জনহীন: বাজেট ঘোষণার পরে ক্রেতার দেখা নেই সোনার দোকানে। বুধবার, বৌবাজারে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।
এ যেন গোদের উপরে বিষফোঁড়া!
সোনার দাম চড়া ছিল এমনিতেই। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাজেটের নয়া ঘোষণায় বিয়ের মরসুমে আরও শক্ত হল সেই ফাঁস! শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণায় এক ধাক্কায় আরও মহার্ঘ হল সোনা। বাজেটে কর ছাড়ের ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানোর ঘোষণা মধ্যবিত্তের হাসি চওড়া করলেও হতাশ করেছে বিয়ের মরসুমে সোনার দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা। এর ফলে ক্রেতাদের পকেটে যেমন টান পড়তে চলেছে, তেমনই বাড়ছে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের আশঙ্কাও।
বুধবার কেন্দ্রীয় বাজেটে সোনার শুল্ক বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জানিয়েছেন, সোনার বারের আমদানি শুল্ক বাড়বে। ফলে আকাশছোঁয়া দামে সোনার গয়না কিনতে ক্রেতাদের পকেটে আরও টান পড়বে বলেই জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীদের একাংশ। তাই বিয়ের মরসুমে বাজেটের এই ঘোষণা চিন্তা বাড়াচ্ছে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের।
এমনিতেই গত কয়েক সপ্তাহে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে সোনার দাম। এ দিন কলকাতার বাজারে ১০ গ্রাম পাকা সোনার (২৪ ক্যারাট) দাম ছিল ৫৮,৫৫০ টাকা। ১০ গ্রাম গয়না সোনার (২২ ক্যারাট) দাম ছিল ৫৫,৫৫০ টাকা। বাজেটের ঘোষণার পরে এই দাম আরও কতটা বাড়বে, এখনই নির্দিষ্ট করে ব্যবসায়ীরা জানাতে না পারলেও দাম তা ৬০ হাজার ছুঁইছুঁই হতে পারে বলেই মনে করছেন অনেকে। যা কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলছে মধ্যবিত্তের।
এ দিন বাজেট শুনেই সোনার দাম বৃদ্ধির আশঙ্কায় আগেভাগে বাড়ির বিয়ের কেনাকাটা করতে বৌবাজারে এসেছিলেন মানিকতলার শ্যামল শিকদার। দোকানে গয়না দেখতে দেখতে বললেন, ‘‘ভেবেছিলাম, বাজেটে সোনার দামে কিছুটা ছাড় দেওয়া হবে। সে জন্য কিছু দিন ধরে অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু এখন দেখছি, সে সব তো কিছুই হল না, বরং বাজেটের ঘোষণায় উল্টোটাই হচ্ছে। তাই তড়িঘড়ি সোনা কিনতে চলে এলাম।’’
তবে শুধু ক্রেতারাই নন, এ দিনের বাজেটের ঘোষণা চিন্তা বাড়িয়েছে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদেরও। বৌবাজারের এক সোনা ব্যবসায়ী পলাশ পাল বললেন, ‘‘এমনিতেই গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সোনার ব্যবসার হাল খারাপ। দোকানে ক্রেতা প্রায় দেখাই যাচ্ছিল না। এ যা হল, তাকে বলা ভাল কফিনে শেষ পেরেক পুঁতে দিল। গোটা শিল্পটাই হয়তো শেষ হয়ে যাবে।’’
একই আশঙ্কার কথা শোনালেন শহরের এক স্বর্ণ বিপণি সংস্থার বৌবাজার শাখার ম্যানেজার প্রণব চন্দ্র। তাঁর কথায়, ‘‘সকলের পক্ষে এত দাম দিয়ে সোনা কেনা সম্ভব নয়। উপহার হিসাবে সোনা দেওয়ার রেওয়াজ এ বার কমবে বলেই মনে হচ্ছে।’’ ‘স্বর্ণশিল্পী বাঁচাও কমিটি’র কার্যকরী সভাপতি বাবলু দে বললেন, ‘‘যে কোনও কেনাকাটারই একটা নির্দিষ্ট টাকা বরাদ্দ থাকে। দাম বাড়লে হয় সেই বরাদ্দ বাড়বে, আর না-হলে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকাতেই কম পরিমাণ সোনা কিনবেন ক্রেতা। আবার সাধারণের ক্রয়ক্ষমতা কমলে কারিগরদের কাজ হারানোর আশঙ্কাও বাড়বে। ফলে সমস্যায় পড়লেন স্বর্ণশিল্পের সঙ্গে যুক্ত হাজার হাজার কর্মী।’’