সরকারি সাহায্য অমিল বাংলা স্কুলেই, অভিযোগ 

উত্তর কলকাতার এক প্রাচীন স্কুল টাকি হাউস গভর্নমেন্ট স্পনসর্ড মাল্টিপারপাস স্কুল (বয়েজ)। সেখানে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পর্যন্ত প্রায় ১৯০০ পড়ুয়া রয়েছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক পরেশকুমার নন্দ জানান, গোটা স্কুলে মাত্র ১৫টি ক্লাসরুম।

Advertisement

সুপ্রিয় তরফদার

শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:৪৭
Share:

—প্রতীকী ছবি।

প্রতিযোগিতায় ইংরেজি মাধ্যমের থেকে বাংলা মাধ্যমের স্কুল পিছিয়ে পড়ছে বলে দাবি শিক্ষামহলের একাংশের। পড়ুয়ার অভাবে কলকাতায় বহু বাংলা মাধ্যম স্কুল বন্ধও হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তার মধ্যেও ব্যতিক্রম কিছু স্কুলে উপচে পড়ছে পড়ুয়া। অভিযোগ, পর্যাপ্ত ক্লাসরুম-সহ নানা পরিকাঠামোর অভাবে‌ তাদের ভোগান্তি হচ্ছে। স্কুলশিক্ষা দফতর থেকে আর্থিক সাহায্য না পেয়ে স্থানীয় সাংসদ ও বিধায়কের ওপরেই ভরসা করতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ।

Advertisement

উত্তর কলকাতার এক প্রাচীন স্কুল টাকি হাউস গভর্নমেন্ট স্পনসর্ড মাল্টিপারপাস স্কুল (বয়েজ)। সেখানে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পর্যন্ত প্রায় ১৯০০ পড়ুয়া রয়েছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক পরেশকুমার নন্দ জানান, গোটা স্কুলে মাত্র ১৫টি ক্লাসরুম। প্রতিটি ক্লাসরুমে ৬৫-৭০ জন পড়ুয়াকে বসতে হয়। শিক্ষার অধিকার আইন (২০০৯) অনুযায়ী যে সংখ্যাটা ৩৫-৪০ হওয়ার কথা। এই সমস্যা মেটাতে সীতারাম ইয়েচুরি, কুণাল ঘোষ এবং প্রদীপ ভট্টাচার্য তাঁদের সাংসদ তহবিল থেকে আর্থিক সাহায্য করেছেন। প্রায় ২ কোটি ৩ লক্ষ টাকা দিয়ে তৈরি হচ্ছে পৃথক ন’টি ক্লাসরুম। কিন্তু বছর পার হলেও সেই কাজ শেষ হয়নি বলে অভিযোগ তাঁর। ফলে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে ওই ক্লাসরুম ব্যবহারই করা যাবে না বলেই মনে করছেন তিনি। ইতিমধ্যেই অন্তত ১২টি ক্লাসরুম না পাওয়া গেলে পড়ুয়াদের পঠনপাঠন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কাও করছেন স্কুলের শিক্ষকরা।

প্রধান শিক্ষক পরেশবাবু জানান, নতুন ক্লাসরুম তৈরির কাজ করছেন পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়াররা। সেই কাজ এখনও অসম্পূর্ণ। এ বিষয়ে কথা বলতে ওই কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়ারকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘দ্রুততার সঙ্গেই কাজ চলছে। ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা। আমরাও চেষ্টা করছি যাতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেখানে পঠনপাঠন চালু করা যায়।’’

Advertisement

বঞ্চনার একই অভিযোগ কাটজুনগর স্বর্ণময়ী বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক কাজী মাসুম আখতারেরও। তিনি জানান, কলকাতার সর্বশিক্ষা মিশন ও স্কুলশিক্ষা দফতরে বহুবার আর্থিক সাহায্যের আবেদন করেও পাওয়া যায়নি। পরবর্তী কালে স্থানীয় সাংসদ সুব্রত বক্সী ও স্থানীয় বিধায়ক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের তহবিল থেকে ৩০ লক্ষ টাকা সাহায্য মিলেছে। হু হু করে বেড়েছে পড়ুয়ার সংখ্যা। তা সত্ত্বেও দফতরের সহযোগিতা না পাওয়ায় আক্ষেপ প্রকাশ করেন তিনি।

শিক্ষার সার্বিক উন্নতির জন্য পরিকাঠামোর একান্ত প্রয়োজন বলে বার বার দাবি করে আসছে শিক্ষামহল। কিন্তু যেখানে সম্ভাবনা রয়েছে সেই সমস্ত স্কুলকে কেন বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে না, উঠছে সেই প্রশ্নও। স্বর্ণময়ী বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘৩০ লক্ষ টাকা দিয়ে অনেকটা কাজ এগিয়েছি। কিন্তু সার্বিক উন্নতির জন্য আরও অর্থের প্রয়োজন। স্কুলশিক্ষা দফতরকে পাশে চাই। ভাল শিক্ষক এবং পরিকাঠামো ঠিক হলে ইংরেজি মাধ্যমকেও টেক্কা দেওয়া যাবে।’’ তবে কলকাতার সর্বশিক্ষা মিশনের চেয়ারম্যান কার্তিক মান্না বলেন, ‘‘এই অভিযোগ ঠিক নয়। প্রয়োজনমতো অর্থ সকলকেই দেওয়া হয়। কোনও নির্দিষ্ট স্কুলের ক্ষেত্রে কী হয়েছে বলতে পারব না। প্রয়োজনে ওই স্কুল কর্তৃপক্ষ দফতরে যোগাযোগ করতে পারেন।’’

পরিকাঠামোর পাশাপাশি শিক্ষকের ঘাটতির প্রসঙ্গও ঘুরেফিরে এসেছে। প্রসঙ্গত, গোটা রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া যে ভাবে জট পাকিয়ে রয়েছে তাতে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষ। আগামী জানুয়ারি থেকে শিক্ষাবর্ষ চালু হচ্ছে। তা শেষ হওয়ার আগে শিক্ষক নিয়োগ না হলে পঠনপাঠনের বেহাল অবস্থা আরও প্রকট হবে বলে আশঙ্কা। শিক্ষক নেতা স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘বাংলা মাধ্যমকে বাঁচাতে পরিকাঠামো এবং শিক্ষকের ঘাটতি একসঙ্গে মেটাতে হবে। না হলে এগিয়ে থাকা স্কুলগুলিও পিছিয়ে পড়তে পারে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement