উত্তর কলকাতার শোভাবাজার এলাকায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
কোথাও বাতিস্তম্ভের গায়ে লাগানো বাক্স হাঁ করে খোলা। ভিতর থেকে উঁকি দিচ্ছে বিদ্যুতের তার। কোথাও আবার ওই বাক্স থেকে এমন ভাবে জট পাকানো তার বেরিয়ে এসেছে যে, বিপদ ঘটতে পারে যে কোনও সময়ে। চলতি বর্ষায় শহর ও শহরতলির নানা জায়গায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে পর পর মৃত্যুর ঘটনা সামনে আসার পরে কলকাতার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেল এমনই দৃশ্য। যা প্রশ্ন তুলে দিল, এ শহরই বা কতটা নিরাপদ?
ভুক্তভোগীদের বড় অংশই মনে করিয়ে দিচ্ছেন, গত বছরের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় আমপানের রাতেই শহরে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল। যার মধ্যে ১৬ জনের মৃত্যু হয় ছেঁড়া তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে। মানিকতলায় বৃষ্টির রাতে পুরসভার বাতিস্তম্ভ ছুঁয়ে ফেলায় প্রাণ যায় দু’জনের। ওই বছরেরই ১৮ জুন পাটুলির জমা জলে মাছ ধরতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় এক জনের। সে দিনই হরিদেবপুরে মোটরবাইক নিয়ে যাওয়ার পথে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান আরও এক জন।
এ বারের বর্ষার শুরুতেও রাজভবনের সামনে পড়ে থাকা ছেঁড়া তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় পেশায় ইঞ্জিনিয়ার এক যুবকের। গাফিলতি কার, তা নিয়ে শুরু হয় চাপান-উতোর। কিন্তু ওই পর্যন্তই। এতগুলি মৃত্যুর পরেও শহরের পরিস্থিতি বদলায়নি বলে অভিযোগ।
গল্ফ গার্ডেন এলাকার প্রিন্স গোলাম মহম্মদ শাহ রোডে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
পরিস্থিতি না বদলানোর চিত্রই দেখা গেল দক্ষিণ কলকাতার প্রিন্স গোলাম মহম্মদ শাহ রোডে। রবিবার থেকে বুধবার রাত পর্যন্ত জলমগ্ন ছিল দক্ষিণ কলকাতার গল্ফ গার্ডেন ও প্রিন্স গোলাম মহম্মদ শাহ রোডের বিস্তীর্ণ এলাকা। বৃহস্পতিবার জল নামলেও দেখা গেল, গল্ফ গার্ডেন উদ্যানের ঠিক উল্টো দিকে একটি বাতিস্তম্ভের নীচে ফিডার বক্স খোলা। স্থানীয় বরোর কোঅর্ডিনেটর তপন দাশগুপ্তের দাবি, ‘‘বুধবার রাতে জমা জল সরে যাওয়ার পরেই ইঞ্জিনিয়ারেরা দেখেন, ওই বাক্সের ভিতরে জল জমে রয়েছে। জল বার করতেই তা খোলা হয়। শীঘ্রই বাক্সটি বন্ধ করে দেওয়া হবে।’’
একই ভাবে বাতিস্তম্ভ থেকে বিপজ্জনক ভাবে তার ঝুলতে দেখা গেল রবীন্দ্র সরণি এবং শোভাবাজার মোড়ের কাছেও। শোভাবাজারে তারের জটের এমনই অবস্থা যে, বৃষ্টির মধ্যে পথচলতি মানুষের পা পড়ে যে কোনও মুহূর্তে বিপদ ঘটতে পারে। একই ভাবে বাতিস্তম্ভের তার ঝুলতে দেখা গিয়েছে হেস্টিংস এবং ময়দান চত্বরেও।
বান্ধবনগরে তড়িদাহত হয়ে দুই ছাত্রীর মৃত্যুর পরেও বাতিস্তম্ভ থেকে খোলা তারের কুণ্ডলী দেখা যাচ্ছে এলাকায়। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
বিদ্যুৎ সংস্থা সিইএসসি-র অবশ্য দাবি, শহরে তাদের বিদ্যুতের তার মাটির নীচ দিয়ে গিয়েছে। তা ছাড়া, শহরে তাদের কোনও বাতিস্তম্ভও নেই। শহরে বাতিস্তম্ভ রয়েছে পুরসভা, কেএমডিএ এবং পূর্ত দফতরের। সেগুলি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও তাদেরই। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বাতিস্তম্ভগুলি সিইএসসি-কে দেওয়া থাকলেও নানা সময়ে ওই সমস্ত স্তম্ভের উপরেই কেব্ল সংযোগের তার চাপান মাল্টি সিস্টেম অপারেটরেরা (এমএসও)। ফলে এক-এক সময়ে অবস্থা এমনই দাঁড়ায় যে, সেগুলির ভার বহন করার ক্ষমতা থাকে না। ঝড়-বৃষ্টি হলে এর পরে সেই তারই ছিঁড়ে পড়ে বিপদ বাড়ায়।
কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন মেয়র পারিষদ (আলো) তথা বর্তমান প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য মনজ়র ইকবালের যদিও দাবি, ‘‘যা বিপদ হওয়ার আগে হত। এখন আর কিছু হয় না। কারণ, ঘড়ি ধরে বাতিস্তম্ভের আলো নিভিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে আরও ভাল করে নিয়ম মানা হয়। সেই সঙ্গে প্রতিটি ওয়ার্ডে বাতিস্তম্ভ দেখার জন্য ইঞ্জিনিয়ারেরা রয়েছেন।’’