একসঙ্গে: লকগেট উড়ালপুলের উপরে পাশাপাশি যেতে পারছে বাস ও একটি বড় গাড়ি। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
কলকাতার রাস্তায় গাড়ির গড় গতি প্রতি ঘণ্টায় মাত্র ২০ কিলোমিটার। শহরের ৭০ শতাংশ রাস্তাতেই এর চেয়ে বেশি গতিতে গাড়ি চলাচল করতে পারে না বলে এক সমীক্ষায় জানিয়েছিল ‘সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’ (সিএসই)। ওই সমীক্ষায় আরও বলা হয়েছিল, বৃহত্তর কলকাতার মাত্র ১৩ শতাংশ প্রধান রাস্তার ক্ষেত্রে গাড়ির গতি হয় গড়ে ২৫ কিলোমিটার (প্রতি ঘণ্টায়)। লকগেট উড়ালপুলে যানের গতি নিয়ন্ত্রণ করে একই সঙ্গে দু’দিকে যান চলাচল করানোর পক্ষে এই সমীক্ষার কথাই উল্লেখ করছেন সেতু বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
ওই সেতু বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটারের কম গতিবেগে গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তা হলে অবশ্যই লকগেট উড়ালপুল দ্বিমুখী করা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে শহরের যানবাহনের গড় গতির সঙ্গে উড়ালপুলে চলা গাড়ির গতিবেগের খুব একটা হেরফের হবে না। কিন্তু গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি দেখতে হবে পুলিশকেই। তাই এই ব্যবস্থা কার্যকর করতে গেলে পুলিশকে আরও সক্রিয় হতে হবে বা জোরদার পরিকল্পনা করতে হবে বলে জানাচ্ছেন ওই সেতু বিশেষজ্ঞেরা।
প্রশাসন সূত্রের খবর, সিএসই-র ওই সমীক্ষা ছাড়াও কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের অধীনে ব্যস্ত সময়ে গাড়ির গতি নিয়ে সমীক্ষা করা হয়। ২০০৮ সালের সেই সমীক্ষা অনুযায়ী, এ শহরের গড় গতি ছিল ঘণ্টায় মাত্র ১৮ কিলোমিটার! পরে ডিভাইডার তৈরি করে ও উন্নত ট্র্যাফিক সিগন্যালের সাহায্যে শহরের গতি কিছুটা বাড়ানো গেলেও একাধিক সমীক্ষা জানাচ্ছে, কলকাতার গড় গতি ঘোরাফেরা করছে ঘণ্টায় ২০ থেকে ২২ কিলোমিটারের মধ্যে।
সেতু বিশেষজ্ঞ বিশ্বজিৎ সোম বলছেন, ‘‘ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার বেগে গাড়ি চললে অবশ্যই ওই উড়ালপুল দিয়ে দ্বিমুখী গাড়ি চলাচল সম্ভব। সে ক্ষেত্রে গতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি পুলিশকেই দেখতে হবে। আর মাঝপথে কোনও গাড়ির ব্রেক ডাউন হলে সমস্যা মেটাতে সেতুর উভয় দিকেই না-হয় ক্রেন রাখার ব্যবস্থা করা হোক।’’ আর এক সেতু বিশেষজ্ঞের আবার প্রশ্ন, ‘‘যদি ওইটুকু যাত্রাপথে ২০ কিলোমিটারের কম গতিতেও গাড়ি চলে, তাতে অসুবিধা কোথায়? মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যাপার। স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার চেয়ে তো ধীর গতিতে এগোনো অনেক ভাল।’’
যদিও কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের একাংশের বক্তব্য, এমনিতেই রাস্তায় বাসের রেষারেষি নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব হয়ে যায়। সেখানে লকগেটে গাড়ির গতি কী ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে? এক পুলিশকর্তার পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় কে নেবে?’’
কিন্তু গতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি তো পুলিশের দেখার কথা। তা হলে কি পুলিশ নিজের দায়িত্ব এড়াচ্ছে? ওই পুলিশকর্তা বলছেন, ‘‘আমাদের অভিজ্ঞতা বলছে, চালকদের প্রবণতা হল রাস্তার মাঝখান দিয়ে গাড়ি চালানো। এখানে তো ডিভাইডারও নেই। তাই সে ঝুঁকি নেব কেন?’’
যুগ্ম কমিশনার (ট্র্যাফিক) সন্তোষ পাণ্ডে জানাচ্ছেন, পুলিশের কাছে টালা সেতুর দু’টি বিকল্প ছিল— লকগেট উড়ালপুল এবং চিৎপুর সেতু। কিন্তু চিৎপুর সেতু দিয়ে ভারী যান চলাচল সম্ভব নয় বলেই লকগেট উড়ালপুলকে উত্তরমুখী বাস চালানোর জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। সন্তোষবাবুর কথায়, ‘‘শুধু যুক্তির দিক থেকে যদি ওই উড়ালপুল উভমুখী করার প্রশ্ন ওঠে, তা হলে বলব ওখান দিয়ে একটা বাস চললে তার পাশে আর একটি গাড়ি কখনওই চালানো সম্ভব নয়। কিন্তু সেটা পরের কথা। আমাদের ট্র্যাফিকের পরিকল্পনায় এর প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছি না।’’
যদিও স্থানীয় বাসিন্দাদের একটা বড় অংশ সেটা প্রয়োজন বলেই মনে করছেন। যেমন কাশীপুরের এক বাসিন্দা, প্রাক্তন ইঞ্জিনিয়ার সলিল রায় বলছেন, ‘‘উত্তর দিক থেকে শহরের কেন্দ্রে পৌঁছনোর তাড়া থাকে। কিন্তু তা জানার পরেও পুলিশ কেন এই জবরদস্তি করছে, বুঝতে পারছি না।’’