মঙ্গলবার কলকাতার ৩৯তম মেয়র হিসাবে শপথ নিলেন ফিরহাদ হাকিম। পুর প্রশাসনকে কোন পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান তিনি? জানালেন আনন্দবাজার পত্রিকাকে।
Firhad Hakim

Firhad Hakim: কাউন্সিলর তিনি, যিনি সর্বদা বাসিন্দার পাশে থাকবেন, মেয়র হিসেবে শপথ নিয়ে বললেন ববি

ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি, আমহার্স্ট স্ট্রিট, খিদিরপুর, যাদবপুর, বেহালা ও বাইপাসে জল জমার সমস্যা দূর করতে কেইআইআইপি-র কাজ দ্রুত শেষ করতে চাই।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:১৫
Share:

ফিরহাদ হাকিম। ফাইল চিত্র।

প্রশ্ন: আগামীতে কী পরিকল্পনা রয়েছে?

Advertisement

উত্তর: মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ছ’মাস পরে রিপোর্ট কার্ড দেব। ছ’মাস অন্তর প্রকল্পের অগ্রগতি দেখতে আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করব। নির্বাচনী ইস্তাহারের দশ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়িত করায় জোর দেব।

শুরুতেই কোন পরিষেবায় হাত দেবেন?

Advertisement

ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি, আমহার্স্ট স্ট্রিট, খিদিরপুর, যাদবপুর, বেহালা ও বাইপাসে জল জমার সমস্যা দূর করতে কেইআইআইপি-র কাজ দ্রুত শেষ করতে চাই। আরও একটি জরুরি কথা। দু’লক্ষ বর্গফুট বা তার বেশি আয়তনের আবাসন নির্মাণের অনুমোদন পেতে নিজস্ব নিকাশি পরিশোধন কেন্দ্র থাকতে হবে। ওই ধরনের আবাসনের পানীয় জল সরবরাহের নিজস্ব নেটওয়ার্ক এবং বৃষ্টির জল সংরক্ষণ ব্যবস্থা থাকাও বাঞ্ছনীয়।

প্রথম বার কাউন্সিলর হয়েছেন, এ বার এমন অনেকেই আছেন। কী বলবেন?

পাড়ায় কেউ অসুস্থ হলে তাঁকে ভর্তির ব্যবস্থা করতে কাউন্সিলরকে সচেষ্ট হতে হবে। রেশন বা ভোটার কার্ড তৈরিতেও বাসিন্দাদের সাহায্য করবেন তিনি। বছর পাঁচেক আগের ঘটনা। মন্ত্রিসভার বৈঠক চলাকালীন পাড়ায় একটা দুর্ঘটনার খবর পাই। মুখ্যমন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে চেতলায় ফিরে এসেছিলাম। মন্ত্রী হলেও পাড়ায় আমার নজর থাকে। তাই হয়তো পাঁচ বারের কাউন্সিলর। মুখ্যমন্ত্রীর ছবি দেখিয়ে প্রথম বার কাউন্সিলর হওয়া যায়। তার পরে জিততে হলে কাজ করে দেখাতে হবে।

শহরের কিছু জায়গায় পরিস্রুত পানীয় জলের সঙ্কট নিয়ে কী ভাবনা?

বেহালার ১২৭, ১২৮ নম্বর ওয়ার্ড, যাদবপুর, টালিগঞ্জের একাংশে পানীয় জলের সঙ্কট রয়েছে। টালিগঞ্জের একটি অংশের মানুষ এখনও গভীর নলকূপের জলের উপরে নির্ভরশীল। বড়বাজারের তিনটি ওয়ার্ডে জলের চাপ কম। বেহালার জন্য বুস্টার পাম্পিং স্টেশন তৈরি হচ্ছে। গড়িয়ার ঢালাই ব্রিজ এলাকার জন্যও হবে। যাদবপুর ও টালিগঞ্জের জলের চাহিদা মেটাতে ধাপায় জয়হিন্দ জলপ্রকল্পের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো হবে।

রাস্তার বেহাল দশা কেন?

জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশে রাস্তায় ম্যাস্টিক বসানো বন্ধ হয়েছে। পুরসভার একার পক্ষে শহরের বাইরে ম্যাস্টিক অ্যাসফল্ট প্লান্ট তৈরি করা অসম্ভব। পুরসভা, কেএমডিএ, পূর্ত দফতর মিলে করার পরিকল্পনা রয়েছে। তখন রাস্তা নিয়ে অভিযোগ অনেকটাই দূর হবে।

ফুটপাত হকারদের দখলে চলে যাচ্ছে। বাড়ছে দুর্ঘটনা।

হকার-নীতি কার্যকর করতে শীঘ্রই কলকাতা পুলিশের সঙ্গে বৈঠকে বসব। নিউ মার্কেট, ডালহৌসির মতো এলাকায় হকিং জ়োন গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে। হকারদের ট্রলি দেওয়া হবে। বিক্রিবাটার পরে ট্রলি নিয়ে তাঁরা ফিরে যাবেন।

