বিবিধের মহামিলন দেখল কলেজ স্কোয়ার

কলেজ স্ট্রিট থেকে মহাত্মা গাঁধী রোড হয়ে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে বিজেপি অফিসের সামনে দিয়ে মিছিলের গন্তব্য রাজভবন।

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২০ ০২:৪৭
Share:

পুরোধা: জাতীয় পতাকা আর প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ছবি দেওয়া লাল পতাকা নিয়ে মিছিল। সোমবার, ধর্মতলায়। ছবি: রণজিৎ নন্দী

কারা ডাক দিয়েছিল মিছিলের? প্রশ্নটাই হারিয়ে গেল বেমালুম। শহরে হাজির দক্ষিণ ভারতের হকার নেতা সেভিলম পারিথি, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণারত কাশ্মীরি ছাত্রী থেকে থেমে থেমে হাঁটা একবালপুরের বধূ রোজ়িনা বেগম— সবাইকে মিলিয়ে দিল সোমবার বিকেলের কলেজ স্কোয়ার চত্বর।

Advertisement

কলেজ স্ট্রিট থেকে মহাত্মা গাঁধী রোড হয়ে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে বিজেপি অফিসের সামনে দিয়ে মিছিলের গন্তব্য রাজভবন। রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে পুলিশ আটকে দেওয়ার পরেও পদাতিকদের প্রাণশক্তি ফিকে হয়নি। কলকাতায় ছাত্র-রাজনীতির ভরকেন্দ্র প্রেসিডেন্সি বা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ই শুধু নয়, শহর-মফস্‌সলের চেনা-অচেনা কলেজের পড়ুয়া, স্কুল-কলেজের শিক্ষক থেকে পরিচিত সমাজকর্মী সবাইকেই এ বার পথে টেনে এনেছে জেএনইউ। তবে জেএনইউ মানে নিছকই বিচ্ছিন্ন কোনও শিক্ষাঙ্গনের ঘটনার অভিঘাত নয়। মিছিলের পুরোভাগে প্রচার-গাড়িতে পাশাপাশি তেরঙা ও লাল নিশান। লাল পতাকার গায়ে আবার প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ছবি। রাজনৈতিক মতাদর্শ বা দলীয় রাজনীতির রং গুলিয়ে দিয়ে সামগ্রিক ভাবে দেশের জন্যই এ দিন পথে নামল কলকাতা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও সেন্টার ফর স্টাডিজ় ইন সোশ্যাল সায়েন্সেসের প্রাক্তনী মৌমিতা সেনের হাতের ব্যানারও তো সবাইকে কাছে টানার কথাই বলছে। মোদী-শাহের জমানা টুকরো করার স্পর্ধিত শপথ একযোগে জয় মা কালী, ইনশাল্লাহ, বাই গড, জয় ভীম বলে গর্জে উঠছে। তাঁর সঙ্গী অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শ্বেতাঙ্গ যুবক হিন্দু ধর্মের চার ধাম নিয়েই গবেষণা করেছিলেন। ‘পরিস্থিতি এত খারাপ শ্বেতাঙ্গেরাও রাস্তায়’ বলে এ দেশের শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তিনি পথে নেমেছেন।

কলেজ স্কোয়ার থেকে মহাত্মা গাঁধী রোড হয়ে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ হয়ে যেতে যেতে রাজ্য বিজেপি দফতরের সামনে মিছিল হাত মুষ্টিবদ্ধ করেছে। গলার শিরা ফোলানো স্লোগানের আর্জি: ‘এক ধাক্কা অউর দো দেশ বেচনেওয়ালো কো’! এ মিছিলের বড় একটা ব্যানারই তো ‘উই দ্য পিপল অব ইন্ডিয়া’ বলে ভারতীয় সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্র হয়ে ওঠার বহুচর্চিত শপথটিই মনে করিয়ে দিয়েছে। জেএনইউয়ের ছাত্র সংসদের নেত্রী ঐশী ঘোষের রক্তাক্ত মুখের ছবি ঠাঁই পেয়েছে এই ব্যানারের পাশেই।

Advertisement

জরুরি কাজে চেন্নাইয়ের বিমান ধরতে হওয়ায় মিছিলে থাকতে পারেননি জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী মেহেবুব সাহানা। তবে তাঁর স্ত্রী, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সনজিদা পরভিন কলকাতার প্রতিবাদের উত্তাপে গা সেঁকে নিয়েছেন। বৌবাজারের প্লাইউড বিপণির প্রবীণ কর্ত্রী,

ভবানীপুরের একটি স্কুলের নবম-দশম শ্রেণির দুই ভাইবোন জীবনে প্রথম বার কোনও মিছিলে পা মেলালেন। লেডি ব্রেবোর্নের রসায়নের ছাত্রী উপাসনা বন্দ্যোপাধ্যায় এর আগে শুধু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে

বিজেপি-র ছাত্র সংগঠনের হামলার পরে পথে নেমেছিলেন। সেন্ট জেভিয়ার্সের মাস কমিউনিকেশনসের পড়ুয়া তিষ্য চক্রবর্তী বলছিলেন, দিনভর বিভিন্ন কলেজে ছোট-বড় যত মিছিল বেরিয়েছিল, সবাই মিলে গিয়েছে বিকেলের এই ডাকে। উত্তরপাড়ার প্যারিমোহন কলেজ, পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া থেকে নাট্যকর্মী দামিনী বসু, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির তরুণ লেখক সৌমিত দেবের মতো চেনা-অচেনা কত জন এ ভিড়ে মিশে গিয়েছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement