এই সেই জেটি। — নিজস্ব চিত্র
বছর তিনেক আগে যে জেটি তৈরি করা হয়েছিল দু’কোটি টাকা খরচ করে, সেই শিবপুর জেটি তিন বছরের মধ্যে ভেঙে পড়ল দু’বার। এবং প্রতি বারই জোয়ারের তোড়ে। এতেই কপালে ভাঁজ পড়েছে হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতির কর্তাদের। তাঁদের একাংশের অভিযোগ, যে সংস্থা গ্যাংওয়ে এবং জেটি বানিয়েছে, তাঁদের অদূরদর্শিতার জন্যই বারবার ঘটছে এমন ঘটনা। কারণ, যেখানে জেটি তৈরি করা হয়েছে সেখানে বড় বানের প্রভাব মারাত্মক বেশি। বোল্ডারে ধাক্কা খেয়ে জলের তীব্র স্রোত ফিরে এসে জেটিতে যে আঘাত করছে, তা সহ্য করার ক্ষমতা সেটির নেই। ফলে সংস্কার করা হলেও ওই জেটি যে আবারও ভাঙবে না, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই।
বুধবার দুপুরে বানের ধাক্কায় শিবপুর ফেরিঘাটের গ্যাংওয়ে এবং পন্টুনের শিকল ছিঁড়ে যায়। বেয়ারিং ভেঙে পুরো গ্যাংওয়েটি পড়ে পন্টুনের উপরে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী, হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমিতির প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য আমানুল হিলাল-সহ পদস্থ কর্তারা। বৃহস্পতিবার আমানুল জানান, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কোনও বিশেষজ্ঞ সংস্থাকে জেটি মেরামতের বরাত দেবে পরিবহণ দফতর। তবে কর্তাদের অনুমান, এক মাসের আগে ওই জেটি দিয়ে লঞ্চ পরিষেবা চালু হবে না। এ দিন আমানুল বলেন, ‘‘যেহেতু শিবপুর জেটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পরিবহণ দফতরের, তাই আমরা ঘটনার পরেই তাদের চিঠি দিয়েছি। ওই ঘাট দিয়ে রোজ প্রায় হাজার দুয়েক যাত্রী যাতায়াত করেন। যত দ্রুত সম্ভব পরিষেবা চালু করার চেষ্টা হচ্ছে।’’
এর আগে গত নভেম্বরে কালীপুজোর সময়ে বানের ধাক্কায় এই গ্যাংওয়েরই বেয়ারিং সরে গিয়েছিল। প্রায় দু’মাস ওই ভাবেই পড়েছিল সেটি। সেই অবস্থাতেই চলেছে যাত্রী পরিষেবা। ওই ঘটনা সংবাদপত্রে প্রকাশিত হওয়ার পরেই নড়ে বসেন জলপথের কর্তারা। দ্রুত বেয়ারিংটি ঠিক করা হয়। এ বার বানের তোড়ে ভাঙল সেই বেয়ারিংই।
কখনও শিকল ছিঁড়ে যাওয়া, কখনও বেয়ারিং ভাঙার ঘটনা প্রসঙ্গে হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতির কর্তাদের বক্তব্য, ‘‘একই জায়গায় গ্যাংওয়ে বসালে সেটি যে ফের ভাঙবে না, তার নিশ্চয়তা নেই। তাই কংক্রিটের গ্যাংওয়ে করা প্রয়োজন, যাতে বানের ধাক্কায় সেটি ক্ষতিগ্রস্ত না-হয়।’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজ্য পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘যে সংস্থা গ্যাংওয়ে মেরামত করবে, তাদের ইঞ্জিনিয়ারদের মতামতের উপরেই বিষয়টি নির্ভর করছে। তাঁরা যে পরামর্শ দেবেন, তা মেনে কাজ হবে।’’