তিন হাসপাতাল ঘুরে চিকিৎসা শুরু সাত ঘণ্টায়

কোন্নগরের ধাড়সার বাসিন্দা, পেশায় প্লাস্টিক কারখানার কর্মী আব্দুল রহমান জানান, বুধবার সকাল ন’টা নাগাদ কাজ করার সময়ে আচমকা তাঁর ডান হাত যন্ত্রের মধ্যে ঢুকে যায়। বুড়ো আঙুল বাদে হাতের সব ক’টি আঙুল এবং তালু ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:১০
Share:

তখনও শয্যা মেলেনি। বুধবার, এসএসকেএমের বহির্বিভাগের সামনে অপেক্ষায় আব্দুল রহমান। নিজস্ব চিত্র

প্লাস্টিকের খেলনা তৈরি করার যন্ত্রে ৭২ বছরের বৃদ্ধের হাত ঢুকে গিয়েছিল। যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সেটা পেতে লেগে গেল প্রায় সাত ঘণ্টা! উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতাল, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, এসএসকেএম এবং এসএসকেএমের অ্যানেক্স শম্ভুনাথ পণ্ডিত ঘুরে দিনের শেষে বৃদ্ধ শয্যা পেলেন পুলিশ হাসপাতালে।

Advertisement

কোন্নগরের ধাড়সার বাসিন্দা, পেশায় প্লাস্টিক কারখানার কর্মী আব্দুল রহমান জানান, বুধবার সকাল ন’টা নাগাদ কাজ করার সময়ে আচমকা তাঁর ডান হাত যন্ত্রের মধ্যে ঢুকে যায়। বুড়ো আঙুল বাদে হাতের সব ক’টি আঙুল এবং তালু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তড়িঘড়ি বৃদ্ধকে উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখান থেকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখান থেকে আবার রোগীকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় এসএসকেএমে। বৃদ্ধের ছেলে আব্দুল সাবিরের কথায়, ‘‘কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকেরা বলেন, হাত বাঁচাতে হলে বাবাকে এসএসকেএমে নিয়ে যেতে হবে।’’

সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ বৃদ্ধকে নিয়ে প্রথমে এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ারে পৌঁছন পরিজনেরা। সেখান থেকে তাঁরা যান জরুরি বিভাগে। রহমানের সহকর্মী সঞ্জয় সিংহ জানান, জরুরি বিভাগ থেকে এক্স-রে করিয়ে প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। সঞ্জয় বলেন, ‘‘ক্ষতস্থান দেখে চিকিৎসকেরা বলেন, রোগীকে ভর্তি করুন। দেখি হাত বাঁচাতে পারি কি না।’’ কিন্তু শয্যা না থাকায় রোগীর পরিজনেদের অপেক্ষা করতে বলে জরুরি বিভাগ। পরিজনেরা জানান, বেলা ১১টা থেকে ২টো পর্যন্ত অপেক্ষা করার পরে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল অথবা নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রহমানকে রেফার করে দেওয়া হয়।

Advertisement

তখন আর হাসপাতালে হাসপাতালে ঘোরার শক্তি ছিল না বৃদ্ধের। এসএসকেএমের বহির্বিভাগ টিকিট কাউন্টারের দাওয়ায় বসে পড়েন তিনি। ৩টে নাগাদ সুপার রঘুনাথ মিশ্রের ঘরে যান রোগীর অসহায় পরিজনেরা। সব শুনে তাঁদের সামনেই ফোন করে রহমানকে শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে ভর্তির জন্য বলে দেন সুপার। রোগীর পরিজনেদের অভিযোগ, সেখানেও শয্যা নেই জানিয়ে ফের রেফার করা হয় পুলিশ হাসপাতালে। এ দিন বৃদ্ধের প্রতিবেশী পান্নালাল মণ্ডল বলেন, ‘‘৫টা নাগাদ পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি নিলেও চিকিৎসকেরা বলেছেন, রক্তক্ষরণ হচ্ছে। পারলে অন্যত্র যান।’’

অন্য এক সরকারি হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জনের বক্তব্য, ‘‘থেঁতলানো আঘাতের ক্ষেত্রে আঙুলে রক্ত সঞ্চালন ঠিক থাকলে ভাল। নইলে যত দ্রুত সম্ভব ক্ষতস্থানের যে অংশে রক্তসঞ্চালন ব্যাহত হয়েছে, সেখানে পুনরায় রক্তসঞ্চালন ফেরানোর ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু এ ধরনের ঘটনায় যেহেতু একাধিক আঘাত থাকে, তাই অস্ত্রোপচার করা বেশ জটিল।’’ বেসরকারি হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জন অনুপম গোলাস বলেন, ‘‘আঙুলে রক্ত সঞ্চালন আছে কি না দেখতে হবে। তালুর ক্ষত কত গভীর, তা-ও দেখা দরকার। তবে সবার আগে জরুরি চিকিৎসা।’’

এসএসকেএমের সুপার রঘুনাথ মিশ্র বলেন, ‘‘কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে এসএসকেএমে পদ্ধতি মেনে রেফার করা হয়নি। এখানে জরুরি বিভাগ থেকে প্লাস্টিক সার্জারিতে যাওয়ার পরে ড্রেসিং করে দেওয়া হয়েছিল। অ্যান্টিবায়োটিকও দেওয়া হয়। এর পরে প্রয়োজন ছিল রোগীকে ভর্তি করে চিকিৎসার। আমাদের একেবারেই শয্যা না থাকায় একটু সমস্যা হয়েছিল। বিষয়টি জানার পরে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশ হাসপাতালও এখন এসএসকেএমের অন্তর্গত। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এলে অস্ত্রোপচার করা হবে। রোগীর হাত বাঁচানোর চেষ্টাই হচ্ছে। শয্যা খালি হলে রোগীকে এসএসকেএমে আনা হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement