নির্দেশ দিয়ে, কমিটি গড়ে শিক্ষামন্ত্রী রাশ টানার যত চেষ্টাই করুন, শঙ্কুদেব পণ্ডাকে রোখা যাচ্ছে না। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)-এর রাজ্য সভাপতি ফের আসরে। এ বার যাদবপুরে। এবং তাঁর অস্ত্র এ বার অনশন।
৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাঁদের দাবি মেনে ব্যবস্থা না-নিলে অনশনে বসবেন বলে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষকে কার্যত হুমকি দিয়েছেন শঙ্কুদেব। মঙ্গলবার এই মর্মে উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তীকে চিঠিও দিয়েছেন টিএমসিপি-র নেতারা।
এ বার কী দাবি শঙ্কুদেবের?
সোমবার যাদবপুরের অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটি (ইন্টারনাল কমপ্লেন্টস কমিটি বা আইসিসি)-র সদস্যদের ঘেরাও এবং হেনস্থার ঘটনায় অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে কঠোরতম শাস্তি দিতে হবে। ওই ঘটনায় অভিযুক্তেরা মূলত এসএফআই এবং আইসা-র সমর্থক। অভিযুক্তেরা অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, সদস্যদের মোটেই ঘেরাও করা হয়নি। তাঁরা শুধু নিজেদের বক্তব্য জানাতে গিয়েছিলেন।
আর উপাচার্যের দাবি, টিএমসিপি মোটেই তাঁকে হুমকি দেয়নি। যদিও টিএমসিপি-র দাবি মেনে সোমবারের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গড়ার ব্যাপারে ইতিমধ্যেই ভাবনাচিন্তা শুরু করেছেন তিনি। এই নিয়ে আলোচনার জন্য শিক্ষক, আধিকারিক, শিক্ষাকর্মী-সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে মঙ্গলবারেই বৈঠকে বসেন উপাচার্য। তিনি জানান, তদন্ত কমিটি গড়া হবে কি না, সেই ব্যাপারে আজ, বুধবার সিদ্ধান্ত হবে।
হস্টেলের বন্ধ ঘরে এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ খতিয়ে দেখার দায়িত্ব ওই অভ্যন্তরীণ কমিটিকে দিয়েছেন যাদবপুরের উপাচার্য। কমিটির সদস্যেরা সোমবার বৈঠকে বসেন। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, তদন্ত কী ভাবে করতে হবে, তা নিয়ে দাবি জানাতে গিয়ে ওই দিন কলা বিভাগের এক দল ছাত্রছাত্রী আইসিসি-র সদস্যদের প্রায় তিন ঘণ্টা ঘেরাও করে রাখেন। বৈঠক শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তারক্ষীদের সাহায্যে সদস্যেরা বেরোতে গেলে ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের দাবি জানানোর চেষ্টা করেন। তখন নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের এক প্রস্ত ধাক্কাধাক্কি হয়। ওই কমিটির সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সর্বাণী গঙ্গোপাধ্যায়কেও ছাত্রছাত্রীদের একটা দল ধাক্কা দেয় এবং আঘাত করে বলে তাঁর অভিযোগ। কমিটির সদস্যেরা পরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। গোলমাল মিটে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ অবশ্য ওই দিন ঘটনাটিকে বিশেষ আমল দেননি। মঙ্গলবার সকালেও এক কর্তা বলেন, “সে-দিনের ধাক্কাধাক্কিতে অভিযুক্তেরা আমাদেরই ছাত্রছাত্রী। তা ছাড়া কাউকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে হেনস্থা করা হয়েছে বলে অভিযোগ আসেনি। তাই কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও প্রশ্ন নেই।” কিন্তু বিকেলে শঙ্কুদেবদের চিঠি পাওয়ার পরেই সুর বদলে যায় কর্তৃপক্ষের।
উপাচার্য জানান, আইসিসি-র চেয়ারপার্সন সুমিতা সেন সোমবারের ঘটনা সম্পর্কে তাঁর কাছে লিখিত ভাবে অভিযোগ জানিয়েছেন। ওই দিন ঠিক কী ঘটেছিল, তা জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিসিটিভি ফুটেজও দেখা হবে। অভিজিৎবাবুর কথায়, “সোমবার যা ঘটেছে, তাতে শিক্ষক হিসেবে ধিক্কার না-জানিয়ে পারছি না। অনেক ছাত্র-বিক্ষোভ দেখেছি। কিন্তু এমন ঘটনা আমি কখনও দেখিনি।” যদিও সোমবার ওই ঘটনার সময় অভিজিৎবাবু বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেনই না। সর্বাণীদেবী নিজে ঘটনা সম্পর্কে কিছু বলতে চাননি। মঙ্গলবার তাঁর প্রতিক্রিয়া, “আমি কারও কাছে কোনও অভিযোগ জানাইনি।”
কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-হেনস্থা, ঘেরাও, ভাঙচুর, বিশৃঙ্খলার পাহাড়প্রমাণ অভিযোগ টিএমসিপি-র ঘাড়ে। এই ধরনের বেশির ভাগ ঘটনাতেই টিএমসিপি নেতৃত্ব কোনও ব্যবস্থা নেন না। এ বার এই সক্রিয়তা কেন? বিশ্ববিদ্যালয়ের উপরে চাপ তৈরির এই কৌশলের যুক্তিই বা কী?
শঙ্কুদেবের পাল্টা প্রশ্ন, “আমরা যখন যা করি, সেটা সংবাদমাধ্যমের নজরে আসে। আর যাদবপুরে এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেল, তখন কেউ দেখতে পেলেন না কেন?”