ফাইল চিত্র।
মেরুদণ্ডের সংযোগস্থলে থাকা স্নায়ুগুচ্ছের মাধ্যমে যন্ত্রণার বার্তা পৌঁছচ্ছিল মস্তিষ্কে। রেডিয়ো ফ্রিকোয়েন্সির মাধ্যমে সেই স্নায়ুগুচ্ছকে অবশ করা হয়। পাশাপাশি, মেরুদণ্ডের আরও দু’টি সংযোগস্থলের সমস্যা দূর করতে দু’রকমের প্রক্রিয়া করে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যশবন্ত সিনহার দীর্ঘ দিনের পিঠ ও কোমরের যন্ত্রণার উপশম ঘটিয়েছিল এসএসকেএম হাসপাতাল। এ বার সাধারণ মানুষও যন্ত্রণা উপশমে সেই পরিষেবা পাবেন। তার জন্য সম্প্রতি প্রায় ৫৮ লক্ষ টাকা খরচ করে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ‘আরএফএ’ (রেডিয়ো ফ্রিকোয়েন্সি অ্যাবলিশন) যন্ত্র কেনা হল পিজি-তে।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, নতুন ওই যন্ত্র দেওয়া হয়েছে ফিজ়িক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন (পিএমআর) বিভাগকে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, শরীরের যে অংশে সমস্যাটি হচ্ছে, সেখানকার স্নায়ুর মাধ্যমেই যন্ত্রণার বার্তা মস্তিষ্কে পৌঁছয়। আল্ট্রাসোনোগ্রাফির মাধ্যমে সেই অংশটি চিহ্নিত করে এবং লাইভ ছবি দেখে ‘আরএফএ’ যন্ত্রের মাধ্যমে ‘প্রোব’ প্রবেশ করানো হয় সেখানে। এর পরে সেই প্রোবের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক তরঙ্গ গিয়ে পৌঁছয় যন্ত্রণাক্লিষ্ট অংশের কোষে। কোষের মধ্যে সংঘর্ষের ফলে যে তাপ তৈরি হয়, তার দ্বারাই সেখানকার স্নায়ু অবশ করা হয়। তাতে যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পান রোগীরা।
পিএমআর বিভাগের প্রধান চিকিৎসক রাজেশ প্রামাণিক বলেন, ‘‘এই যন্ত্রের দ্বারা শরীরের বিভিন্ন অংশের দীর্ঘ দিনের যন্ত্রণার উপশম সম্ভব। নানা অসুখ, আঘাতের কারণে বহু রোগী যন্ত্রণায় কষ্ট পান। বিনামূল্যে তাঁদের পরিষেবা দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকার এই যন্ত্রের ব্যবস্থা করেছে।’’ সূত্রের খবর, পিজি-তে একটি পুরনো ‘আরএফএ’ যন্ত্র ছিল। কিন্তু অত্যাধুনিক যন্ত্রের প্রয়োজন উপলদ্ধি করেন চিকিৎসকেরা। তখন নতুন যন্ত্রের একটি মডেল এনে তা প্রাক্তন-মন্ত্রী সহ আরও কয়েক জন রোগীর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। সাফল্য মিলতেই সেটি কেনা হয়।
পিঠ, কোমর ছাড়াও বহু মানুষ হাঁটুর যন্ত্রণাতেও কষ্ট পান। হাঁটু প্রতিস্থাপনের পরেও অনেকেরই পুনরায় যন্ত্রণা শুরু হয়। ‘আরএফএ’ যন্ত্রের মাধ্যমে সেই ব্যথাও লাঘব করা সম্ভব বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, শরীরের বিভিন্ন অংশে নানা কারণে যন্ত্রণা দেখা দেয়। যেমন বাত কিংবা কোমরের ‘ফ্যাসেট জয়েন্ট’-এ সমস্যা হওয়ায় অনেকে ব্যথা-বেদনায় কষ্ট পান। মস্তিষ্ক-সহ শরীরের বিভিন্ন অংশে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়লে তার জন্যও তীব্র যন্ত্রণা সহ্য করতে হয় রোগীকে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ওষুধ দিয়েও ঠিক মতো কাজ হয় না।
শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালের ক্যানসার শল্য-চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ক্যানসারের ক্ষেত্রে এই যন্ত্র শুধু যে যন্ত্রণাকে কমিয়ে দেয় তা-ই নয়, কিছু ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত লাভজনক। হয়তো যকৃৎ বা ফুসফুসে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়েছে, কিন্তু অস্ত্রোপচার অথবা অন্য কিছুই করা যাচ্ছে না। এমন রোগীরা ব্যথা উপশমের পাশাপাশি বেশি দিন বাঁচতেও পারবেন। পিজি-তে বিনামূল্যে এই চিকিৎসা মিলবে, এটা খুবই ভাল।’’ আবার মহিলাদের ঋতুস্রাবের সময়ে জরায়ু থেকে যে রক্তক্ষরণ হয়, তা যোনিপথ দিয়ে শরীরের বাইরে বেরিয়ে যায়। কিন্তু কারও ক্ষেত্রে স্বাভাবিক নিয়মে তা না হয়ে রক্ত পেটের ভিতরে বিভিন্ন অঙ্গে, ডিম্বাশয়েও জমা হয়। ফলে ঋতুস্রাবের সময় তো বটেই, অন্য সময়েও তীব্র যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়। পিজির স্ত্রী-রোগ বিভাগের প্রধান চিকিৎসক সুভাষ বিশ্বাস বলেন, ‘‘এন্ডোমেট্রিয়োসিস-এর সমস্যায় মহিলাদের তলপেটে অসম্ভব যন্ত্রণা হয়। ওষুধেও কাজ হয় না। ‘আরএফএ’-র মাধ্যমে সেই কষ্ট লাঘব করা সম্ভব।’’ নতুন এই যন্ত্রের দ্বারা স্নায়ুকে যেমন অবশ করা যাবে, তেমনই পা কিংবা হাতের কোনও ধমনীতে সমস্যার জন্য যন্ত্রণা বা অন্য উপসর্গ তৈরি হলে তারও উপশম করা সম্ভব বলে জানাচ্ছেন রাজেশবাবু।