ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো

অযথা সময় নষ্ট করছে রাজ্য, ক্ষুব্ধ বিচারপতি

ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের কাজে বাধা দিয়ে রাজ্য সরকার অহেতুক সময় নষ্ট করছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে এমনটাই জানাল কলকাতা হাইকোর্ট। কখনও অংশীদারি, কখনও বিকল্প রুট, কখনও যানজটের কথা বলে রাজ্য সরকার অনবরত কাজে বাধা দিয়ে চলেছে এই অভিযোগ কলকাতা হাইকোর্টে এর আগে একাধিক বার করেছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের ঠিকাদার সংস্থা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৪ ০০:০০
Share:

ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের কাজে বাধা দিয়ে রাজ্য সরকার অহেতুক সময় নষ্ট করছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে এমনটাই জানাল কলকাতা হাইকোর্ট।

Advertisement

কখনও অংশীদারি, কখনও বিকল্প রুট, কখনও যানজটের কথা বলে রাজ্য সরকার অনবরত কাজে বাধা দিয়ে চলেছে এই অভিযোগ কলকাতা হাইকোর্টে এর আগে একাধিক বার করেছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের ঠিকাদার সংস্থা।

শুক্রবারও ওই মামলার শুনানির সময়ে বিকল্প রুট ছাড়াও এই প্রকল্পে অন্য অনেক সমস্যা রয়েছে বলে রাজ্যের অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় আদালতকে জানান। তা শুনে হাইকোর্টের বিচারপতি নাদিরা পাথেরিয়া মন্তব্য করেন, “আপনি সকলের সময় নষ্ট করছেন।”

Advertisement

বিচারপতি এ দিন জানান, তিনি চান যত দ্রুত সম্ভব হাওড়া থেকে মহাকরণ পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ শুরু হোক। কাজ শুরু করার ব্যাপারে ঠিকাদার সংস্থা ও কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষকে বৈঠকে বসার প্রস্তাব দেন বিচারপতি।

গত ২৪ নভেম্বর ঠিকাদার সংস্থার পক্ষ থেকে আদালতে জানানো হয়েছিল, হাওড়া থেকে মহাকরণ পর্যন্ত ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর রুট নিয়ে কোনও বিতর্ক নেই। হুগলি নদীর তলা দিয়ে ব্রেবোর্ন রোডের কাছে মহাকরণ পর্যন্ত কাজ শুরু করতে দেওয়া হোক। তাতে কাজ অনেকটা এগিয়ে থাকবে। ঠিকাদার সংস্থার অভিযোগ, রাজ্য নানা অছিলায় প্রকল্পের সেই কাজেও বাধা দিচ্ছে।

এ দিনও ঠিকাদার সংস্থার আইনজীবী জয়ন্ত মিত্র আদালতে ওই কাজ শীঘ্র শুরু করতে দেওয়ার আবেদন জানান। তিনি আরও বলেন, প্রকল্পের জন্য ব্রেবোর্ন রোডের উপরে অস্বাভাবিক চাপ পড়বে, হকার সমস্যা তীব্র হবে বলে রাজ্য সরকার যে সব যুক্তি খাড়া করছে, তা অমূলক ওই আইনজীবী আদালতে দু’টি বাড়ির ছবি দেখিয়ে জানান, ওই বাড়ি তৈরি হয়েছে হকারদের জন্য। বেশ কিছু হকার সেখানে ব্যবসাও করছেন। তাই হকার সমস্যার যুক্তি ক্ষেত্রে খাটে না। রাজ্যের অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল তখন জানান, রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই যে হলফনামা জমা দিয়েছে, তাতে বিকল্প রুট ছাড়া অন্য কয়েকটি সমস্যার কথাও বলা হয়েছে। তার প্রেক্ষিতেই বিচারপতি নাদিরা পাথেরিয়া সময় নষ্ট করার কথা বলেন।

বিচারপতি এ দিন রাজ্যের অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেলকে জানিয়ে দেন, রাজ্য সরকারের সমস্যার কথা তিনি সময়মতো শুনবেন। রাজ্য সরকারের বক্তব্য কী, তা আদালতে জানাতেই পারেন অশোকবাবু। কিন্তু বিচারপতি চাইছেন, যে অংশের কাজে কোনও রকম বিতর্ক নেই, সেই কাজ অবিলম্বে শুরু করে দেওয়া হোক। রাজ্য সরকার যেন সেই অংশের কাজে কোনও রকম বাধা না দেয়।

ঠিকাদার সংস্থার পক্ষ থেকে আদালতে আগেই জানানো হয়েছে, ওই অংশের কাজ শেষ হতে দু’বছর লাগবে। পরে যদি এমনও সিদ্ধান্ত হয় যে, মেট্রোর রুট বদল হবে, অর্থাৎ মহাকরণ স্টেশন বি বা দী বাগে মিনিবাস টার্মিনাসের কাছে হবে, তা হলে ব্রেবোর্ন রোডের মুখ থেকে সেই দিকেই এগোতে থাকবে কাজ। কিন্তু হাওড়ার দিকের কাজ শুরু না হলে, প্রকল্পের কোনও কাজই এগোবে না।

এর আগেও বিচারপতি পাথেরিয়া রাজ্য সরকারকে জানিয়েছেন, যে প্রকল্পে রাজ্য সরকারের কোনও অংশীদারিই নেই, তাই ওই প্রকল্প নিয়ে তাদের মাথা ঘামানোরও দরকার নেই। কিন্তু রাজ্যের অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল আদালতে সওয়াল করে বলেন, ‘‘ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোয় রাজ্যের অংশীদারি রয়েছে ২০.৯ শতাংশ।’’

কিন্তু রাজ্যই আবার তাদের দেওয়া হলফনামায় জানায়, আর্থিক অংশীদারি না থাকলেও ওই প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ইত্যাদি বিষয়ে তাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। রাজ্য সরকার মনে করে, সেই দায়বদ্ধতাই ‘অংশীদারি’। কার্যত ওই প্রকল্পের অংশীদার বর্তমানে কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রক এবং কেন্দ্রীয় রেল মন্ত্রক। রাজ্য সরকার তার অংশীদারি তুলে নিয়েছে বলে কলকাতা মেট্রো রেলওয়ে কর্পোরেশন আদালতে হলফনামা পেশ করে জানিয়েছে।

এ দিন ঠিকাদার সংস্থার শুনানিপর্ব শেষ হয়। আগামী সোমবার আদালতে সওয়াল করবেন কলকাতা মেট্রো রেলওয়ে কর্পোরেশনের আইনজীবী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement