—প্রতীকী ছবি।
কখনও সাইবার প্রতারণার ফাঁদ পাততে। কখনও বা প্রতারিতের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া টাকা রাখার জন্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে। কখনও আবার মাদকের কারবার বা অন্য কোনও নিষিদ্ধ সামগ্রী বিক্রির জন্য! বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনে ফি-বছর লক্ষ লক্ষ মোবাইল নম্বরের দরকার পড়ে প্রতারণা বা দুর্নীতি-চক্রের মাথাদের। সেগুলির বেশির ভাগই ভুয়ো নথিপত্রের সাহায্যে বাজার থেকে তোলা হয় বলে অভিযোগ। নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে কিছু নম্বর বন্ধ করিয়েও সুরাহা হয় না। একটি নম্বর বন্ধ হলে আরও হাজারখানেক নম্বর বাজার থেকে তুলে নেয় প্রতারকেরা!
নতুন বছরের শুরুতে সহজে মোবাইল নম্বর হাতে পাওয়ার এই পথটিই বন্ধ করতে চাইছে পুলিশ। লালবাজার সূত্রের খবর, ফোন নম্বর বন্ধ করানোর বদলে যে ভোটার বা আধার কার্ড দিয়ে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত সেই নম্বরটি তোলা হয়েছে, সেটিকে ‘ব্লক’ করার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে। অর্থাৎ, ওই আধার নম্বর দিয়ে কোনও নতুন সিম কার্ড তুলতে গেলেই পুলিশের কাছে রিপোর্ট পাঠাবে টেলি কমিউনিকেশন অপারেটর সংস্থাগুলি। পুলিশের অনুমতি নিতে হবে ওই পরিচয়পত্রের ভিত্তিতে সিম কার্ড দেওয়ার জন্য!
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ভাবনা মাথায় এসেছে গত দু’বছরের সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত একটি সমীক্ষার সূত্রে। গত সপ্তাহেই এই সংক্রান্ত রিপোর্ট জমা পড়েছে লালবাজারের বড় কর্তাদের কাছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, চলতি ডিসেম্বর পর্যন্ত গোটা রাজ্যে সাইবার প্রতারণার শিকার হয়ে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ। মনে করা হচ্ছে, প্রতারিতের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। কারণ, বহু ক্ষেত্রেই অভিযোগ পুলিশ পর্যন্ত গড়ায় না। অন্য ধরনের সাইবার বা ব্যাঙ্ক সংক্রান্ত প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে প্রায় ২৩ হাজার। আর্থিক ক্ষতি না হলেও সামাজিক ভাবে অসম্মান এবং অন্যান্য বেশ কিছু অপরাধের অভিযোগ এসেছে সাত হাজারের আশপাশে। সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, প্রায় ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে এ সব ঘটনা ঘটাতে এমন মোবাইল নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে, যেগুলি ভুয়ো নথির মাধ্যমে তোলা হয়েছে। সেগুলি ধরে খোঁজ করতে গিয়ে এমন ব্যক্তির কাছে পুলিশ পৌঁছচ্ছে, যিনি জানেনই না যে, তাঁর নামে অন্য কোনও সিম কার্ড রয়েছে! ব্যাঙ্ক সংক্রান্ত প্রতারণার হদিস পেতে গিয়েও প্রায় একই অবস্থা হচ্ছে। প্রতারণার ফাঁদ পাতা হয়েছে ভুয়ো নম্বরে, হারানো টাকা যে ব্যাঙ্কে রাখা হয়েছে, সেটিও খোলা হয়েছে ভুয়ো ফোন নম্বর দিয়ে। টাকার হদিস পেলেও প্রতারককে ধরাই যাচ্ছে না এমন বেশ কিছু ক্ষেত্রে!
একটি ওয়েব সিরিজ়ের উদাহরণ দিয়ে লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘গ্রামের গরিব মানুষদের টার্গেট করা হয়। তাঁরা বিশেষ কিছু না জেনেই সামান্য টাকা পাওয়ার আশায় নিজের ব্যক্তিগত তথ্য সচিত্র পরিচয়পত্র দিয়ে দেন। তাতেই উঠতে থাকে একের পর এক সিম কার্ড। এই দিকটাই আটকানোর চেষ্টা করা হবে।’’ পুলিশ সূত্রের খবর, লালবাজার থেকে এ ব্যাপারে একটি প্রস্তাব নবান্নে গিয়েছে। তাতে জানানো হয়েছে, গোটা এক বছরের এমন কয়েক হাজার আধার এবং ভোটার কার্ডের তালিকা তৈরি করা হয়েছে, যেগুলি দিয়ে লক্ষাধিক সিম কার্ড তোলা হয়েছে। সেই আধার এবং ভোটার কার্ডগুলি প্রথমে নজরদারির আওতায় আনা হোক। ওই কার্ড দিয়ে কেউ যাতে নতুন সিম তুলতেই না পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে প্রথমে পুলিশের থেকে অনুমতি নিতে হবে এই সমস্ত আধার এবং ভোটার কার্ডে সিম কার্ড তোলার জন্য।
আর এক পুলিশকর্তার মন্তব্য, ‘‘ব্যাঙ্কের কাজ বা অন্য যে কোনও দরকারে ব্যবহার করতে গেলেও পুলিশি অনুমতি লাগবে, এমন ব্যবস্থা করার ভাবনাচিন্তা চলছে ওই আধার বা ভোটার কার্ডগুলির ক্ষেত্রে। এমনটা হলে সাধারণ মানুষও সচেতন হবেন। অন্য কাউকে সামান্য টাকার জন্য নিজের সচিত্র পরিচয়পত্র সংক্রান্ত তথ্য বিক্রি করবেন না।’’ পুলিশ সূত্রের খবর, আগামী দিনে সমস্ত আধার এবং ভোটার কার্ডের ক্ষেত্রেই মোবাইলের সিম কেনার ব্যাপারে পুলিশি অনুমতি বাধ্যতামূলক করা হতে পারে। পুলিশের অনুরোধে নবান্ন থেকে এ বিষয়ে প্রস্তাব যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট দফতরে।