—প্রতীকী চিত্র।
ছাত্রীরা রয়েছে এমন স্কুলে পুরুষ শিক্ষক রাখাটাই যে বড় সমস্যা হয়ে যাচ্ছে, তা ফের প্রমাণ হল কারমেল হাইস্কুলের ঘটনায়। অভিভাবকদের দাবি, সম্প্রতি স্কুলের তরফে ছাত্রীদের জানানো হয়েছে, অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যারাটের ক্লাস বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। আর কিছু না জানানো পর্যন্ত ক্লাস বন্ধই থাকবে। অভিভাবকেরা জানান, ছাত্রীদের ক্যারাটে শেখাতে গেলে শরীর স্পর্শ করতেই হয়। তাকে কেন্দ্র করে শিক্ষকেরা যাতে ফের বিড়ম্বনায় না পড়েন, সে কারণেই এই সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন অভিভাবকেরা।
বিতর্ক থেকে বাঁচতে ছাত্রীদের নিরাপত্তার সঙ্গে আপস করা হচ্ছে কি না, এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়ে। সম্প্রতি শহরে একের পর এক স্কুলে ছাত্রীদের যৌন নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছে। অধিকাংশ ঘটনাই বর্তমানে বিচারাধীন। জিডি বিড়লা সেন্টার ফর এডুকেশন, এমপি বিড়লা স্কুল, কমলা গার্লস হাই স্কুল এবং কারমেল প্রাইমারি স্কুলে ছাত্রীকে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ ওঠার পরেই রব ওঠে, ছাত্রীদের স্কুলে পুরুষ শিক্ষক রাখা যাবে না। বিক্ষুব্ধ অভিভাবকদের একাংশ সব পুরুষ শিক্ষককে বরখাস্তের দাবি তোলেন। কিন্তু সমাজের বিভিন্ন অংশ থেকে এর বিরোধিতা করা হয়। তবে শিক্ষকদের আতঙ্ক যে কাটেনি, কারমেল হাইস্কুলের ক্যারাটে ক্লাস বন্ধ হওয়ার বিষয়টি তা প্রমাণ করে দিল বলে মত শিক্ষামহলের। এ নিয়ে স্কুলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে কোনও সাড়া মেলেনি।
শহরের বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলিতে ছাত্রীদের নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য সচেষ্ট হয়েছে রাজ্য সরকার। স্কুল শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, সম্প্রতি মহিলা নিগ্রহের ঘটনা বাড়তে থাকায় সব মেয়েদের স্কুলে শারীরিক কসরতের প্রশিক্ষণ বা ক্যারাটে, জুডোর মতো ‘মার্শাল আর্ট’ শেখানোর কথা বলা হয়েছে। বিপদ থেকে বাঁচতে যাতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারে ছাত্রীরা, তার জন্যই এই প্রশিক্ষণ। কলকাতা পুলিশের কর্মসূচিতেও রয়েছে ছাত্রীদের আত্মরক্ষার বিষয়টি। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মার্শাল আর্ট শেখান পুরুষ শিক্ষকেরা। তাই যৌন নিগ্রহের অভিযোগ ওঠার সম্ভাবনা থেকেই যায় বলে মনে করছে শিক্ষামহল।
সেই বিড়ম্বনা এড়াতে পিছু হটাই শ্রেয় বলে মনে করছেন বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকেরা।
এক অভিভাবক বলেন, ‘‘কিছু মানুষের অযৌক্তিক দাবির জন্য সামাজিক বিপর্যয় তৈরি হচ্ছে। আমাদের মেয়েদের নিরাপত্তা এর ফলে বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থাকছে। এই প্রবণতা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। ইতিমধ্যে কারমেল প্রাইমারি স্কুলে গানের শিক্ষকও আসছেন না।’’ তবে দক্ষিণ কলকাতার এক স্কুল কর্তৃপক্ষ সাফ বলে দেন, ‘‘অযথা বিপদ ডেকে লাভ নেই। অভিভাবকেরাই যদি সন্তানদের দিকটা না ভাবেন, সেখানে আমরা কতটাই বা করতে পারি?’’
এ দিকে কারমেল প্রাইমারি স্কুলে অভিভাবকদের তাণ্ডবের ঘটনায় নতুন করে তদন্তে নেমেছে টালিগঞ্জ থানার পুলিশ। অন্য দিকে, অভিভাবকদের একাংশের দাবি, ৯ ফেব্রুয়ারি স্কুলের সামনে যে ভাবে অভিভাবকদের একটি দল তাণ্ডব চালিয়েছেন, তা পূর্ব পরিকল্পিত এবং স্কুলকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা। পুলিশ সূত্রে খবর, ওই দিন টালিগঞ্জ থানার ওসি-সহ কয়েক জন পুলিশ কর্মী আহত হয়েছিলেন। ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত বলে প্রমাণ হলে পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।