পসরা: চাহিদা থাকায় বাজারে এসেছে ইলিশ। শনিবার, হাওড়ার মাছ বাজারে। নিজস্ব চিত্র।
‘‘ইলিশ, না কি চিংড়ি? যে কোনও একটা বলো! দুটোই কিনতে গেলে পকেটে কিছু থাকবে না। এখনও ফল, মিষ্টি কেনা বাকি!’’ ফোন রেখেই ইলিশ বাছতে শুরু করলেন সেই ক্রেতা।
কোভিডের জেরে প্রায় দু’বছর পরে এ বার জমে উঠেছে জামাইষষ্ঠী। ইলিশের দামের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে চিংড়ি, ভেটকি, পমফ্রেট। পিছিয়ে নেই আম, লিচুও। জামাইষষ্ঠীর আগের দিন, শনিবার মানিকতলা, হাতিবাগান, গড়িয়াহাট, কসবা, যাদবপুর, উল্টোডাঙা— শহরের প্রতিটি বাজারেই ছিল কার্যত এক চিত্র। জামাই-আদরের আয়োজন করতে গিয়ে হাত পুড়ল শ্বশুর-শাশুড়িদের। তবুও ভাটা পড়েনি উৎসবের আনন্দে। মানিকতলা বাজার থেকে থলি-বোঝাই করে বেরোনো অমিতাভ ভট্টাচার্য বা বাগমারি বাজারের ক্রেতা কাজল মিত্রের কথায়, ‘‘পকেটের ওজন কমলেও কী আর করা যাবে! জামাইষষ্ঠী পালন তো করতে হবে।’’
বাঙাল হোন বা ঘটি, জামাইদের পাতে ইলিশের বন্দোবস্ত করতে কপালে রুমাল ঘষছেন শ্বশুরেরা। তবুও বাকিদের পিছনে ফেলে গোলপোস্টে পৌঁছে গিয়েছে ইলিশই। যদিও তুলনায় ইলিশের জোগান কম বলেই জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে চাহিদার বেশিটাই জুগিয়েছে বর্মার ইলিশ। গড়িয়াহাট, মানিকতলা, হাতিবাগান-সহ প্রতিটি বাজারেই দু’কেজির ইলিশ বিকিয়েছে ২০০০ টাকা কেজি দরে! এক কেজি ওজনের ইলিশের দাম ঘোরাফেরা করেছে ১৩০০-১৪০০ টাকায়। অথচ, কিছু দিন আগেও এই ওজনের ইলিশের দাম হাজার টাকার আশপাশে ছিল বলে জানালেন গড়িয়াহাটের এক বিক্রেতা। তাঁর সোজাসাপ্টা উত্তর, ‘‘জামাইষষ্ঠীর দামের সঙ্গে অন্য দিনের দামের তুলনা করলে হবে না। এটাই তো আমাদের রোজগারের সময়।’’
এক পা পিছিয়ে ইলিশের ঘাড়ে শ্বাস ফেলেছে চিংড়ি। এ দিন বড় বাগদার দাম ছিল কেজি প্রতি ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা। ভেটকি ৬০০-৮০০ টাকা, পমফ্রেট ৮০০-৯০০ টাকা ও কাতলা ঘোরাফেরা করেছে ৪০০ টাকা কেজির আশপাশে।
জামাইয়ের ফলের থালা ভরাতে ভাল হিমসাগর আম হাজির হয়েছিল কেজি প্রতি ১২০ টাকা বা তার বেশি দামে। ল্যাংড়ায় খরচ আরও বেশি। ফল বিক্রেতাদের অবশ্য দাবি, আমের দাম বিশেষ কিছু বাড়েনি। গত কয়েক দিন ধরে এ রকমই আছে। তবে লিচু এক লাফে কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে একশো ছাড়িয়ে গিয়েছে।
মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাজ্য সরকার গঠিত টাস্ক ফোর্সের সদস্য তথা ‘ফোরাম অব ট্রেডার্স অর্গানাইজ়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ কোলের আশ্বাস, ‘‘জিনিসের দাম কিছুটা বেড়েছে। প্রতি বছরই উৎসবের সময়ে চাহিদা বাড়ে, তাতেই কিছুটা দাম বেড়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই ফের দাম কমে যাবে।’’
এর মধ্যে অবশ্য পাখার বাতাস দিচ্ছে আনাজ আর মুরগির দর। সপ্তাহখানেক তিনশো ছুঁয়ে থাকা মাংস গত কয়েক দিনে বেশ কিছুটা নেমেছে। বিভিন্ন বাজারে তা ঘোরাফেরা করেছে ২৫০ টাকার আশপাশে। আনাজের দাম প্রসঙ্গে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল চাষি ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর প্রেসিডেন্ট কমল দে বললেন, ‘‘দাম কী করে বাড়বে? এ বছর আনাজের ফলন এত বেশি যে, পাইকারি বাজারে কেনার লোকই নেই!’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।