—ফাইল চিত্র।
ভাত খেয়ে উঠলেই সব বমি হয়ে যেত ন’বছরের সাগর জানার। স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে ছেলেকে নিয়ে গিয়েছিলেন লক্ষ্মীকান্তপুরের বাসিন্দা, পেশায় রাজমিস্ত্রি পঞ্চানন জানা। পরীক্ষা করে চিকিৎসক জানান, কিডনির সমস্যা রয়েছে ওই বালকের। কলকাতার পার্ক সার্কাসে একটি বেসরকারি শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে এলে জানা যায়, সাগরের দু’টি কিডনিই খারাপ। শুরু হয় ডায়ালিসিস। ডাক্তারেরা জানিয়ে দেন, কিডনি প্রতিস্থাপন ছাড়া উপায় নেই। গত নভেম্বরে মায়ের একটি কিডনি পেয়ে আপাতত সুস্থ ১১ বছরের সাগর।
বিহারের সাসারামের বাসিন্দা, বছর নয়ের ওয়ারিশা খানের দু’-এক বার কালো রঙের প্রস্রাব হতে দেখেই সমস্যা আঁচ করেছিলেন মা-বাবা। স্থানীয় চিকিৎসক জানান, মূত্রে সংক্রমণের জন্য এমনটা হয়েছে। ওয়ারিশাকে নিয়ে পার্ক সার্কাসের ওই বেসরকারি শিশু হাসপাতালে আসেন পরিজনেরা। জানা যায়, বালিকার দু’টি কিডনিই খারাপ। মেয়ের চিকিৎসার জন্য সপরিবার কলকাতার পঞ্চান্নগ্রামের গুলশন কলোনিতে উঠে আসেন ছোটখাটো চাকুরে আফজাদ খান। কিডনি খারাপ হওয়ার কারণেই গত বছর হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয় ওয়ারিশা। আপাতত সাড়ে তেরো বছরের ওই কিশোরীকে তার মায়ের কিডনি দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চের তথ্য বলছে, ভারতে ক্রনিক কিডনি ডিজ়িজ়ের (সিকেডি) ৬০ শতাংশের কারণ ডায়াবিটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ। গর্ভে থাকাকালীন কিছু ওষুধের প্রভাব, জন্মগত ত্রুটির কারণেও শৈশবে কিডনির সমস্যা হয়। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, সময়ে রোগ ধরা না পড়লে এবং চিকিৎসা শুরু না-করা গেলে কিডনি প্রতিস্থাপন ছাড়া উপায় থাকে না।
কিডনির অসুখ নিয়ে সচেতনতার প্রচারে ২০০৬ সাল থেকে মার্চের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবারটি ‘বিশ্ব কিডনি দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব নেফ্রোলজি এবং ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব কিডনি ফাউন্ডেশনস। এর পাশাপাশি, সচেতনতার প্রসারে গত এক মাস ধরে বিনামূল্যে সমাজের পিছিয়ে পড়া শিশু এবং পথশিশুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে কিডনির রোগ নির্ণয় শুরু করেছে পার্ক সার্কাসের শিশু-চিকিৎসার হাসপাতাল ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথ (আইসিএইচ)। কাল, বৃহস্পতিবার পার্ক সার্কাসের ডন বস্কো স্কুলের সামনে থেকে এই উপলক্ষে খুদে কিডনি রোগীদের নিয়ে এক পদযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে আইসিএইচ আয়োজিত এক অনুষ্ঠান থেকে উপস্থিত চিকিৎসকেরা সমাজের সর্বস্তরের উদ্দেশে সহায়তার ডাক দিলেন। শিশুরোগ চিকিৎসক ও আইসিএইচ-এর ডিরেক্টর অপূর্ব ঘোষ বলেন, ‘‘শিশুদের কিডনি প্রতিস্থাপন এবং ডায়ালিসিসের বিপুল খরচের জন্য অনেক সাহায্য প্রয়োজন। নিজের সন্তানের জন্মদিন পালনের খরচ যত, তার একটি ছোট অংশও যে কেউ দান করতে পারেন। এ ভাবে অন্য পরিবারের মুখে হাসি ফিরিয়ে দেওয়ার অংশীদার হতে পারেন আপনিও।’’ আইসিএইচ-এ কিডনি প্রতিস্থাপনের পরিকাঠামো তৈরির বিষয়টিও উঠে আসে আলোচনায়। সেই পরিকাঠামো গড়ে তুলতে আরও বেশি সাহায্যের জন্য আবেদন রাখা হয়।
কিডনির রোগের সূচনা-পর্বেই এর শনাক্তকরণে জোর দেন আর এক শিশুরোগ চিকিৎসক জয়দেব রায়। তিনি জানান, প্রাথমিক পর্যায়েই রোগ ধরা পড়লে কিডনি প্রতিস্থাপনের মতো ব্যয়বহুল চিকিৎসা এড়ানো সম্ভব। পাশাপাশি, একটি কিডনি দান করলে যে শরীরের কোনও ক্ষতি হয় না, সেটাও সকলকে বুঝতে হবে। পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজিস্ট রাজীব সিংহ বলেন, ‘‘শরীর থেকে বর্জ্য বার করা ছাড়াও রক্ত তৈরি করা, হাড় শক্তিশালী করার মতো আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে আমাদের কিডনি। সুতরাং, শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াকে সচল রাখতে কিডনির সম্পর্কে সচেতনতা খুব জরুরি।’’