(বাঁ দিকে) বাগজোলা খালে চলছে তল্লাশি। বাংলাদেশের সাংসদ আনোয়ারুল (ডান দিকে)। — নিজস্ব চিত্র।
বাংলাদেশের সাংসদ খুনের ঘটনায় সোমবার ভাঙড়ের কাছে বাগজোলা খালে তল্লাশি চালাল ভারতীয় নৌসেনা। এর আগেও সেখানে তল্লাশি চালানো হয়েছিল। সেটা চালিয়েছিল সিআইডি। কিন্তু বাংলাদেশের সাংসদ আনোয়ারুল আজিমের দেহাংশ সেখানে মেলেনি। তাই এ বার ভারতীয় নৌসেনার কাছে সাহায্য চেয়েছিল সিআইডি। সেই মতো সোমবার ভারতীয় নৌসেনার তিন জনের একটি প্রতিনিধি দল এবং সিআইডি একটি দল ওই খালে তল্লাশি করে। যদিও কিছু মেলেনি।
অভিযোগ, বাংলাদেশের ঝিনাইদহের সাংসদকে খুনের পর দেহ টুকরো করা হয়েছে। তার পর তা লোপাট করা হয়। তদন্তকারীদের অনুমান, বাগজোলা খালে ফেলা হতে পারে টুকরো। এর আগে আনোয়ারুলের দেহাংশের খোঁজে সাতুলিয়া ও কৃষ্ণমাটি এলাকায় বাগজোলা খালে তল্লাশি চালিয়েছিল সিআইডির বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। সাংসদ খুনের ঘটনায় ধৃত জিহাদ হাওলাদার ওরফে জ়ুবেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিআইডি অফিসারেরা সেই তথ্য জানতে পেরেছিলেন। বেশ কয়েক বার সেখানে অভিযান চালানোর পরও কিছু মেলেনি। তার পরেই ভারতীয় নৌসেনার সাহায্যে চায় সিআইডি।
এর আগে নিউ টাউনের ফ্ল্যাটের সেপটিক ট্যাঙ্ক এবং বর্জ্য যাওয়ার পাইপলাইন থেকে মাংসের টুকরো, মাথার চুল উদ্ধার করেছিল সিআইডি। সেগুলি ওই সাংসদের কি না, তা পরীক্ষা করতে উদ্যোগী হয়েছিল তারা। সিআইডির কাছে সেপটিক ট্যাঙ্কে তল্লাশি চালানোর জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলেন বাংলাদেশের গোয়েন্দাপ্রধান হারুন অর রশিদ। সাংসদ খুনে বাংলাদেশে ধৃত তিন জন এবং পশ্চিমবঙ্গে ধৃত জ়ুবেরকে জেরা করে এমনটাই সন্দেহ হয়েছিল হারুনের। তিনি কলকাতায় এসে তদন্তও চালিয়েছিলেন।
সিআইডি জেনেছে, বাল্যবন্ধু আখতারুজ্জামান শাহিনের সঙ্গে সোনার ব্যবসা করতেন আজিম। তদন্তকারীদের একাংশ মনে করছেন, ব্যবসায়িক লেনদেনের কয়েক কোটি টাকা আটকে ছিল শাহিনের। সেই নিয়ে আজিমের উপরে শাহিনের ক্ষোভ ছিল। মনে করা হচ্ছে, প্রতিহিংসার কারণেই নিখুঁত ছক কষে কলকাতায় ডেকে সাংসদকে ‘খুনের’ পরিকল্পনা করেন শাহিন। তবে এখনও ধোঁয়াশা রয়েছে দু’দেশের তদন্তকারীদের মনে। সাংসদের দেহ টুকরো করার কাজে ব্যবহৃত ছুরি-কাঁচির হদিস মেলেনি। এই খুনে বাংলাদেশ থেকে তিন জন এবং কলকাতা থেকে এক জন গ্রেফতার হলেও আরও চার জন অভিযুক্ত শাহিন, সিয়াম, ফয়জল এবং মুস্তাফিজুর এখনও অধরা। তাঁদের খোঁজ পেতে ইন্টারপোলের সাহায্য নেওয়া হতে পারে। তদন্তকারীদের ধারণা, শাহিন আমেরিকায় এবং সিয়াম নেপালে পালিয়েছেন। বাকি দু’জন বাংলাদেশে থাকতে পারেন।
‘সুপারি কিলার’ শিমুল ভুঁইয়াকে খুনের জন্য শাহিন নিয়োগ করেন বলে তদন্তে উঠে এসেছে। এই শিমুলই আমানুল্লা আমান নামে জাল পাসপোর্ট নিয়ে কলকাতায় এসে ঘাঁটি গেড়েছিলেন। শিমুলের আবার বহুমাত্রিক পরিচয়। তিনি মাওবাদী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সেখান থেকে কালক্রমে ‘খুলনার ত্রাস’ এবং ‘সুপারি কিলার’-এ পরিণত হন বলে পুলিশের দাবি। শিমুল বাংলাদেশে একাধিক খুনের মামলায় অভিযুক্ত। তবে ১০ বছরেরও বেশি সময় তাঁর হদিস ছিল না। ২০১৯ নাগাদ নিজের নাম বদলে তিনি আমানুল্লা নামে পাসপোর্ট তৈরি করেন। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, শিমুলের এক আত্মীয় বাংলাদেশে ‘প্রভাবশালী’ সরকারি অফিসার। সরকারি যোগসাজশ কাজে লাগিয়েই তিনি ওই ভুয়ো পাসপোর্ট তৈরি করান বলে তদন্তকারীদের সন্দেহ। ওই পাসপোর্ট নিয়েই সাংসদ খুনের দু’সপ্তাহ আগে এ রাজ্যে ঢোকেন শিমুল ওরফে আমানুল্লা। খুনের পরে ১৫ মে তিনি বাংলাদেশে ফিরে যান। পরে এ রাজ্যের তদন্তকারীদের তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশ পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। তখনই বোঝা যায়, আমানুল্লা এবং শিমুল আদতে একই ব্যক্তি।