সান্দ্রো পুলেয়ো।
বছর পনেরো আগেও বিশ্বকাপ জিতে জমাটি পার্টি দিয়েছিল শহরের ইটালিয়ান কনসুলেট। ভারতীয় অতিথিরা যদিও তখনও ফ্রান্সের জিদানের শোকে কাতর।
পনেরো বছর বাদে সান্দ্রো পুলেয়ো কিন্তু আশাবাদী, ‘‘ইংল্যান্ড নয়, আমাদেরই পাল্লা ভারী। ওয়েম্বলিতে ইউরো ফাইনাল তো আছেই, উইম্বলডনে প্রথম বার আমাদের ঘরের ছেলে বেরেত্তিনিই ঠিক মাত করবে।’’
স্মরণকালে এমন রবিবার দেখেনি কলকাতা। ভোরে কোপা, গভীর রাতে ইউরোর ফয়সালা, মাঝে উইম্বলডনে পুরুষদের ফাইনাল। ফুটবলের মহাভোজ ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা টক্করের আঁচ পোহাতে রবিবাসরীয় ঘুমও তুচ্ছ! শহরে ইটালিয়ান নাগরিক হাতে-গোনা। তুলনায় বিলেতের সঙ্গে বাঙালির সম্পর্কটা গাঢ়। ব্রিটিশ নাগরিক, ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ বা বিয়ে, আত্মীয়তায় বিলেতের সঙ্গে আবদ্ধ বাঙালি নেহাতই কম নেই! তবু সুইস পার্কের বাসিন্দা, দক্ষিণ ইটালির বন্দর টারান্টোর ভূমিপুত্র সান্দ্রো আত্মবিশ্বাসী, ‘‘ইংল্যান্ড-ইটালি ফুটবলে বাঙালি মনে হয় আমাদেরই পাশে আছে।’’
উৎসব: ইউরো ফাইনালের আগে উত্তর কলকাতায় উড়ল ফানুস। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
এ শহরের চেনা মুখ আর এক ইটালিয়ান মেম আনামারিয়া ফরজিওনকেও এমন দিনে মনে পড়ছে বহু কলকাতাবাসীর। শহরের জনপ্রিয় পিৎজ়াক্ষেত্র, ‘ফায়ার অ্যান্ড আইস’-এর মালকিন এখন কাঠমান্ডুতে। আনার বর জন আবার ব্রিটিশ। “আমি গনগনে জ্বলন্ত ইটালীয় নারী, ফায়ার আর জন ম্যাদামারা ঠান্ডা ইংরেজ পুরুষ, আইস”, বলে বরকে ঠেস দিয়ে আনার রসিকতায় সুহৃদজন কত বার হেসে গড়িয়ে পড়েছে।
অতিমারিতে একযোগে খেলা দেখা, হইহুল্লোড় শহরে কার্যত নেই। তবু উৎসব নিচু তারে বাঁধা থাকলেও রবিবারটা যে ইটালিরই হতে চলেছে, সন্দেহ নেই সান্দ্রোর। পেশায় ইংরেজি ও ইটালিয়ানের শিক্ষক। ঘুরেফিরে তিন দশক বৃন্দাবন, পুরী বা কলকাতায় রয়েছেন ৫৮ বছরের দিলখোলা ইটালিয়ান। ভারতে থাকার পিছনে আধ্যাত্মিক ঝোঁক থাকলেও রসকষহীন ভক্ত নন তিনি। রাজনীতি, সমাজ, গানবাজনা নানা বিষয়েই ঝোঁক অটুট সান্দ্রোর। বাংলা সিনেমা, সিরিয়ালেও পার্ট করেছেন। হেসে বলছেন, “পুরীতে আমায় লোকে আকছার ব্রিটিশ ভাবত! হিন্দি শিখে গেলেও আমায় কিন্তু ব্রিটিশ চরিত্রেই ভাবা হয়! ভারতীয়দের কাছে একটু ফর্সা লোক মানেই তো ব্রিটিশ।” সেই ইংল্যান্ডই এ বার তাঁর প্রতিপক্ষ ভেবে মজা পাচ্ছেন সান্দ্রো। “আমি আসলে পুরনো দিনের ইটালির ভক্ত। ইন্টারমিলান সমর্থক ছিলাম। ইউরোর টিমটার ম্যানেজার, আমাদের সময়ের প্লেয়ার মানচিনির জন্যই দলটিকে ভালবাসছি।” বেলজিয়াম ম্যাচ থেকেই সান্দ্রো নিশ্চিত, ইটালির ছন্দ কেউই ভাঙতে পারবে না! ইংল্যান্ড সমর্থক বহু বাঙালিনীও দোলাচলে, ইটালিয়ান ছেলেগুলো যা সুন্দর! তবে সান্দ্রোর কাছে, ফুটবলের থেকেও বড় ব্যাপার হবে, পাঁচ বারের উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন নোভাককে বেরেত্তিনি হারালে!
কাল, সোমবার রথযাত্রার আগে পুরীর রথ টানার কথাও সান্দ্রোর মনে পড়ছে। “অতিমারি অদ্ভুত! কলকাতায় বসেও এ বার ইংল্যান্ডে উইম্বলডন, ইউরো বা পুরীর রথ, সমান দূরত্বে!” তবে মাঝরাতে ফুটবল নিয়ে বাঙালির রসিকতা, হোম বা রোম যেখানেই কাপটা যাক, পরের দিন সোম ভেবে খেলাটা জলদি শেষ হলে বাঁচি!