মনোবল চুরমার করতেই কি হস্টেলে হামলা

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের লাঠি হাতে, মুখে কাপড়-বাঁধা দু’টি ছবি ইতিমধ্যেই নেট-রাজ্যে বহুল প্রচারিত।

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২০ ০২:৩৭
Share:

সহমর্মী: জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে হামলার প্রতিবাদে সেখানকারই প্রাক্তনীদের ডাকা জমায়েত। মঙ্গলবার, ধর্মতলায় গাঁধী মূর্তির পাদদেশে। নিজস্ব চিত্র

‘বেটি বাঁচাও’য়ের ডাক পাল্টে নতুন কর্মসূচির নাম কি তবে ‘বেটি পেটাও’? প্রশ্নটা মেলে ধরেছে প্রতিবাদী পোস্টার। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী-শিক্ষিকাদের নিগ্রহকারী, মুখ-ঢাকা ‘হামলাবাজদেরও’ সেই পোস্টারই চিনিয়ে দিল মঙ্গলবার সন্ধ্যায়।

Advertisement

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের লাঠি হাতে, মুখে কাপড়-বাঁধা দু’টি ছবি ইতিমধ্যেই নেট-রাজ্যে বহুল প্রচারিত। কম্পিউটারে তড়িঘড়ি ছাপিয়ে মেয়ো রোডে গাঁধী মূর্তির নীচে এমন কয়েকটি ছবির পোস্টার নিয়ে এসেছিলেন জেএনইউয়ের প্রাক্তনীরা। মেয়েদের হস্টেলে ঢুকে হামলার নেপথ্যে সরাসরি দেশের শাসক দলের দিকেই আঙুল তুলেছেন তাঁরা। জনস্বাস্থ্য বিভাগে গবেষণারত ছাত্র অমিতাভ সরকারের দাবি, ‘‘আলিগড়, জামিয়ায় পুলিশ দিয়ে হামলার পরে কৌশল পাল্টাতেই ছদ্মবেশী বিজেপি কর্মী বা সঙ্ঘীদের সাহায্যে হামলা চালানো হয়েছে জেএনইউয়ে।’’ রবিবার সন্ধ্যায় হামলা চলাকালীন এক ছাত্রীর ফোনে ঐশী ঘোষের নিগ্রহের খবর পেয়ে অমিতাভই ক্যাম্পাসে জনৈক অ্যাম্বুল্যান্স চালককে ফোন করেন।

এই হামলার পিছনে একটি বিশেষ সঙ্কেত দেখছেন দু’দশক আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ইউনিয়নের এসএফআই-আইসা জোটের নেত্রী আলবিনা শাকিল থেকে কয়েক বছর আগে গবেষণার পাট সম্পন্ন করা স্বাতী মৈত্র। সোনিপতের কলেজে ইংরেজির শিক্ষিকা আলবিনার মতে, ‘‘দেশের সব ক্যাম্পাসে মেয়েরা প্রতিবাদের মুখ বলেই তাঁদের টার্গেট করা হচ্ছে।’’ গুরুদাস কলেজের ইংরেজির শিক্ষিকা স্বাতীরও ব্যাখ্যা, ‘‘জেএনইউয়ের মেয়েদের হস্টেলে ছেলেরা ঢুকতে পারেন না। প্রত্যন্ত এলাকা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা মেয়েদের বা অভিভাবকদের মনোবল গুঁড়িয়ে দিতে ওই হস্টেলে ঢুকে হামলাই আদতে হাতিয়ার।’’ নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে জেএনইউয়ের ছাত্র আবুল কালাম মহম্মদ আনোয়ারুজ্জামানের গলায়ও প্রায় এক সুর। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোলের ওই শিক্ষকের কথায়, ‘‘আমি মালদহের প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে। জেএনইউয়ের ভর্তুকি ছাড়া নিজের পায়ে দাঁড়াতেই পারতাম না। প্রান্তিক ছেলেমেয়ে মানে তথাকথিত নিচু জাত, গ্রামের মুসলিমদের শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে বাদ দেওয়ারই একটা চক্রান্ত চলছে। মেয়েদের মারধরও তারই অঙ্গ।’’

Advertisement

দু’দশক আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী, অধুনা কানেটিকাট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোলের অধ্যাপিকা দেবার্চনা ঘোষ থেকে তাঁর তত্ত্বাবধানে গবেষণারত জেএনইউয়ের সদ্য প্রাক্তনী আহেলী সেনের কাছেও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপদতম স্থান সাবরমতী হস্টেল ও লাগোয়া ধাবা। দেবার্চনার কথায়, ‘‘জেএনইউয়ে লড়াই মানে বাক্‌যুদ্ধ। এমন হামলা ভাবতে পারছি না!’’ জেএনইউয়ের প্রাক্তনী, মেয়ে আত্রেয়ীর টানে প্রতিবাদ-সভায় এসেছিলেন আইনজীবী-রাজনীতিবিদ অরুণাভ ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘‘নকশাল আমলের কলকাতাতেও রাষ্ট্রশক্তিকে কাজে লাগিয়ে ক্যাম্পাসে এমন পরিকল্পিত সন্ত্রাস হয়নি।’’ আর এক প্রাক্তনী, অধুনা দিল্লির মিরান্ডা হাউসের ইংরেজির শিক্ষিকা দেবযানী রায়ের সঙ্গে মিছিলে শামিল পাঁচ বছরের ছেলে গোর্কি ও তাঁর বাবা বুদ্ধদেব রায়। দেবযানীর কথায়, ‘‘এ তো দেশেরও সঙ্কট। ইচ্ছে করেই ছেলেকে এনেছি।’’ হাওড়ার কলেজশিক্ষিকা নবনীতা মুখোপাধ্যায়ের মতো প্রাক্তনী ফেসবুকে প্রতিবাদে সরব।

কয়েক মাস আগে জেএনইউয়ে ফি বৃদ্ধির পটভূমিতে প্রতিবাদের তাগিদেই একটি হোয়াটসঅ্যাপ দল গড়ে প্রাক্তনীদের সংগঠিত করার চেষ্টা করেন ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ়ের শিক্ষক শুভনীল চৌধুরী, সুনন্দ রায়চৌধুরী, প্রসেনজিৎ বসুরা। এ দিন সন্ধ্যায় প্রতিবাদের রঙে সেই চেষ্টারই ফুল উঠেছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement