Book Publishing

বই কী ভাবে হয়? খুঁটিনাটি শেখাতে প্রথম বার কোর্স যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের, তবে প্রশ্ন কাজের সুযোগের

লেখক লেখেন। পাঠক পড়েন। মাঝে থাকেন প্রকাশক। পাণ্ডুলিপি থেকে পুস্তক হয়ে ওঠার মাঝে রয়েছে অনেক ধাপ। তা নিয়েই নতুন কোর্স যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে।

Advertisement

পিনাকপাণি ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০২৪ ১২:৪৮
Share:

বাংলা বইয়ের প্রকাশনার প্রশিক্ষণ দেবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: সংগৃহীত।

বই কী ভাবে তৈরি হয়? লেখকের পাণ্ডুলিপি দুই মলাটে বন্দি হওয়ার মাঝে থাকে অনেক কিছু। ইংরেজি বইয়ের এ সব কাজের প্রশিক্ষণের জন্য অনেক আগে থেকেই কোর্স চালু থাকলেও এ বার বাংলা বইয়ের প্রকাশনার প্রশিক্ষণ দেবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। জুলাই মাসের গোড়ায় শুরু হতে চলা এই কোর্সে যোগ দিতে পারবেন যে কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকেরা। তিন মাসের কোর্সের কো-অর্ডিনেটর কৌশিক আনন্দ কীর্তনীয়া জানিয়েছেন, প্রশিক্ষণে যোগ দিতে বয়সের কোনও ঊর্ধ্বসীমা নেই। তিনি বলেন, ‘‘বাংলা বইয়ের প্রকাশনা মানে পাণ্ডুলিপি থেকে বিভিন্ন যে ধাপ পার হয়ে একটি বইয়ের জন্ম হয়, তার সবটাই আমরা পাঠ্যক্রমে রেখেছি। হাতেকলমেও অনেক কিছু শেখানোর পরিকল্পনা রয়েছে।’’

Advertisement

এই প্রশিক্ষণ কি বদলে দিতে পারবে বাংলা বই প্রকাশনার বর্তমান পরিস্থিতি? যাঁরা প্রশিক্ষণ নেবেন, তাঁদের কি কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে? কৌশিক বলেন, ‘‘বাংলা প্রকাশনার ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ছে। যাঁরা পাঠ্যবই প্রকাশ করেন, তাঁদেরও কুশলী ও প্রকাশনা সম্পর্কে ধারণা থাকা কর্মী প্রয়োজন। বিভিন্ন গণমাধ্যমেও পাঠ সম্পাদনা জানা কর্মী প্রয়োজন হয়। ফলে সকলে না হলেও অনেকেই কাজের সুযোগ পাবেন।’’

এমন প্রশিক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করলেও বাংলায় যে বইয়ের বাজার, তাতে যথাযথ কর্মসংস্থান হওয়া কঠিন বলেই মনে করেন প্রকাশনা সংস্থা সাহিত্য সংসদের কর্ণধার দেবজ্যোতি দত্ত। তিনি বলেন, ‘‘বাংলায় বেশির ভাগ প্রকাশনা সংস্থাই সঠিক মূল্য দিতে চায় না। ফলে যোগ্য, প্রশিক্ষিতেরা সম্মানজনক অর্থ পান না। এমন কোর্স চালু হওয়া এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু প্রকাশনা সংস্থাগুলি বেতন দিয়ে লোক রাখবে কি?’’ একই প্রশ্ন দীর্ঘ দিন দেশে-বিদেশে পুস্তক সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত প্রাবন্ধিক শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তিনি বলেন, ‘‘কাজের সুযোগ তৈরি রয়েছে বা হবে কি না, সেটা নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে। কিন্তু যত্ন করে বই প্রকাশ নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে, প্রশিক্ষণের সুযোগ তৈরি হচ্ছে, এটা গুরুত্বপূর্ণ। এই ভাবনাটাই এক দিন বাংলা বই প্রকাশনার বর্তমান সংস্কৃতিকে বদলে দেবে।’’

Advertisement

সার্টিফিকেট কোর্সটির উদ্যোক্তা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্কুল অফ কালচারাল টেক্সটস্ অ্যান্ড রেকর্ডস’ বিভাগ। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মোট ৮০ ঘণ্টার ক্লাস হবে। যোগদানকারীদের কোর্স ফি বাবদ ১৮ শতাংশ জিএসটি-সহ দিতে হবে ১১,৮০০ টাকা। এই কোর্সে বই ছাপার জন্য কাগজ চেনা, প্রুফ দেখা, বাঁধাই ইত্যাদি যেমন শেখানো হবে, তেমনই প্রকাশনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ লেখার স্বত্ব, অনুমতি, অনুবাদের নিয়ম থেকে আধুনিক প্রযুক্তিতে ছাপার জন্য বিভিন্ন সফ্‌টঅয়্যার সম্পর্কে ধারণাও থাকবে। তবে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে সম্পাদনাকে। যা নিয়ে প্রকাশক দেবজ্যোতির প্রশ্ন, ‘‘প্রশিক্ষিত কর্মী দরকার। আগে অন্য রাজ্যেও এমন কোর্স ছিল। সেখানে কর্মসংস্থান হয়েছে। কিন্তু ইদানীং বাংলা প্রকাশনায় সম্পাদনায় গুরুত্ব দেন ক’জন? বাইরের দেশে যিনি সম্পাদনার দায়িত্বে, তাঁর কোনও মত লেখক মানতে না চাইলে প্রকাশকেরা সম্পাদকেরই পক্ষ নেন। কিন্তু এখন ও সব মানা হয় কমই।’’

বাংলা প্রকাশনার হাল এখন তেমন ভাল না হলেও টেক্সট বইয়ের বাজার খারাপ নয়। সেখানে প্রশিক্ষিতদের কাজের সুযোগ থাকলেও কাজ মিলবে কি না তা নিয়ে সন্দিহান দেবজ্যোতি। একই সঙ্গে তিনি বলছেন, ‘‘প্রশিক্ষিতদের মান্যতা এবং গুরুত্ব দিতে চাইবে না কেউ। অথচ স্কুলপাঠ্য বইগুলোয় ন্যূনতম যত্ন নেই। বানান ভুল, ছাপার ভুল, অলঙ্করণ, ছবির ব্যবহার সবেতেই অযত্ন।’’

শমীকেরও বক্তব্য, ‘‘বাংলা বই প্রকাশনার মান অত্যন্ত খারাপ বাংলায়। বইয়ের বিন্যাস-সহ গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো নিয়ে দু’-একটি প্রকাশনা সংস্থা ছাড়া কারও ধারণা নেই। তবে এই কোর্স ঠিক ভাবে করা গেলে ভাল হবে।’’ কোর্স কো-অর্ডিনেটর কৌশিক জানাচ্ছেন, ইতিমধ্যেই অনেকে কোর্সে নাম নথিভুক্ত করেছেন। তাঁদের মধ্যে প্রকাশনা শিল্পে যুক্ত বা যুক্ত হতে চান এমন অনেকে আছেন। রয়েছেন সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত এবং প্রকাশনা নিয়ে কাজ করেন এমন অনেকে। যাঁরা ইদানীং প্রকাশনা ব্যবসায় এসেছেন, তাঁদের সঙ্গে সদ্য স্নাতকেরাও আছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement