হয়েছিল। কান ধরে দাঁড় করিয়েও রাখা হয়েছিল সবার সামনে। নিশ্চয়ই ও অপমানিত বোধ করেছিল।’’ কী ভাবে ওই পড়ুয়া পাঁচ তলায় পৌঁছল, সেই প্রশ্ন তুলে স্কুলের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকেও কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছিল পরিবার। এমনকি, তাদের দাবি ছিল, স্কুল কর্তৃপক্ষের বয়ানেও অসঙ্গতি রয়েছে।
ছাত্রের বাবা এ-ও অভিযোগ করেন যে, তাঁর উপর আগে থেকেই অন্য কারণে ক্ষোভ ছিল স্কুল কর্তৃপক্ষের। তিনি বলেন, ‘‘করোনাকালে এই স্কুলের বেতন কমানো হচ্ছিল না বলে আমি অন্য অভিভাবকদের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একত্রিত করেছিলাম। অভিভাবকদের চাপে ৩৩ শতাংশ বেতন কমানো হয়েছিল। সেই সময়েই প্রধানশিক্ষিকা আমাকে বলেছিলেন, ‘আপনাকে চিহ্নিত করে রাখা হল’। তখনই বুঝেছিলাম, আমার ছেলের ক্ষতি করবে ওরা। আমার ধারণা, স্কুলেই ওকে মারধর করা হয়েছে। পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে।’’ মৃতের বাবা স্কুলের প্রধানশিক্ষক, সহকারী প্রধানশিক্ষক এবং আরও দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কসবা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারা ৩০২ এবং ধারা ১২০বি অনুযায়ী খুনের মামলা রুজু করা হয়।