এ বার ভাইকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে আদালতের দ্বারস্থও হয়েছেন প্রকাশ। প্রতীকী চিত্র
দার্জিলিং থেকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল তাঁকে। সেটা ১৯৮১ সাল। কাকে খুন, কেন-ই বা খুন, সেই দলিল-দস্তাবেজে এত দিনে ধুলোর পুরু আস্তরণ জমেছে। তার পর থেকে জেলের ঘুপচি সেলই ঠিকানা বছর পঁচাত্তরের দীপক জোশীর। জেলের খাতায় এখনও তাঁর নামের পাশে লেখা ‘বিচারাধীন বন্দি’। অথচ গত ৩৯টা বছরে কেউ তাঁর খোঁজটুকুও নেয়নি। পরিবারের কাছেও তিনি ছিলেন ‘মৃত’। এত দিনে খোঁজ পেয়ে গত সোমবার জেলে গিয়ে নেপালের বাসিন্দা দীপকের সঙ্গে দেখা করেছেন তাঁর খুড়তুতো ভাই প্রকাশচন্দ্র শর্মা তিনসিনা। আর তার পরে দীপককে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন প্রকাশচন্দ্র।
দার্জিলিং থেকে গ্রেফতার হওয়ার পরে প্রথমে দীপকের ঠিকানা ছিল দার্জিলিঙের জেল। সেখান থেকে ২০০৫ সালে তাঁকে নিয়ে আসা হয় দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে। পরিবারের লোকজন প্রথমে তাঁকে নিখোঁজ এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মৃত বলেই ধরে নিয়েছিলেন। তাই এত দিন পরে জেলের মধ্যে ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হওয়ার সেই সময়টুকু রীতিমতো আবেগঘন ছিল বিচারাধীন ওই বন্দির কাছে। জেলের আধিকারিকেরাই জানিয়েছেন, এত বছর পরে ভাইকে দেখে তাঁকে জড়িয়ে ধরে হাউহাউ করে কেঁদে হালকা হয়েছেন বৃদ্ধ দীপক। খোঁজখবর নিয়েছেন পরিজনেদের। তাঁর আইনজীবী হীরক সিংহ বলেন, ‘‘এত বছর পরে দেখা, প্রথমে কিছুই মনে করতে না পারলেও পরে ভাইকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকেন দীপক।’’
এ বার ভাইকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে আদালতের দ্বারস্থও হয়েছেন প্রকাশ। মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টে একটি হলফনামাও দাখিল করেছেন তাঁর আইনজীবীরা। বুধবার প্রধান বিচারপতি টি বি রাধাকৃষ্ণন এবং বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ দীপকের ভাইয়ের দেওয়া হলফনামার পরিপ্রেক্ষিতে নেপাল দূতাবাসকে আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা পেশ করার নির্দেশ দিয়েছে।
দীর্ঘ ৩৯ বছর ধরে বিচারাধীন বন্দি হিসেবে দীপকের কারাগারে থাকার খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল গত নভেম্বর। সেই খবরে চমকে উঠেছিলেন রাজ্যের কারা বিভাগের আধিকারিকেরা। চমক লেগেছিল বিচারকেরও। তার পরেই ওই বন্দির বাড়ির খোঁজ পেতে উঠেপড়ে লাগেন হ্যাম রেডিয়োর সদস্যেরা। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের পরিপ্রেক্ষিতে দমদম জেলে দীপকের জন্য মনোরোগ চিকিৎসকদের একটি দল পাঠান ওয়েস্ট বেঙ্গল লিগাল এড সার্ভিসের তৎকালীন চেয়ারম্যান, বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন এত দিন ধরে দীপক শুধুমাত্র বিচারাধীন বন্দি হয়ে রইলেন, তা নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা করে কলকাতা হাইকোর্ট। নেপাল দূতাবাসকেও নোটিস পাঠানো হয়। হ্যাম রেডিয়োর সদস্য তথা ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস বলেন, ‘‘নন্দীগ্রাম-কাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া রাধেশ্যাম দাস ১০ বছর দীপক জোশীর সহবন্দি ছিলেন। জামিনে জেল থেকে বেরিয়ে তিনিই প্রথম সব ফাঁস করেন। তার পরে আমরা নেপাল দূতাবাস এবং রাজ্য কারা দফতরকে ইমেল করে ঘটনাটির কথা জানাই।’’
নেপাল দূতাবাসের কনসাল জেনারেল এশর রাজ পৌডেল বলেন, ‘‘ওই বন্দির পরিজনদের খুঁজে পেতে হ্যাম রেডিয়ো অনেকটাই সাহায্য করেছে। নেপালের ইলাম জেলার একাতাপ্পা গ্রাম থেকে দীপকের ভাই প্রকাশচন্দ্র কলকাতায় এসেছেন। আমরাও দেখছি কী ভাবে আইনমাফিক ওই বিচারাধীন বন্দিকে বাড়ি ফেরানো যায়।’’