খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বহিরাগতদের সম্পর্কে তথ্যভাণ্ডার তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু নির্দেশই সার, দু’বছর পার করেও সেই তথ্যভাণ্ডার তৈরির কাজ শেষ করতে পারল না বিধাননগরের প্রশাসন। বর্ধমান কাণ্ডের পরে তাদের সেই ব্যর্থতা নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠেছে। প্রশাসনের অবশ্য দাবি, কাজ চলছে। এলাকার বাসিন্দারা যদিও বলছেন, পুলিশ-প্রশাসনের একার পক্ষে এ কাজ দ্রুত শেষ করা সম্ভব নয়। স্থানীয় ব্লক কমিটি বা প্রতিনিধিদের নিয়ে এ কাজ করার দাবিও জানান বাসিন্দারা।
বছর দুয়েক আগে সল্টলেকে প্রশাসনিক ভবনের দ্বারোদঘাটনে এসে তথ্যভাণ্ডার তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সে অনুযায়ী ভাড়াটে থেকে বহিরাগত সকলের সম্পর্কে তথ্যভাণ্ডার তৈরির কাজ শুরু করেছিল বিধাননগর কমিশনারেট। কিন্তু আজও সেই কাজ শেষ হয়নি।
অথচ কয়েক মাস আগেই সল্টলেক কমিশনারেটের কৈখালি এলাকা থেকে ধরা পড়েছিল বাংলাদেশের কুখ্যাত অপরাধী নূর হোসেন। ওই এলাকায় সে বেশ কিছু দিন ধরে বাড়ি ভাড়া করে বসবাস করছিল। এটা স্রেফ একটি উদাহরণ নয়, বাগুইআটির একটি হত্যার ঘটনাতেও বহিরাগতেরা যুক্ত ছিল। কার্যত কমিশনারেট এলাকায় কারা বাইরে থেকে এসে অস্থায়ী ভাবে বসবাস করছে, তাঁদের কর্মকাণ্ড কী সে সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য নেই পুলিশের কাছে।
পুলিশকর্তাদের অবশ্য দাবি, সল্টলেকে ভাড়াটেদের তথ্যভাণ্ডারের কাজ অনেকটাই হয়েছে। তবে পরিচারক-পরিচারিকাদের সম্পর্কে তথ্যের ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। তবে পুলিশ প্রশাসনের একাংশের কথায়, এত বড় এলাকায় এই তথ্যভাণ্ডার তৈরি করতে সময় লাগবেই। একা পুলিশ প্রশাসনের পক্ষে এই তথ্যভাণ্ডার তৈরি করা মুশকিল। ফলে আজ বললেই কাল এই কাজ করে ফেলা যাবে না।
মূল সল্টলেকে স্রেফ ভাড়াটেই নয়, প্রতিটি ব্লকেই বিভিন্ন বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডকে ঘিরে লক্ষাধিক মানুষ যাতায়াত করেন। পাশাপাশি দত্তাবাদ, সুকান্তনগর থেকে কুলিপাড়া, নয়াপট্টি থেকে বারোকপাটের মতো পিছিয়ে পড়া এলাকাও রয়েছে। যেখানে ভাড়াটে থেকে শুরু করে বহিরাগতের সংখ্যা বাড়ছে বলেই পুলিশ সূত্রের দাবি। কিন্তু সে সম্পর্কে কার্যত অন্ধকারেই প্রশাসন।
সল্টলেকের মতো রাজারহাট-নিউ টাউন, লেকটাউন, বাঙুর-দমদম পার্ক, বাগুইআটি, কৈখালি থেকে বিমানবন্দর এলাকাতেও প্রতিদিন বহিরাগতদের যাতায়াত এবং অস্থায়ী ভাবে বসবাসকারীদের সংখ্যা বাড়ছে বলেই প্রশাসনের দাবি। কিন্তু তাঁদের তথ্যেরও সে ভাবে জোগান নেই প্রশাসনের কাছে। অথচ একাধিক বার চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, হত্যা, জুয়ার আসর বসানোর মতো নানা অপরাধে বহিরাগতদের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। এমনকী অপরাধ জগতের সঙ্গে সঙ্গে যুক্ত বিদেশি নাগরিকেরাও এ সব এলাকায় ঘাঁটি গাড়ে বলে প্রমাণও পেয়েছে পুলিশ।
এত সব জানা সত্ত্বেও তথ্যভাণ্ডার তৈরির কাজ শেষ করা যায়নি। বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিপুল পরিমাণ এই তথ্য জোগাড় করা একা পুলিশের পক্ষে সম্ভব নয়। তেমন পরিকাঠামোই নেই তাঁদের কাছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের সংগঠন থেকে প্রতিনিধিদের যুক্ত না করে এই কাজ দ্রুত শেষ করা যাবে না। এ ব্যাপারে পুলিশের খামতির দিকে আঙুল তুলে সল্টলেকের একটি আবাসিক সংগঠনের কর্মকর্তা কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, “তথ্যভাণ্ডার তৈরি করার মতো পুলিশের পরিকাঠামো কোথায়? সে ক্ষেত্রে বাসিন্দাদের স্থানীয় সমিতিগুলির সহযোগিতা প্রয়োজন। বর্ধমানের মতো কাণ্ড ঘটে যাওয়ার পরে আশা করি প্রশাসন এ ব্যাপারে তৎপর হবে।”
বাসিন্দাদের যুক্তি কার্যত স্বীকার করে নিয়েছে পুলিশও। সল্টলেকের এক পুলিশকর্তার দাবি, তাঁদের যা পরিকাঠামো, তাতে ১০টি থানা এলাকা জুড়ে বিপুল তথ্য জোগাড় করতে সময় লাগবে। যদিও তিনি জানান, কাজ অনেকটাই এগিয়েছে, দ্রুত শেষ করতে উদ্যোগী হবে পুলিশ। সে ক্ষেত্রে প্রয়োজনে বাসিন্দাদের সহযোগিতাও নেওয়া হবে।