তাঁর রীতি ভেঙে পূর্ব ও উত্তর কলকাতা থেকে মুখ্যমন্ত্রী পুজো উদ্বোধন শুরু করছেন বলেও প্রশাসনিক সূত্রের খবর। ফাইল ছবি
পুজো শুরু হয়ে গিয়েছে! চলতি মাসের পয়লা তারিখে ইউনেস্কোর কর্তাদের সম্মানে আয়োজিত অনুষ্ঠানেই তা কার্যত ঘোষণা করে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, পুজোর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন মিটিয়ে মহালয়ার আগে পুজো মণ্ডপ খুলে দেওয়াও শুরু হচ্ছে। কাল, বৃহস্পতিবারই এই উদ্বোধন-পর্ব শুরু হওয়ার কথা।
মমতা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে মহালয়া থেকে পুজো শুরু হওয়াটাই অলিখিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। দেখা যাচ্ছে, এ বার আরও তিন দিন এগিয়ে এল উদ্বোধন-পর্ব। এবং এ যাত্রায় এত বছরের রীতি ভেঙে পূর্ব ও উত্তর কলকাতা থেকে মমতা পুজো উদ্বোধন শুরু করছেন বলেও প্রশাসনিক সূত্রের খবর। নবনির্মিত টালা সেতু উদ্বোধনের আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে মুখ্যমন্ত্রীর তিনটি পুজো উদ্বোধন করার কথা। দমকলমন্ত্রী তথা শ্রীভূমির পুজোকর্তা সুজিত বসু মঙ্গলবার বলেন, ‘‘কলকাতার প্রথম পুজো হিসাবে শ্রীভূমিই মুখ্যমন্ত্রী উদ্বোধন করছেন।’’
এখনও পর্যন্ত পুলিশ-প্রশাসনের কাছে যা খবর, মুখ্যমন্ত্রী পর পর শ্রীভূমি, সল্টলেকের এফডি ব্লক এবং টালা প্রত্যয়ের পুজো উদ্বোধন করবেন। এর পরে টালা সেতুর উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে চলে যাবেন তিনি। মঙ্গলবার স্থানীয় পুলিশ মুখ্যমন্ত্রীর আসার প্রাক্কালে ওই তিনটি পুজো মণ্ডপ পরিদর্শনে আসে। তবে মহালয়ারও তিন দিন আগে পুজো উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে ঠাকুর দেখাও শুরু হয়ে গেলে যানজটের জেরে দুর্ভোগে পড়বেন শহরবাসী। তাই বিষয়টি নিয়ে লালবাজার ও বিধাননগরের পুলিশের কর্তারা খানিক দুশ্চিন্তায়। বিশেষত, শ্রীভূমির পুজো ঘিরে প্রতি বছরই বিমানবন্দর থেকে শহরে ঢোকার রাস্তা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। তাই শ্রীভূমির পুজো মহালয়ারও তিন দিন আগে খুলে গেলে তা শহরের জীবনযাত্রায় কী চাপ ফেলতে পারে, তা নিয়ে অনেকেরই দুশ্চিন্তা রয়েছে।
শ্রীভূমি-কর্তা সুজিত অবশ্য যাবতীয় সমস্যার আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘লোকে আমাদের পুজো ভালবাসে। আর শ্রীভূমির পুজোর জন্য পুলিশি ব্যবস্থা বা স্বেচ্ছাসেবী মোতায়েন করা এখনই শুরু হয়ে গিয়েছে। উদ্বোধনের পরে চাপ বাড়লে কী করণীয়, তখন বুঝে নেব। এই নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।’’ গত বছরই শ্রীভূমির ‘লেজ়ার শো’ বাড়তি ভিড়ের চাপে অঘটনের আশঙ্কায় বন্ধ করে দিতে হয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, অষ্টমীর দিন ওই মণ্ডপে দর্শকের প্রবেশও বন্ধ করে দেওয়া হয়।
অন্য দিকে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই পুজোর থিমের বিশেষ প্রাক্-প্রদর্শনী দেখবেন ইউনেস্কো-কর্তা এবং বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতেরা। তাঁরা ২২টি থিম পুজো, দু’টি সাবেক পুজো এবং দু’টি পুরনো বাড়ির পুজোর প্রস্তুতিও দেখবেন। একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এ শহরের সীমিত সংখ্যক অতিথিকেও এই ‘প্রিভিউ শো’ দেখার ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এই উদ্যোগটির সঙ্গে জড়িত ধ্রুবজ্যোতি বসু (শুভ) বলছেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত ৪৫০০ অতিথিকে এই প্রিভিউ অনুষ্ঠান দেখার কিউআর কোড দেওয়া হয়েছে। ফোনে কিউআর কোড দেখিয়ে তাঁরা ঢুকতে পারবেন। তবে কলকাতার যান চলাচল ব্যবস্থার উপরে বাড়তি চাপ এড়িয়ে সীমিত দর্শনার্থীকে এই সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।’’
মহালয়ার তিন দিন আগে থেকে বিভিন্ন পুজো মণ্ডপ খুলে গেলেও যান চলাচল সুশৃঙ্খল রাখতে দরকারি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে লালবাজারের কর্তারাও আশ্বাস দিচ্ছেন। পুলিশের দাবি, ভিড় বাড়লে স্থানীয় থানা সামাল দেবে। পুজোর মূল পুলিশি ব্যবস্থা দেবীপক্ষের চতুর্থী থেকে চালু হবে।