সাফাই: মোছা হচ্ছে ইউনিয়ন রুমের দেওয়ালের লেখা। শুক্রবার, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। নিজস্ব চিত্র
ক্যাম্পাসে তখন বাংলা সান্ধ্য বিভাগের ক্লাস চলছে। হঠাৎ প্রবল শোরগোল। এর মধ্যেই আলো নিভে যায় ক্লাসঘরের। বাইরে বেরোনো তো দূর, অন্ধকার ঘরেই আটকে থাকতে হয় পড়ুয়াদের। তার মধ্যেও যাঁরা বেরোতে পেরেছিলেন, তাঁদের কারও পোশাক ছিঁড়েছে ধস্তাধস্তিতে। কারও আবার মাথা ফেটে রক্তারক্তি কাণ্ড।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই পরিস্থিতি শুনে অনেকেরই প্রশ্ন, কোনও শিক্ষাঙ্গনের এই হাল হবে কেন? পড়ুয়াদের কেউ কেউ আবার বললেন, “এমন ঘটনা তো লেগেই রয়েছে। ভয়ে অনেকেই আগামী কয়েক দিন ক্লাসে আসতে পারবেন না।” বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, শুক্রবার বাস্তবিকই পড়ুয়াদের উপস্থিতির হার ছিল চোখে পড়ার মতো কম। যে বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৭০-৮০ জন আসেন, সেখানে এ দিন উপস্থিত ছিলেন মাত্র ১৩ জন। ‘অ্যাডাল্ট কন্টিনিউয়িং এডুকেশন’ বিভাগে এ দিন দুপুরে উপস্থিত ছিলেন মাত্র ১৬ জন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের এক পড়ুয়া, ঘটনার সাক্ষী সানার প্রশ্ন, “এই পরিস্থিতির কি আদৌ দরকার ছিল? বিরোধী মত না শুনতে পারার রাজনীতির জায়গা যাদবপুর ক্যাম্পাস হতে পারে না। কোনও শিক্ষাই সে কথা বলে না।” তাঁরই সহপাঠী অনুজ সালোয়ার আবার বললেন, “এ ভাবে চললে ক্লাস করতে আসাই ছেড়ে দিতে হবে। বাবুলকে হেনস্থা করা যেমন খারাপ, ততটাই খারাপ ক্যাম্পাসে ভাঙচুর চালানো।” কয়েক জন হাতে গোনা ছাত্রের প্রতিক্রিয়া মিললেও যাদবপুরের বেশির ভাগ পড়ুয়ার মুখই এ দিন ছিল থমথমে। আন্দোলনকারীরা অবশ্য নিজেদের পথেই গান, কবিতায়, মিছিলে প্রতিবাদ জিইয়ে রেখেছেন।
বৃহস্পতিবার নবীনবরণ উপলক্ষে আলোচনাসভা যেখানে ছিল, সেই বন্ধ সভাগৃহের সামনে এ দিন পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পতাকা। যা দেখে এক সহপাঠীকে আর এক সহপাঠীর মন্তব্য, ‘‘ওগুলো তুই তুলে নিয়ে যা। ক্লাস তো হবে না। এ-ই করি!” সাংবাদিকতা ও গণজ্ঞাপন নিয়ে সদ্য যাদবপুরে পড়তে আসা স্নেহা পাল আবার বললেন, “বাড়ি থেকে ছাড়তেই চাইছিল না, জোর করে এসেছি। কাল যা ঘটেছে, সমর্থন করি না। তবে হামলার প্রতিবাদে মিছিলে থাকব।”
এসএফআইয়ের ছাত্রনেতা দেবরাজ দেবনাথও মেনে নিয়েছেন, ক্যাম্পাসের সুস্থ পরিবেশ বিঘ্নিত হয়েছে। তবে তাঁর মন্তব্য, “সমস্যা তো হয়ই। তবু নীতির লড়াই করতেই
হবে। পড়ুয়ারা চাইলে ক্লাস করতে পারেন। এখানে কাউকে পড়তে বাধা দেওয়া হয় না।”