পুজোমণ্ডপ লাগোয়া চাউমিন, বিরিয়ানি, রোল বিক্রেতারা সাবধান! খাবারে ভেজাল এবং কোনও ক্ষতিকারক রাসায়নিক মেশানো হলেই ধরবেন পুরসভার ফুড ইনস্পেক্টরেরা। আর এই খাবার বিক্রেতারা কেউ ভেজাল বা রাসায়নিক ব্যবহার করছেন কি না, তা দেখতে মহাষষ্ঠী থেকে পুজোর ক’দিন মণ্ডপ এলাকা জুড়ে অভিযান চালাবে পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের ভেজাল প্রতিরোধ বাহিনী। দর্শনার্থীদের স্বাস্থ্যের কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানান মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ।
পুজোর শহরে বাসিন্দাদের স্বাচ্ছন্দ্য দিতে এ বার তৈরি কলকাতা পুরসভার পরিষেবা মূলক প্রতিটি দফতর। যেমন, পুজোর সময়ে শহরকে পরিষ্কার রাখতে ইতিমধ্যেই একাধিক কর্মসূচি নিয়েছে জঞ্জাল অপসারণ দফতরও। এক সময়ে শহর জুড়ে নানা স্থানে উপচে পড়া ভ্যাটের দুর্গন্ধে টিকতে পারতেন না অনেকেই। সে সব এখন ‘প্রায়’ অতীত। শহর জুড়ে গোটা পঞ্চাশেরও বেশি আধুনিক কম্প্যাক্টর মেশিন বসেছে। তবুও শহরের কিছু এলাকায় ঘরবাড়ি এবং রাস্তার পাশে জমা জঞ্জাল সময় মতো কম্প্যাক্টর স্টেশনে ফেলার কাজে ‘ঢিলেমি’ রয়েই যাচ্ছে। পুজোর মধ্যে যাতে ওই কাজে এতটুকু গাফিলতি না হয়, তাই পুরসভার সাফাই কর্মীদের সজাগ থাকার বার্তা শুনিয়ে দিয়েছে পুর-প্রশাসন। শুক্রবার দফতরের মেয়র পারিষদ দেবব্রত মজুমদার জানান, পুরসভার স্থায়ী কর্মী ছাড়াও ১৫ হাজারের মতো ১০০ দিনের কর্মী আছেন। প্রতিটি ওয়ার্ডের জঞ্জাল ঠিক মতো সাফাই করতে বলা হয়েছে তাঁদের। আর কাজ ঠিক করে হচ্ছে কি না, তা দেখে নেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের। দফতরের পদস্থ অফিসারেরাও পুজোর সময়ে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখবেন বলে জানান দেবব্রতবাবু। এ ছাড়া, শহরের কোনও এলাকায় সময়ে জঞ্জাল পরিষ্কার না হলে বাসিন্দাদের তা সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলর বা পুরসভার কন্ট্রোলরুমে জানাতে বলা হয়েছে।
পুজোর মুখে সবচেয়ে ‘অস্বস্তি’তে রয়েছে পুরসভার নিকাশি দফতর। এ বার ঘোর বর্ষায় শহর কলকাতা তেমন ভাবে জলমগ্ন হয়নি বলে দাবি খোদ মেয়রের। তবে অতীতে দু’তিন দিন ধরে জল জমে থাকার সমস্যা এখন অমিল হলেও এ বারও কিন্তু ঘণ্টায় ৫০-৭০ মিলিমিটার বৃষ্টিতে শহরের একটা বড় অংশ ঘণ্টাকয়েক জলমগ্ন থেকেছে। যা স্তব্ধ করেছে শহরের স্বাভাবিক জনজীবন। এ ছাড়া, পুজোর সময়ে আবহাওয়া যে নির্বিঘ্ন থাকবে, এমন আশার বাণী এখনও শোনাননি আবহাওয়াবি দেরা। তাই পুজোর ক’দিন কপালে ভাঁজ নিয়ে থাকতে হচ্ছে নিকাশি দফতরের মেয়র পারিষদ তারক সিংহ এবং তাঁর দলবলকে। এ দিন তিনি জানান, নিকাশি দফতরের অফিসার-কর্মী সকলেই প্রস্তুত রয়েছেন পুজোর ক’দিনের জন্য। বিভিন্ন এলাকার নিকাশির পাম্পিং স্টেশনগুলিকেও তৈরি রাখা হয়েছে। এ মুহূর্তে শহরে সাড়ে তিনশো পাম্প রয়েছে জল টানার জন্য। বৃষ্টি হলেই যাতে দ্রুত জল বার করে দেওয়া যায়, তা নিশ্চিত করার সব ব্যবস্থাই রয়েছে বলে দাবি তারকবাবুর। এ ছাড়া, কন্ট্রোল রুমও খোলা থাকছে সব সময়ে।
একই সঙ্গে পুজোর ক’দিন ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়াবাহী মশার নিধনের কাজও বজায় রাখছে পুরসভা। অতীনবাবু জানান, পুজোয় বাইরে থেকে লক্ষ লক্ষ লোক কলকাতায় আসেন। ঘোরাঘুরিও করেন। কেউ কেউ ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়াবাহী জীবাণু বহন করে আনতেই পারেন। এ সময়ে আবার ওই দুই রোগ ছড়ানোর প্রবণতা বেশি থাকে। তাই স্বাস্থ্য কর্মীদের পাশাপাশি মশার লার্ভা মারার কাজও জোর কদমে চালাবে স্বাস্থ্য রাপিড অ্যাকশন ফোর্স। অতীনবাবু জানান, পুরসভার মশক নিবারণী (ভেক্টর কন্ট্রোল) দফতর পুরো খোলা থাকবে এবং ওই দুই রোগের চিকিৎসার জন্য নির্দিষ্ট ২৬টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র খোলা থাকবে পুজোতেও। তবে শহরের মোট ৮টি ডেঙ্গি নির্ণয় কেন্দ্রের মধ্যে খোলা থাকবে চারটি।
এ দিকে, পুজো কমিটিগুলিকেও জঞ্জাল অপসারণ, মশার বংশবৃদ্ধি রোধে সজাগ থাকার জন্য অনুপ্রাণিত করতে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছে একাধিক বরো। শুক্রবার, মহালয়ার দিন থেকেই উত্তর ও পুর্ব কলকাতার তিন নম্বর বরোর প্রতিটি ওয়ার্ডের পুজো কমিটিগুলিকে ওই কাজে তৎপর করতে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বরো চেয়ারম্যান অনিন্দ্য রাউত জানান, পুজো কমিটিগুলিও পুরসভার কাজে সহায়তা করবে বলে জানিয়েছে।