সপার্ষদ: কলকাতা পুরসভার মেয়র পদে শপথ গ্রহণ করার পরে মেয়র পারিষদদের সঙ্গে ফিরহাদ হাকিম। মঙ্গলবার, পুরভবনে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

পার্কিং নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।

অ্যাপের মাধ্যমে শহরে পার্কিং-ফি নেওয়ার ব্যবস্থা চালু করবে পুরসভা। পুরসভা একাধিক জায়গায় আধুনিক পার্কিং কমপ্লেক্স গড়তে চলেছে।

হোর্ডিং-বিধি নিয়ে কোনও পরিকল্পনা?

নির্বাচনী ইস্তাহারে দশ দফা কর্মসূচিতে এটি রয়েছে। এলাকাভিত্তিক হোর্ডিং নীতি চালু করতে গত পুরবোর্ডেই বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি গঠিত হয়েছে।

বিপজ্জনক বাড়ি নিয়ে বাড়তি ভাবনাচিন্তা রয়েছে?

বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে সংস্কার করতে আইনের সংশোধন প্রয়োজন। পুরসভার তরফে প্রস্তাব পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরে পাঠানো হয়েছে। নিয়মের গেরোয় দমকলের কাছেও তিন হাজার ফাইল আটকে রয়েছে। দমকলের সঙ্গে কথা বলব।

আমপানে সবুজের বিপুল ক্ষতি হয়েছে।

আমপানের পরে শহরে পঞ্চাশ হাজার গাছ লাগানো হয়েছে। শহরের ভৌগোলিক অবস্থান বুঝে সুপরিকল্পিত ভাবে গাছ লাগাতে হবে।

বর্তমান পুরবোর্ড কি ফের ওয়েভার চালু করতে চায়?

ওই স্কিমের ব্যবহার লাভজনক নয়। তবে অ্যাসেসমেন্ট নিয়ে নিজস্ব ভাবনা বাস্তবায়িত করতে চাই। কলোনি এলাকার বাড়ি বৈধ না অবৈধ, এই লড়াইয়ে বছর কেটে যায়। ওই বাসিন্দাদের মিউটেশন হলে পুরসভার আয় যেমন বাড়বে, তেমনই ওঁদের নিরাপত্তাও বাড়বে। ই-পরিষেবার ধাঁচে পুরসভার অ্যাসেসমেন্ট প্রক্রিয়ার খোলনলচে বদলাতে চাই।

পুরসভায় স্থায়ী কর্মীর বহু পদ ফাঁকা। কী বলবেন?

যা কর্মী রয়েছে, যথেষ্ট। কোন দফতরে কত কর্মী প্রয়োজন, হিউম্যান রিসোর্স কনসালট্যান্টকে দিয়ে সমীক্ষা করাব।

নেতা ফিরহাদ হাকিমের ভিতরের মানুষটা কেমন?

মানুষের থেকে ভালবাসাই আমার জীবনের রসদ। তৎকালীন বাম নেতা, ডেপুটি মেয়র মণি সান্যাল অসুস্থ হওয়ায় যুব কংগ্রেসকর্মী আমি, রোজ তাঁকে এসএসকেএমে দেখতে যেতাম। পাড়ায় কেউ মারা গেলে কাঁধে বয়ে শ্মশানে নিয়ে গিয়েছি। দুঃসময়ে পাশে থাকলে ভালবাসা পাওয়া যায়।

রাজনীতিতে টান কী ভাবে?

সালটা ১৯৭২। তখন ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। ফার্ন রোডে মামার বাড়িতে থাকতাম। পাড়ার কংগ্রেস নেতা শম্ভুদার পিছন পিছন ঘুরতাম। যুব কংগ্রেসের উঠতি নেতা, নায়কোচিত সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে দেখতে ট্রাম লাইনের আড়ালে টানা তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করেছিলাম।

রান্না করতে জানেন?

আগে মায়ের রান্না খেয়েছি। এখন স্ত্রীর হাতের রান্না খাই। ১৯৮৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর বিয়ে করি। তখন আমার বয়স পঁচিশ বছর। স্ত্রী ইসমাতের বয়স ছিল আঠারো। প্রথম প্রথম আমার রাজনীতি করাটা উনি পছন্দ না করলেও এখন মানিয়ে নিয়েছেন।

নাতনিকে কাঁধে নিয়ে আপনার নাচের ভিডিয়ো নিয়ে কিছু বলবেন?

(হাসতে হাসতে) রাতে বাড়ি ফেরার পরে নাতনি আয়াতই আমার সঙ্গী হয়। ঘুমোনোর সময়ে নাক ডাকি বলে নাকটা টিপে দেয়। বলে, নানু নাক ডাকবে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement