LGBTQ

Independence Day 2022: পঁচাত্তর পেরিয়েও তৃতীয় লিঙ্গ ঠাঁইহারা সরকারি চাকরির ফর্মে

শরীরে পুরুষ চিহ্ন নিয়ে জন্মালেও মননে-চেতনায় কোনও দিন নিজেকে পুরুষ মানেনি দিশা। মেয়েদের পোশাকেই স্বচ্ছন্দ সে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২২ ০৭:১১
Share:

সগর্বে: শহরের পথে প্রাইড মার্চ। ফাইল চিত্র

আজকাল গর্বিত বা আনন্দিত হওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে কোথায়? চারদিকে আঁধার। তারই মধ্যে কেউ কেউ নিভন্ত আশার আগুনকে ভালবাসার জোরে উস্কে দিতে লড়ে যাচ্ছেন।

Advertisement

দিনকয়েক আগের কথা। পাচারের শিকার এক রূপান্তরকামী কন্যাকে এক দিনের জন্য এ রাজ্যে শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন করে বসানো হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল, তারই মুখ থেকে অতীত অভিজ্ঞতা সকলকে শোনানো এবং কমিশনের চেয়ারপার্সন হিসাবে সে কী ভাবে এই সমস্যাগুলোর প্রতিকার করতে চাইবে, তার দিশা খোঁজা। রূপান্তরকামী শিশুদের নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির এমন পদক্ষেপ, দেশে প্রথম কোনও রাজ্যের শিশু সুরক্ষা কমিশন করল। না-হলে তো ট্রান্সজেন্ডার, তৃতীয় লিঙ্গ— শব্দগুলির উচ্চারণে তথাকথিত শিক্ষিত মহলও থাকে শীতল নীরব।

শরীরে পুরুষ চিহ্ন নিয়ে জন্মালেও মননে-চেতনায় কোনও দিন নিজেকে পুরুষ মানেনি দিশা। মেয়েদের পোশাকেই স্বচ্ছন্দ সে। এই ‘মেয়েলি’ স্বভাবের কারণে কৈশোর পেরোনোর আগেই চরম পারিবারিক নিগ্ৰহে বাড়িছাড়া হতে হয় তাকে। আশ্রয়ের খোঁজে হাতবদল হয়ে দিশার ঠাঁই হয় লগনের নাচের দলে। বিয়ে বা অন্যান্য অনুষ্ঠানে টাকার বিনিময়ে পুরুষদের মনোরঞ্জনে এটি প্রচলিত চটুল নাচের প্রথা। এই ‘ডান্সওয়ালি’ মেয়েদের সঙ্গে প্রলুব্ধ দর্শক কেমন আচরণ করেন, তা অনুমেয়। সুরক্ষিত শৈশব পেয়েছেন যাঁরা, তাঁরা কল্পনাও করতে পারবেন না সেই ভয়াবহতা। তবে দিশা সেখান থেকে পালিয়ে এখন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের হোমে আছে।

Advertisement

আর যে রূপান্তরকামী ছেলেমেয়েরা শিক্ষা এবং অন্যান্য যোগ্যতায় পাঁচ জনের সঙ্গে টক্কর দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন, তাঁদের অবস্থাই বা কী?

সোনারপুরের রূপান্তরকামী কন্যা কুন্তল ওরফে আহিরী। পদার্থবিদ্যায় স্নাতকোত্তর করে গবেষণার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। রূপান্তরকামী হওয়ার অপরাধে শৈশব থেকেই তাঁর উপরে সামাজিক নিপীড়ন চলে। সে সবের সঙ্গে লড়তে লড়তে বছর তেইশের আহিরী ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশনের শিকার। বাড়ি থেকে তাঁকে বলে দেওয়া হয়েছে, রাস্তা খুঁজে নিতে। চাকরিটা ওঁর বড্ড জরুরি। অথচ মেধাবী ছাত্রী হয়েও রূপান্তরকামী বলে টিউশনিও মিলছে না। নেট পরীক্ষায় আহিরী যদি ভাল ফলও করেন, সাক্ষাৎকার-পর্বে নাকচ হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। সেই প্রমাণ অন্য চাকরির পরীক্ষা দিতে গিয়েই পেয়েছেন আহিরী।

অয়ন বা অনুরূপা পেশায় ল্যাব টেকনোলজিস্ট। কাঁচরাপাড়া রেল হাসপাতালে প্যাথলজি বিভাগে চুক্তিভিত্তিক চাকরি করছিলেন। কিন্তু অফিশিয়াল নথিতে নাম এবং লিঙ্গ পরিবর্তন পদ্ধতির মাঝপথেই চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে তাঁকে। তাঁর চুক্তি নবীকরণ হবে কি না, নিশ্চয়তা নেই। কারণ ওই হাসপাতালে তৃতীয় লিঙ্গের জন্য বিকল্প নেই। সব যোগ্যতা সত্ত্বেও স্বাস্থ্য দফতরে নিয়োগের পরীক্ষায়ও বসতে পারছেন না। কারণ, ফর্মে ‘আদার ক্যাটাগরি’ নেই। স্বাস্থ্য ভবনে বার বার বিষয়টি জানিয়েও উত্তর মেলেনি। আপাতত অনুরূপা কর্মহীনা। পুজোর আগে বেসরকারি হাসপাতালেও কাজের আশা নেই।

কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ম অনুযায়ী, রূপান্তরকামীদের ক্ষেত্রে সব পরিচয়পত্রে নাম ও লিঙ্গ পরিবর্তন এবং অন্য অগ্রাধিকার পেতে আবশ্যিক ‘ট্রান্সজেন্ডার আইডেন্টিটি কার্ড’। ওই কার্ডের জন্য অনলাইনে আবেদনের এক মাসের মধ্যে তা প্রাপকের কাছে চলে আসতে হবে, এমনই নির্দেশ আছে ‘ট্রান্স প্রোটেকশন আইনে’। অথচ এ রাজ্যে ট্রান্সজেন্ডার পরিচয়পত্রের জন্য আবেদন করে মাসের পর মাস হত্যে দিয়ে বসে অসংখ্য রূপান্তরকামী মানুষ। সরকারের দুয়ারে ঘুরেও মেলে না সুরাহা।

স্বাধীনতার ৭৫ বছর উদ্‌যাপনে মেতেছে গোটা দেশ। কিন্তু স্বাধীনতার জন্য আমাদের অপেক্ষা আর কত দীর্ঘ হবে? তবুও আহিরী, দিশা, অনুরূপারা প্রদীপটি জ্বেলে রেখেছেন, ওঁদের আলো নিয়েই জ্বলে উঠুক অনেক আলো!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement