—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
ভবানীপুরের ব্যবসায়ী ভব্য লাখানিকে খুনের ঘটনার তদন্তে নেমে এক তরুণীকে সন্দেহভাজনদের তালিকায় রেখেছেন তদন্তকারীরা। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে, ভব্যের থেকে হাতানো টাকার একটি বড় অংশ ওই তরুণীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরিয়ে রেখেছিল ঘটনায় মূল অভিযুক্ত, ধৃত অনির্বাণ গুপ্ত। সেই তরুণীর খোঁজ চলছে বলে লালবাজার সূত্রের খবর। পাশাপাশি, খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আটক করা হয়েছে দুই রাজমিস্ত্রিকেও। তাঁদের এ দিন নিমতা থানায় নিয়ে এসে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারীরা।
পুলিশ সূত্রের খবর, ওষুধ সরবরাহের নাম করে ভব্যের কাছ থেকে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা নিয়েছিল অভিযুক্ত অনির্বাণ। সেই টাকা তিনটি অ্যাকাউন্টে সরিয়ে দিয়েছিল সে। পুলিশ জেনেছে, তিনটি অ্যাকাউন্টের মধ্যে ওই তরুণী তথা অনির্বাণের বান্ধবীর অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়েছিল প্রায় ২০ লক্ষ টাকা। কেন হঠাৎ তাঁর অ্যাকাউন্টে অত টাকা পাঠানো হয়েছিল, তা জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। খুনের ঘটনায় তরুণীর ভূমিকা ছিল কি না, তা-ও দেখা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, ভব্যকে খুনের ঘটনায় বুধবারই অনির্বাণ ও তার সঙ্গী সুমন দাসকে গ্রেফতার করে লালবাজার। তাদের হেফাজতেও নেওয়া হয়।
গত সোমবার বালিগঞ্জের অফিসে একটি বৈঠক সেরে বেরোনোর পরে রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ হয়ে যান ভব্য। সেই রাতেই তাঁর স্ত্রী বালিগঞ্জ থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। তদন্তে নেমে ভব্যের ব্যবসার অংশীদার অনির্বাণের নিমতার বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। সেখানে ছাদে জলের ট্যাঙ্কের নীচ থেকে উদ্ধার হয় ভব্যের রক্তাক্ত দেহ। পুলিশ জানিয়েছে, প্রমাণ লোপাট করার জন্য গোটা জায়গাটি ইট-সিমেন্ট দিয়ে গেঁথে দিয়েছিল অভিযুক্ত। তদন্তকারীদের ধারণা, ট্যাঙ্কের নীচে ইট দিয়ে গাঁথনি করেছিলেন দুই রাজমিস্ত্রি। সেই কারণে এ দিন তাঁদের থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
তদন্তে পুলিশ জেনেছে, ওষুধের জন্য অনির্বাণকে ৫০ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন ভব্য। কিন্তু কথা মতো অনির্বাণ ওষুধ না দেওয়ায় তাঁর কাছ থেকে টাকা ফেরত চাইছিলেন ওই ব্যবসায়ী। তিনি বিষয়টি নিয়ে জোরাজুরি করাতেই তাঁকে খুনের পরিকল্পনা করে অনির্বাণ।
ধৃতদের জেরা করে পুলিশ জেনেছে, বুধবার সকালে সুমনকে ফোন করে ডাকে অনির্বাণ। দুপুর ১টা নাগাদ অনির্বাণের নিমতার ভাড়ার ঘরে পৌঁছয় সুমন। সে দাবি করেছে, সেই সময়ে ঘরে অনির্বাণ ছাড়া আর কেউ ছিল না। অনির্বাণ সুমনকে বলে, আশপাশে একটু ঘোরাঘুরি করে সে যেন পরে আবার আসে। সুমনের দাবি, পাঁচটা নাগাদ সে অনির্বাণের ঘরে পৌঁছে ভব্যের রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে দেখে। পুলিশ অবশ্য সুমনের এই দাবি যাচাই করছে।
তবে পুরো ঘটনাটি যে পূর্ব-পরিকল্পিত, তা নিয়ে এক প্রকার নিশ্চিত তদন্তকারীরা। এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ব্যবসায়ীকে খুন থেকে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা, সবটাই পরিকল্পনামাফিক বলে মনে হচ্ছে।’’