ABVP

এবিভিপি-র‘যাদবপুর অভিযান’আটকাল পুলিশ, বিশ্ববিদ্যালয়ে এসএফআইয়ের জমায়েত

গোলপার্ক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত ওই মিছিলের কর্মসূচি ঘিরে ফের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা পুলিশের। পুলিশ সূত্রের খবর, ওই মিছিল যাতে কোনও ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে চত্বরে ঢুকতে না পারে তার জন্যও রীতিমত প্রস্তুতি নিয়েছেন সে দিনের বিক্ষোভকারী পড়ুয়ারা। পাল্টা এভিবিপি-ও মরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছতে, ক্যাম্পাসে তাদের সংগঠনের রাজনৈতিক অস্তিত্ব প্রমাণে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৪:৩৩
Share:

এ ভাবেই পুলিশের ব্যারিকেড টপকানোর চেষ্টা করে এবিভিপি। ছবি: পিটিআই।

শুরুতে আক্রমণাত্মক হলেও, পুলিশের সঙ্গে ধৈর্যের পরীক্ষায় পিছু হটে অবস্থান বিক্ষোভের মধ্যে দিয়েই ‘যাদবপুর অভিযান’ শেষ করল অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি)। যদিও, শুরুতে পুলিশের বড়কর্তাদের আশঙ্কা ছিল, ব্যারিকেড ভেঙে অশান্তি বাধাতে পারে এবিভিপি। তবে, পরিস্থিতি তেমন দিকে গড়ায়নি।

Advertisement

বৃহস্পতিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বাবুল সুপ্রিয়কে আটকে বিক্ষোভ দেখানো এবং তাঁকে নিগ্রহের প্রতিবাদে সোমবার যাদবপুর অভিযানের ডাক দিয়েছিল রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের ছাত্র শাখা এবিভিপি। ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বেলা ১২টা থেকেই গোলপার্ক মোড়ে জমায়েত শুরু করেন সংগঠনের কর্মী সমর্থকরা।এবিভিপি-র ওই কর্মসূচিকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরেও বাড়তে থাকে উত্তেজনার পারদ। কারণ এসএফআই-সহ, পড়ুয়াদের একটি বড় অংশ ওই মিছিলকে প্রতিহত করার ডাক দেয়। এ দিন দুপুর থেকে তারা জমায়েত শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ নম্বর গেটের কাছে। এর পর তারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে এসে সামনের রাস্তায় মিছিলও করে। তবে এবিভিপি-কে মাঝ রাস্তাতেই আটকে দেওয়ায় কোনও ধরনের সঙ্ঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।

আগে থেকেই পুলিশ তাই সিদ্ধান্ত নেয়, এবিভিপি-র মিছিলকে মাঝ রাস্তাতেই আটকানো হবে। কারণ, ওই মিছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে পৌঁছলে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কা ছিল বলে মত পুলিশের। সেই যুক্তি থেকেই, ঢাকুরিয়া উড়ালপুল শেষ হওয়ার পর যোধপুর পার্ক পেট্রল পাম্পের সামনে মিছিল আটকানোর প্রস্তুতি নেয় তারা। প্রবীণ ত্রিপাঠী এবং শুভঙ্কর সিন্‌হা সরকার—দুই যুগ্ম কমিশনারের নেতৃত্বে মোতায়েন করা হয় বিশাল পুলিশ বাহিনী। জলকামান থেকে শুরু করে, কাঁদানে গ্যাস, রোবো কপ— মিছিল আটকানোর সমস্ত রসদ মজুত ছিল এ দিন।

Advertisement

আরও পড়ুন: চিকেন রোলের আড়ালে কী? ভিড়ের মরসুমে ফের আতঙ্ক, সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরাও

