জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়ারা আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় প্রতিবাদ।—ছবি রয়টার্স।
‘‘ওরা যদি স্কুলে ঢুকে আমাদেরও মারতে শুরু করে, তা হলে কী হবে?’’
রবিবার রাতে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়ারা আক্রান্ত হওয়ার পরে মাকে এই প্রশ্নই করেছিল লা মার্টিনিয়ারের সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া সম্পূর্ণা দাশগুপ্ত।
জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া এবং আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরে ফের ক্যাম্পাসে রক্ত ঝরল পড়ুয়াদের। নতুন নাগরিকত্ব আইন হোক বা ফি বৃদ্ধি— কোনও বিষয়ে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদেও হুমকি, মারধরের সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাঁদের। তাই শুধু সম্পূর্ণা নয়, দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছাত্রছাত্রীরা ক্রমাগত হিংসার নিশানা হওয়ায় চিন্তিত শহরের অন্য স্কুলপড়ুয়ারাও।
উত্তরপাড়া মডেল হাই স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র দেবদূত মুখোপাধ্যায় প্রশ্ন তুলছে পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে। তার প্রশ্ন, ‘‘পড়ুয়াদের জন্য যথেষ্ট নিরাপত্তা ছিল না কেন? স্কুলে এ ধরনের প্রতিবাদ হয় না। কিন্তু যে ভাবে একের পর এক ক্যাম্পাসে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটছে, তাতে কোনও স্কুলেও যে এমনটা হবে না, তার নিশ্চয়তা কী? তা ছাড়া, প্রতিবাদ করলেই আক্রান্ত হতে হবে, এই ভয়টা আমাদের মনে ঢুকে যাচ্ছে।’’
ওই স্কুলেরই একাদশ শ্রেণির ছাত্র কৌস্তুভ রায়ের মত, পড়াশোনার জায়গায় এই ধরনের হিংসার প্রভাব পড়ছে পড়ুয়াদের মনে। স্বাভাবিক আলোচনা করতে করতে নিজেদের মধ্যেই গোলমালে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। তবে কোনও স্কুলে এই ধরনের ঘটনা ঘটবে না বলেই আশা তার।
সংশয়ের সুর শোনা গেল অহনা রুদ্রের গলাতেও। সল্টলেকের এপিজে স্কুলের দশম শ্রেণির ওই ছাত্রী বলছে, ‘‘স্কুলে ঢুকে হয়তো কেউ হামলা করবে না। কিন্তু যে ভাবে রোজ কিছু না কিছু ঘটছে, তাতে জোর দিয়ে সে কথা বলি কী করে? স্কুল যে নিরাপদ একটা জায়গা, সেই বোধটা কিছুটা হলেও ধাক্কা খাচ্ছে।’’
মডার্ন হাই স্কুলের ডিরেক্টর দেবী কর বলেন, ‘‘জায়গাটা কলকাতা বলেই হয়তো কোনও স্কুলে এই ধরনের হামলার আশঙ্কা করছি না। তবে আমাদের স্কুল থেকে অনেকে দিল্লির কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যায়। ওদের জন্য এই ধরনের হামলার ঘটনা বা সেগুলির ছবি-ভিডিয়ো খুবই উদ্বেগজনক।’’
শিক্ষার উন্নয়নে নজর না দেওয়ার মানসিকতাকেই এমন আক্রমণের জন্য দায়ী করছে ব্যারাকপুরের ডগলাস মেমোরিয়াল হাই স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী সুরঞ্জনা সেনগুপ্ত। তার কথায়, ‘‘জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় সমাজের বিভিন্ন স্তরের পড়ুয়ারা রয়েছেন। এক ধাক্কায় ফি বৃদ্ধি হলে প্রতিবাদ স্বাভাবিক। এই প্রতিবাদ তো ভবিষ্যতের পড়ুয়াদের জন্যও। সেখানে এ ভাবে আক্রমণের ঘটনায় আমি হতাশ ও আতঙ্কিত।’’
মনোরোগ চিকিৎসক রিমা মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘শিক্ষাঙ্গনের নিরাপত্তা ব্যাহত হচ্ছে, এমন ঘটনার জেরে। বারবার এই রকম হতে থাকায় পড়ুয়ারা দুশ্চিন্তায় পড়ছে। সংবাদমাধ্যমে ঘটনার ফুটেজ দেখে এবং বড়দের আলোচনা শুনেও তাদের মনে গভীর প্রভাব পড়ছে।’’