শুভ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায়
দু’মিনিটে ‘পরীক্ষা’ করার পরে সাদা কাগজে ‘কোভিড পজ়িটিভ’ লিখে দিয়েছিল কামারহাটির একটি নার্সিংহোম। যার জেরে আর কোনও হাসপাতালে ছেলেকে ভর্তি করাতে পারেননি ইছাপুরের দম্পতি। কার্যত বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছিল ১৮ বছরের শুভ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের। ওই ঘটনায় রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন শুভ্রজিতের মা-বাবা।
সেই মামলার অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশে কামারহাটির মিডল্যান্ড নার্সিংহোমকে পাঁচ লক্ষ টাকা জরিমানা করল স্বাস্থ্য কমিশন। নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে এক সপ্তাহের মধ্যে নিজেদের বক্তব্য হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে। মিডল্যান্ড নার্সিংহোমের কর্ণধার সুবীর দত্ত ফোন তোলেননি। জবাব দেননি মেসেজের।
স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মিডল্যান্ড নার্সিংহোম দু’মিনিটের মধ্যে একটি পরীক্ষা করে রোগী কোভিড পজ়িটিভ বলে জানিয়ে দেয়। নার্সিংহোম জানিয়েছে, তারা কোভিড পরীক্ষা করেছিল। কিন্তু রিপোর্ট পজ়িটিভ হোক বা নেগেটিভ, প্রাথমিক চিকিৎসাটুকু তারা কেন করল না, তা হলফনামা দিয়ে জানাতে বলা হয়েছে। পাঁচ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।”
মৃতের পরিবারের আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় জানান, গত ৯ জুলাই শ্বাসকষ্ট এবং শারীরিক অস্বস্তি শুরু হয় এ বছরের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী শুভ্রজিতের। পরের দিন ভোরে মা-বাবা তাঁকে কামারহাটি ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে পাঠানো হয় মিডল্যান্ড নার্সিংহোমে। কিন্তু অভিযোগ, নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ শুভ্রজিৎকে ভিতরে পর্যন্ত ঢোকাননি। বার বার অনুরোধেও কাজ না হওয়ায় ১০০ ডায়ালে ফোন করেন বাবা বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়। ফোন করেন স্থানীয় থানাতেও। এর পরে ওই নার্সিংহোম শুভ্রজিতের রক্তের নমুনা নেয়। অভিযোগ, নমুনা সংগ্রহের দু’মিনিটের মধ্যেই বিশ্বজিৎবাবুকে একটি হাতে লেখা কাগজ দিয়ে অন্যত্র যেতে বলা হয়। ওই কাগজে লেখা ছিল ‘কোভিড পজ়িটিভ’।
শুভ্রজিতের মা শ্রাবণীদেবী জানান, হাতে লেখা ওই রিপোর্টের জন্যই অন্য হাসপাতাল তাঁর ছেলেকে ভর্তি নেয়নি। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজও প্রথমে ভর্তি নিতে চায়নি। তখন তিনি আত্মহত্যার হুমকি দিতে শুভ্রজিৎকে ভর্তি নেওয়া হয়। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মারা যান তিনি। জয়ন্তবাবু বলেন, ‘‘ওই নার্সিংহোমের তরফে হাতে লেখা রিপোর্টের কথা অস্বীকার করা হয়েছিল। কিন্তু আমরা তা জমা দিই।”