কালীঘাট মন্দিরের প্রবেশপথের সামনে বসেছে এই জীবাণুনাশক সুড়ঙ্গ। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
পরিকাঠামো মোটামুটি তৈরি। তিন মাস পরে এ বার দরজা খোলার পালা। তবুও ভিতরের কম জায়গায় কী ভাবে ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে ভক্তদের নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, তা নিয়েই এখন ভাবছেন কালীঘাট মন্দির কর্তৃপক্ষ।
ভক্তদের মতে, কালীঘাট মন্দির ঘিঞ্জি এলাকা। দক্ষিণেশ্বর বা বেলুড়ের মতো বড় এলাকা নয়। তাই সমস্যা সেখানে বেশি। রবিবার মন্দিরে পৌঁছে দেখা গেল, ছ’টি দরজার মুখে জীবাণুনাশক সুড়ঙ্গ বসেছে। মন্দির চত্বরে পানীয় জল ও বিদ্যুতের সংযোগও এসে গিয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানান, ১ জুলাই পরীক্ষামূলক ভাবে মন্দির খোলা হবে। প্রাথমিক ভাবে দু’টি দরজা দিয়েই ভক্তদের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করা হবে। আপাতত ঠিক হয়েছে, দু’নম্বর দরজা দিয়ে দর্শনার্থীদের মন্দিরে প্রবেশ করিয়ে চার নম্বর দরজা দিয়ে বার করা হবে। অন্য দরজাগুলিকেও প্রয়োজন মতো ব্যবহার করা হবে।
পীঠস্থান হলেও অন্য মন্দিরের তুলনায় কালীঘাট মন্দিরের ভিতরে জায়গা অনেকটাই কম। সাধারণত সেখানে দিনে পাঁচ হাজারেরও বেশি ভক্ত আসেন। কোনও বিশেষ দিন কিংবা তিথিতে দর্শনার্থীদের সংখ্যা কয়েক লক্ষ পর্যন্ত হয়। ফলে মন্দির খুলে যাওয়ার পরে এই বিপুল ভিড় থেকে যাতে সংক্রমণ না ছড়ায়, সে দিকে নজর রাখার ব্যবস্থা করছেন মন্দির কর্তৃপক্ষ। যাঁরা ওই মন্দিরে নিয়মিত যান, তাঁদের মতে কর্তৃপক্ষকে যথাসম্ভব সতর্ক থাকতে হবে, যাতে ভিতরে দূরত্ব-বিধি ঠিক মতো মানা যায়। প্রয়োজনে প্রবেশের সময়ে ভক্তদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আরও চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। মন্দির কমিটির ধারণা, প্রথম দিন থেকেই ভক্তদের ঢল নামবে। কালীঘাটে পান্ডাদের মাধ্যমেই পুজো দেন এবং প্রতিমা দর্শন করেন পুণ্যার্থীরা। লকডাউনে কর্মহীন হয়ে থাকার পরে পান্ডারাও চেষ্টা করবেন রোজগারের জন্য বেশি সংখ্যায় যজমানদের নিয়ে আসতে।
আরও পড়ুন: বাড়ি বাড়ি ঘুরে কোভিড-বর্জ্য সংগ্রহ হাওড়ায়
শনিবারই মন্দির কমিটি ও সেবায়েত কাউন্সিলের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ১ জুলাই মন্দির খোলা হবে। তবে ভক্তেরা গর্ভগৃহের বিগ্রহ ছুঁতে পারবেন না। সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা ও বিকেল ৪টে থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত মন্দির খোলা থাকবে। প্রতিমা দর্শন করতে একটি দরজা দিয়ে ১০ জন করে মন্দিরে প্রবেশ করবেন। তাঁরা অন্য দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পরে আরও ১০ জন মন্দিরে প্রবেশ করতে পারবেন।
পরিস্থিতি কোন দিকে গড়াবে, তা মন্দির খোলার পরেই বোঝা যাবে। তার পরেই পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে চাইছেন মন্দির কর্তৃপক্ষ। তাঁরা জানান, যাত্রীদের মন্দিরে প্রবেশ করার সময়েই থার্মাল পরীক্ষা করা হবে। তার পরেই জীবাণুনাশক সুড়ঙ্গের মধ্যে দিয়ে তাঁরা মন্দিরের দিকে এগিয়ে যাবেন।
এ সবের বাইরেও চার নম্বর গেটের বাইরে ঈশ্বর গাঙ্গুলি স্ট্রিটের ভাঙাচোরা রাস্তা, বিভিন্ন দরজার বাইরে পড়ে থাকা ইট-পাথর, আমপানের দাপটে শিকড় আলগা হয়ে বিপজ্জনক ভাবে হেলে থাকা গাছ থেকে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও চিন্তায় রাখছে মন্দির কমিটিকে।
মন্দির কমিটির কোষাধ্যক্ষ কল্যাণ হালদার বলেন, ‘‘ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে কী ভাবে দর্শন শুরু করা যায়, তা পরীক্ষামূলক ভাবে দেখা হবে।’’ সেবায়েত কাউন্সিলের চেয়ারম্যান দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ফুল, বেলপাতা, প্রসাদ— কিছু নিয়েই মন্দিরে ঢোকা যাবে না। এমনকি কপালে সিঁদুরের ফোঁটা দেওয়াও নিষেধ। মাস্ক ছাড়া কাউকেই মন্দিরে ঢুকতে দেওয়া হবে না।’’ শুরুর দিন থেকেই মন্দিরের সব দরজায় পুলিশ মোতায়েন থাকবে।
আরও পড়ুন: ইউটিউব দেখে খুনের অস্ত্র তৈরি করেছিল প্রেমিক