traffic safety

Road Safety Week: হুঁশ ফেরাতে দিবস পালনই সার, নিয়মভঙ্গ চলছেই

বুধবারই ছিল কলকাতা পুলিশের পথ-নিরাপত্তা সপ্তাহের প্রথম দিন। অথচ দিনভর বিধিভঙ্গের বিরাম নেই শহরে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:৫১
Share:

অনিয়ম: রয়েছে জেব্রা ক্রসিং। কিন্তু বেশির ভাগ পথচারীই রাস্তা পারাপার করছেন অন্য জায়গা দিয়ে। বুধবার, ধর্মতলায়। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

একে পুলিশ দিবস। সেই সঙ্গে বুধবারই ছিল কলকাতা পুলিশের পথ-নিরাপত্তা সপ্তাহের প্রথম দিন। অথচ দিনভর বিধিভঙ্গের বিরাম নেই শহরে। প্রতি ডিভিশনে পুলিশি প্রচারের মধ্যেই চলল মোটরবাইকের দৌরাত্ম্য, ট্র্যাফিক-বিধি উড়িয়ে রাস্তা পারাপার, সিগন্যাল ভেঙে বাসের রেষারেষি। যা প্রশ্ন তুলল, আর কবে সচেতন হবে শহর?

Advertisement

সিগন্যাল মানলেই দেরি

Advertisement

‘‘যে ভাবেই হোক এগিয়ে থাকতে হবে। সিগন্যালে আটকালেই দেরি।’’— বলছিলেন রাজাবাজার মোড়ে লাল সিগন্যাল পেরিয়ে পুলিশের খপ্পরে পড়া এক গাড়িচালক। এ দিন আর একটু হলেই অটোর সঙ্গে ধাক্কা লাগত গাড়িটির। যাত্রী-সহ অটোটি হঠাৎ ব্রেক কষায় পিছন থেকে সেটিতে ধাক্কা মেরে মুখ থুবড়ে পড়লেন এক মোটরবাইক চালক ও আরোহী। লালবাজার সূত্রের খবর, চলতি বছরে সব চেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে সিগন্যাল ভাঙার কারণেই। মামলার সংখ্যাও সব চেয়ে বেশি। তবু যত রাত বাড়ে, ততই বাড়ে সিগন্যাল ভঙ্গের দৌরাত্ম্য।

আগে গেলেই যাত্রী বেশি

‘‘স্ট্যান্ডে গাড়ি আগে ঢুকলে আলাদা কমিশন। যে আগে পৌঁছবে তার বাসে যাত্রীও বেশি উঠবে!’’— বলছিলেন ধর্মতলা থেকে শিয়ালদহগামী বাসের এক চালক। এ দিন একই রুটের একটি বাসকে ঘষে দিয়ে এগোতে গিয়ে কোনও রকমে ধাক্কা এড়ালেন তিনি। এ জে সি বসু রোডে রেষারেষি করতে গিয়ে একটি বাস ধাক্কা মারল আর একটিকে। লালবাজারের দাবি, তিন মাসে বাসের রেষারেষিতে জখম ৩৮ জন, প্রাণহানিও হয়েছে। কয়েক দিন আগে একটি বাস মা উড়ালপুলের স্তম্ভে ধাক্কা মারলে জখম হন ১১ জন। তবু বাড়তি আয় ও বেশি যাত্রীর মোহে রেষারেষি থামে না।

হাওয়া খেতে মাথা ফাঁকা

একটি মোটরবাইকে সওয়ারি চার জন। পিছনে বসা মহিলা যাত্রীর কোলে একরত্তি। পার্ক সার্কাসের মোড়ে পুলিশ বাইকটি দাঁড় করাতেই চালকের সাফাই— ‘‘স্ত্রীর গরম লাগে। তাই হাওয়া খেতেই হেলমেট না নিয়ে বেরোতে চেয়েছিল।’’ কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, গত মাসে বাইক দুর্ঘটনার সংখ্যা দেড়শো ছাড়িয়েছে। তবু হুঁশ ফেরে না কেন? ময়দান এলাকায় ধরা পড়া এক বাইকচালকের উত্তর, ‘‘দু’চাকার যানে বিপদ বুঝেই কিনেছি। বেশি ভেবে কী হবে?’’

গাড়ি চুপ করালেই বেল্ট থেকে মুক্তি

বাইপাসে মেট্রোর স্তম্ভে ধাক্কা মেরে দুমড়ে গিয়েছিল গাড়ি। চালকের আসনে বসা ছেলে ও পাশে বসা বৌমার মৃত্যু হলেও সিট বেল্টের জোরে বেঁচে যান পিছনের আসনে বসা প্রৌঢ়া। তবে গাড়ি পরীক্ষার সময়ে পুলিশের ফরেন্সিক বিভাগ দেখে, সামনের দু’টি সিট বেল্ট ঠিক জায়গায় গোঁজা! প্রৌঢ়া বলেন, ‘‘আসলে ছেলে-বৌমা সিট বেল্টই পরত না। যথাস্থানে গুঁজে বেল্টটা পিঠের পিছনে রেখে দিত। ফলে সিট বেল্ট না পরলে যে আওয়াজ হয়, সেটা আর হত না। সে দিনও ওরা তা-ই করেছিল।’’ পুলিশ সূত্রের খবর, এ ভাবে সিট বেল্ট এড়ানো বন্ধ করাই চলতি পথ নিরাপত্তা সপ্তাহের সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সাম্প্রতিক বহু পথ দুর্ঘটনায় সিট বেল্ট না পরার হিড়িক দেখা গিয়েছে। এ দিন পার্ক স্ট্রিটে ধরা পড়া এক চালক বললেন, ‘‘দমবন্ধ লাগে। পিঠের কাছেই আছে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে পরে নিই!’’

যেমন খুশি রাস্তা পারেই পথের দাবি

আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে রাস্তা পারাপারের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে পথচারীরা। হঠাৎ এগিয়ে এলেন এক পথচারী। দ্রুত একটি বাস ব্রেক কষলে সেটির পিছনে ধাক্কা মারল একটি লরি। আর জি কর রোড, হাওড়া সেতু, বাইপাসের মতো একাধিক রাস্তায় এমন ‘জে-ওয়াকিং’-এর জন্য নাজেহাল পুলিশ। পুলিশ সূত্রের খবর, গত তিন মাসে এর জন্যই ঘটেছে ১৬টি দুর্ঘটনা, মৃত্যুও হয়েছে কয়েক জনের। এ দিন হাওড়া সেতুতে বেপরোয়া ভাবে রাস্তা পারাপার করা এক ব্যক্তি বললেন, — ‘‘শুধু কি গাড়িই যাবে? রাস্তা কারও একার নয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement