জুনিয়র ও প্রিয়াঙ্কা— ফাইল চিত্র
খুনের মাস তিনেক আগে এক জনপ্রিয় টিভি শো-এ প্রিয়াঙ্কা চৌধুরীকে দেখে চমকে গিয়েছিলেন জুনিয়র মৃধার পরিবার। ২০০৮ সাল থেকে জুনিয়রের সঙ্গে প্রিয়াঙ্কা মেলামেশা করলেও, তিনি যে বিবাহিত তা বুঝতেই পারেননি কেউ। এক সন্ধ্যায় ‘পারিবারিক’ ওই টিভি শো-এ প্রিয়াঙ্কাকে শাঁখা-সিঁদুর পরে শ্বশুরবাড়ির বিষয়ে বলতে দেখেন তাঁরা। হতবাক হয়ে যান জুনিয়রের পরিবার। বিষয়টি জানার পর ধাক্কা সামলে উঠে পারেননি জুনিয়রও।
প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় হয়েছিল তরুণ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার জুনিয়র মৃধার। তার পর ঘনিষ্ঠতা বাড়ে ফুটবল কর্তার প্রাক্তন পুত্রবধূর। নিজের পরিচয় গোপন করেই চলছিল প্রেমপর্ব। বিষয়টি জানাজানি হতে শুরু হয় গোলমাল। জুনিয়রের বহু পারিবারিক অনুষ্ঠানেও আসতেন প্রিয়াঙ্কা ওরফে মুন। এমনকি বিয়ের বিষয়েও চিন্তাভাবনা শুরু করে দিয়েছিলেন জুনিয়রের বাবা।
এরই মধ্যে প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে টলিউডের এক উঠতি প্রযোজকের ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। এই বিষয়টিও সম্পূর্ণ গোপন করেই সফ্টওয়ার ইঞ্জিনিয়ার জুনিয়রের সঙ্গে প্রিয়াঙ্কার দেখা সাক্ষাৎ চলত বলে জুনিয়রের পরিবার সূত্রে খবর।
আরও পড়ুন: আইএএস পরিচয়ে কোটি টাকা আত্মসাৎ, জালে প্রতারক
২০১১ সালের ১২ জুলাই বেলঘড়িয়া এক্সপ্রেসওয়ের পাশে জুনিয়রের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। তদন্তে নামে বরাহনগর থানার পুলিশ। পুলিশ প্রথমে বাইক দুর্ঘটনা বলে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ করেন জুনিয়রের বাবা সমরেশ মৃধা। ময়না তদন্তে জুনিয়রের কাঁধে একটি ছোট্টো ছিদ্র দেখা যায়। দেহের অন্যান্য জায়গায় আঘাতের চিহ্ন ছিল না।
আরও পড়ুন: স্কুল বন্ধ থাকায় প্র্যাক্টিকাল পরীক্ষা নিয়ে চিন্তায় পড়ুয়ারা
পরে তদন্ত ভার নেয় সিআইডি। কিন্তু খুনে কিনারা হয়নি। এর পর কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন তাঁরা। গত বছরে আদালতের নির্দেশে তদন্ত শুরু করে সিবিআই। তিন বার জেরা করা হয়েছে প্রিয়াঙ্কাকে। সোমবার রাতে টানা ৮ ঘণ্টা জেরার পর প্রিয়াঙ্কাকে গ্রেফতার করেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।
সূত্রের খবর, জুনিয়রকে খুন করতে কন্ট্রাক্ট কিলার নিয়োগ করে থাকতে পারে প্রিয়াঙ্কা। সিবিআই সূত্রে দাবি, ঘটনার দিন প্রিয়াঙ্কা ফোন করে জুনিয়রকে ডাকে। কিন্তু জুনিয়র বাড়ি থেকে বেরনোর পর প্রিয়াঙ্কা জানিয়েছিলেন, তিনি দেখা করতে যাবেন না। হাল ছাড়েননি জুনিয়র। এরপর ক্রমে জায়গা বদলে অন্যত্র ডাকা হয় জুনিয়রকে। নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছেও যান জুনিয়র। সূত্রের খবর, প্রিয়ঙ্কা নিজে না গিয়ে অন্য একজনকে পাঠান। সেই ব্যক্তিই কি ভাড়াটে খুনি? খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
খুনের ঘটনায় কোনও প্রভাবশালী যোগ রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদিও প্রিয়াঙ্কার আইনজীবী মহলের বক্তব্য, তাঁদের মক্কেল এই তদন্তে সাহায্যই করছিলেন। খুনের ঘটনায় প্রিয়াঙ্কা জড়িত নন।