আরও পড়ুন: জমি খালি করতে হুমকির অভিযোগ নেতার বিরুদ্ধে

বেলা ২টো নাগাদ এবিভিপি-র মিছিল গোলপার্ক থেকে রওনা হয়ে আড়াইটে নাগাদ পৌঁছয় যোধপুর পার্কে পুলিশের ব্যারিকেডের সামনে। অন্য মিছিল আটকানোর জন্য যেভাবে ইস্পাতের দেওয়ালের সামনে দুই বা তিন স্তরে পুলিশ কর্মীদের ব্যারিকেড রাখা হয়, এ দিন তা ছিল না।আক্রমণাত্মক বিদ্যার্থীদের ঢেউ প্রথমেই আছড়ে পড়ে ব্যারিকেডের উপর। অনেকে ব্যারিকেড টপকানোর চেষ্টা করেন।অনেকেই ধাক্কা দিয়ে উল্টে দেওয়ার চেষ্টা করেন। প্রথম ধাক্কাতে ব্যর্থ হওয়ার পর ফের মিছিলকারীরা ফের ঝাঁপিয়ে পড়ে ব্যারিকেডের উপর। পুলিশকে লক্ষ্য করে উড়ে আসতে থাকে ঝান্ডার লাঠি, ইট-পাথর। এবিভিপি-র তরফ থেকে ঢিল ছোড়ার কথা অস্বীকার করা হলেও, কয়েক জন মহিলা পুলিশকর্মীকে দেখা যায় ইটের ঘায়ে আঘাত পেতে।

অন্যদিকে, এবিভিপিও পাল্টা অভিযোগ করে পুলিশি লাঠিচার্জের। তাদের অভিযোগ, পুলিশের লাঠির আঘাতে গুরুতর আহত হয়েছেন তাঁদের তিনজন কর্মী। তবে পুলিশ লাঠি চালানোর কথা স্বীকার করেনি।

প্রাথমিক ওই আক্রমণের ঢেউ আছড়ে পড়ার পরেও, পুলিশকে এ দিন দেখা যায় রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে সবটা সামলাতে। জলকামান বা কাঁদানে গ্যাস ছোড়া দূরে থাক, কোনও পুলিশকর্মীকে লাঠি হাতে তেড়ে যেতেও দেখা যায়নি এ দিন। উল্টে পুলিশের পক্ষ থেকে ক্রমাগত মাইকে ঘোষণা করে অনুরোধ করা হয়, ব্যারিকেড না ভাঙার জন্য।

যদিও কয়েক দিন আগেই বিজেপির ভিক্টোরিয়া হাউস অভিযানের দিন দেখা গিয়েছিল উল্টো ছবি। সে দিন বিজেপির মিছিল চাঁদনি চকে পৌঁছনো মাত্রই পুলিশ জলকামান ব্যবহার করে বিজেপি কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে। এর পর কাঁদানে গ্যাস ফাটায় পুলিশ। জায়গায় জায়গায় লাঠিচার্জও করে।

এ দিন কিন্তু অন্য ছবি। যুগ্ম কমিশনার প্রবীণ ত্রিপাঠীকে দেখা যায় বার বার মিছিলের নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলতে। এবিভিপি নেতৃত্বকে প্রস্তাব দেওয়া হয় ১০ জনের একটি প্রতিনিধি দল তৈরি করতে। পুলিশ তাঁদের সঙ্গে নিয়ে উপাচার্যের কাছে যাবে বলে জানানো হয় পুলিশের তরফ থেকে। তবে পুলিশের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন মিছিলকারীরা।

এর পরেও পুলিশ আগাগোড়া ছিল সংযত। মিছিলকারীরা রাস্তা আটকে অবস্থান শুরু করলেও পুলিশ তাদের তোলার চেষ্টা করেনি। প্রায় ৪৫ মিনিট অবস্থান করার পর ধীরে ধীরে মিছিলকারীরা সরে যায়। রাস্তা খুলে দেওয়া হয়। যান চলাচল চালু করা হয় সাড়ে তিনটে নাগাদ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement