ফাইল চিত্র।
বাড়িতে থেকে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি আমি এবং আমার স্বামী। এখন খবরে দেখলেও তাই পেট্রলের দামের ধাক্কাটা সে ভাবে বুঝতে পারছি না। কিন্তু পরে অফিস পুরোদমে চালু হলে মাসে তিন থেকে চার হাজার টাকার শুধু পেট্রলই কিনতে হবে। তার বাইরেও যাতায়াতের খাতে কিছু খরচ হবে। সেই কথা ভেবে আতঙ্কই হচ্ছে। কারণ, জীবনধারণের খরচ যে ভাবে বেড়েছে, তাতে গাড়ির জন্য এতটা বরাদ্দ করতে পারব বলে মনে হয় না। সে ক্ষেত্রে গাড়ির ব্যবহার ন্যূনতম করতে হবে।
যাঁরা মাঝারি ধরনের চাকরি বা ব্যবসা করেন, গত এক বছরে তাঁদের অধিকাংশেরই আয় বাড়েনি। অনেকের আয় কমেও গিয়েছে। চাকরি চলে গিয়েছে বহু জনের। অথচ, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়েছে হু হু করে। মাসে বেশ কয়েক হাজার টাকা বেশি লাগছে শুধু আবশ্যিক জিনিস কিনতেই। সাধপূরণের চিন্তা আর মাথায় আসছে না। অতিমারি পরিস্থিতিতে সচ্ছলতার সংজ্ঞাটাও হয়তো বদলে গিয়েছে।
আনাজ ও মুদির জিনিসের দাম একটানা বেড়ে চলেছে। তিন জনের সংসারে সাপ্তাহিক আনাজের জন্য আগের থেকে ২০০ টাকার মতো বেশি লাগছে। আনাজ বলতে কুমড়ো, আলু, বেগুন, পটলের কথাই বলছি। এর মধ্যে কোনও বিদেশি, দামি আনাজ নেই। কারণ, সামান্য চচ্চড়ির বেগুনও বিকোচ্ছে ৮০ টাকায়! সম্প্রতি দুধের দামও এক ধাক্কায় বেড়ে গিয়েছে। অথচ মেয়ের জন্য যে পরিমাণ দুধ লাগে, তা কমানো সম্ভব নয়। তাই প্রথমেই হাত পড়েছে মাছের বরাদ্দে। সপ্তাহে এক-দু’দিন মাছটা বাদ দিলে খরচে কিছুটা হলেও রাশ টানা যায়। মুদির জিনিসের মাসিক খরচ আগের থেকে প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়েছে। সেখানেও কিন্তু সাধারণ চাল, ডাল, তেল, বিস্কুট, মশলাপাতির কথা বলছি। সম্প্রতি রান্নার গ্যাস নিয়েছি ৮৩৫ টাকায়। ওষুধের মাসিক খরচ বেড়েছে ৭০০ টাকা।
এখন বাড়তি খরচের তালিকায় প্রথমেই আসবে মাস্ক ও স্যানিটাইজ়ারের খরচ। এর সঙ্গে রয়েছে বাড়িতে ভাল ইন্টারনেটের সংযোগ, মেয়ের পড়াশোনার জন্য মোবাইল কেনার খরচ। স্কুলে ক্লাসের সংখ্যা কমে গিয়েছে। মেয়েকে আরও কিছুটা সময় ব্যস্ত রাখার জন্য অন্য অনলাইন ক্লাসে ভর্তি করাতে হয়েছে। ফের দু’জনকেই অফিসে যেতে হলে মেয়েকে ক্রেশে রাখার জন্যও খরচ বাড়বে।
যাবতীয় সরকারি কর দিয়ে থাকি। অথচ, করোনার প্রতিষেধকটাও নিজের খরচে নিতে হয়েছে। যে বহুতলে থাকি, সেখানকার রক্ষী ও অন্য সহযোগীরা প্রথম সারির করোনা যোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও প্রতিষেধকের খরচ দিতে হয়েছে বাসিন্দাদেরই। করোনায় আক্রান্ত হয়ে অক্সিজেনের প্রয়োজন হলে সেটাও পাব কি না, জানি না। আর বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার খরচের কথা ভাবলে রীতিমতো আতঙ্ক হয়।
আবশ্যিক প্রতিটি খাতে বেড়েছে খরচ। অথচ, আয় বাড়েনি এতটুকু। সরকারি যাবতীয় প্রকল্পেও সুদের হার ধারাবাহিক ভাবে কমে চলেছে। কোন পথে মানুষের আয় বাড়বে, তার কোনও দিশা নেই। যে ভাবে সব জিনিসের দাম বেড়ে যাচ্ছে, আর কি কখনও কমবে? সব খরচের বোঝা সামলে মেয়ের পড়াশোনার খরচ ও ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় কী ভাবে করব? আপাতত কোনও ভাবেই আশাবাদী হতে পারছি না।