Kalika Prasad Bhattacharya

‘… তার মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছি অনেক প্রত্যাশায়’

৭ মার্চ। ২০১৭-র পর থেকে তারিখটা বদলে দিয়েছে ঋতচেতা গোস্বামীর জীবন। ২০১৭-এর এই দিনেই গাড়ি দুর্ঘটনায় প্রয়াত হন শিল্পী কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য। ঋতচেতা কালিকার সহধর্মিণী। এক বছর পর আনন্দবাজারের পাঠকদের জন্য প্রথম কলম ধরলেন ঋতচেতা। কলম ধরলেন কালিকাপ্রসাদের জন্য। না! কোনও ব্যক্তিগত অনুভূতি নয়। ব্যক্তিগত আবেগ নয়। যা ব্যক্তিগত তা ব্যক্তিগতই থাক। ঋতচেতা বিশ্বাস করেন, তাঁর এই সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাবেন কালিকার অনুরাগীরা। বরং ঋতচেতা লিখেছেন কালিকার স্বপ্ন নিয়ে। শেয়ার করেছেন কালিকার স্বপ্ন দেখা সুরের বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা। সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন দোহারের এগিয়ে যাওয়ার মন্ত্র। ঋতচেতার কথায়, ‘‘ব্যক্তিগত কথা আমি বলব না। যাঁরা কালিকাকে ভালবাসতেন, যাঁরা আমাকে চেনেন, তাঁরা এই লেখাতেই কালিকাকে খুঁজে পাবেন।’’ ৭ মার্চ। ২০১৭-র পর থেকে তারিখটা বদলে দিয়েছে ঋতচেতা গোস্বামীর জীবন। ২০১৭-এর এই দিনেই গাড়ি দুর্ঘটনায় প্রয়াত হন শিল্পী কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য। ঋতচেতা কালিকার সহধর্মিণী। এক বছর পর আনন্দবাজারের পাঠকদের জন্য প্রথম কলম ধরলেন ঋতচেতা।

Advertisement

ঋতচেতা গোস্বামী

শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৮ ০০:০২
Share:

২০১৪, শিমলা। দম্পতি। ছবি: ঋতচেতার ফেসবুকের সৌজন্যে।

‘আমরা দোহার’। বাংলা গানের দল দোহার। এই বাংলার। ওই বাংলার। সেই বাংলার। সমস্ত বাংলার গানের দল দোহার।

Advertisement

সে, সেই সব স্রষ্টাদের সঙ্গে দোহার দেয় যাঁরা বাংলার আনাচে-কানাচে, জলে-মাটিতে মিশে রয়েছেন। সে, সেই সঙ্গীতের সন্ধান করে বেড়ায়। সে, সেই সব মণি-মুক্তো খুঁজে এনে সাজিয়ে তোলে। চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। মনে করিয়ে দেয়— এই আমি। এই আমার আত্মপরিচয়।

আজ এই অদ্ভুত আঁধারে, প্রতি দিন বিশ্বব্যাপী অসম লড়াইয়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে এ এক প্রতিস্পর্ধী উপস্থাপনা। কিন্তু সেই কাজ সে অনায়াসে করে। যেমন করে উজান স্রোতে বহর নিয়ে ছুটে যায় মাঝি-মাল্লারা। আকাশ, বাতাস কেঁপে ওঠে বদর পীরের নামে। বুনো হাতির গলায় রাশ পরিয়ে যেমন কাবু করে ফেলে ধুরন্ধর মাহুত।

Advertisement

আরও পড়ুন, ‘কালিকাদা, তোমার ওপর খুব রাগ হয়’

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নানা দিক থেকে উঠে আসে নানা প্রশ্ন। দোহারের ভবিষ্যত্ কী? নাবিকবিহীন নৌকো কোনও দিশা কি খুঁজে নেবে? নাকি হারিয়ে যাবে অকূল সাগরে? তবে কি এখানেই থেমে যাবে দোহার নামক এক বিপুল সম্ভাবনাময় সাংগীতিক আন্দোলন?

কৌতূহলী প্রশ্ন আমরা এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করি না। কিন্তু কথায় কথা বাড়ে। তাই কাজের কথায় আসি। দোহারের জন্মবৃত্তান্ত যাঁরা জানেন তাঁদের এ কথা অজানা নয়। যে মানুষটির জন্য দোহারের সৃষ্টি তাঁর নাম শ্রী অনন্ত ভট্টাচার্য। তিনি দোহার দেখেননি। সম্ভাবনার কথাও জানতেন না। কালিকাপ্রসাদ দোহার তৈরি করেছিল তার ছোটকাকুর স্বপ্নপূরণের আকাঙ্ক্ষায়। আজ কালিকাপ্রসাদের স্বপ্নপূরণ আমাদের অঙ্গীকার।


২০১৬। বাংলাদেশ যাওয়ার পথে মেয়েকে নিয়ে কালিকাপ্রসাদ এবং ঋতচেতা। ছবি: ঋতচেতার ফেসবুকের সৌজন্যে।

সে স্বপ্ন দেখেছে এক সুরের বিশ্ববিদ্যালয়ের। বাউল শাহ আব্দুল করিম তাকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন— ‘একদিন এই পৃথিবীটা বাউলের পৃথিবী হবে।’ বাউল সেই শক্তির আর এক নাম যে অনায়াসে তুচ্ছ করতে পারে প্রাতিষ্ঠানিক সমাজ-ধর্মের সকল অনুশাসন। বাউল সেই নগণ্য মানুষের আত্মবিশ্বাস, যে কিনা একটানে বদলে দিতে পারে ভক্ত-ভগবানের অবস্থান। সেই শক্তিতে ভর করে আজ শুধু এগিয়ে যাওয়া ছাড়া কোনও কাজ নেই আমাদের।

গুরু, সে তো প্রথম দিনেই কানে ভরে দিয়েছে মন্ত্ররূপ মন্ত্রণা। দোহার, তার আত্মপ্রকাশের কালে ঘোষণা করেছিল, ‘মোদের কিছু নাই রে নাই/ আমরা ঘরে বাইরে গাই।’ আজও তাই, ‘দেহতরি দিলাম ছাড়ি ও/ গুরু তোমারি নামে।’

গুরু মুর্শিদের বন্দনা করে, আল্লা-ভগবানের নামে প্রার্থনা করে যে যাত্রা শুরু হয়েছিল, আজ তার থেকে প্রায় আঠারো বছর পার করে প্রবল ঝড়-জলের রাত কাটিয়ে জেগে উঠেছি আমি, জেগে উঠেছি আমরা। পিতার আরব্ধ কাজ যেমন সম্পূর্ণ করার দায় বর্তায় সন্তানের উপর, তেমন করেই আজ দোহারের সময় এসেছে দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার। আজ প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের মতোই তার মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছি অনেক প্রত্যাশায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement