আদিগঙ্গা।—ফাইল চিত্র।
আদিগঙ্গা বিপন্ন। নিজেদের পর্যবেক্ষণে এমনটাই জানিয়েছিল জাতীয় পরিবেশ আদালত। এ-ও জানিয়েছিল, আদিগঙ্গার সংস্কারে রাজ্য সরকার থেকে কলকাতা পুরসভা, কারও কোনও হোলদোল নেই। আদালতের ওই মন্তব্যের পরেই আদিগঙ্গা পরিষ্কারের জন্য উঠেপড়ে লাগে কলকাতা পুরসভা। কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয় জঞ্জাল অপসারণ দফতরকে। সেই মতো সংশ্লিষ্ট দফতরের তরফে আদিগঙ্গা পরিষ্কারের জন্য চারটি সংস্থাকে নিয়োগ করা হয়েছে। এ দিকে, আজ, সোমবার পরিবেশ আদালতে ফের মামলাটি ওঠার কথা।
পুরসভা সূত্রের খবর, ওই চারটি সংস্থার নিয়োগ করা চুক্তিভিত্তিক কর্মীরা দৈনন্দিন ভিত্তিতে আদিগঙ্গা সাফাইয়ের কাজ করছেন। আগে ওই কাজ করত টালি নালা প্রকল্প দফতর। কিন্তু গত জুলাই থেকে সেই দায়িত্ব জঞ্জাল অপসারণ দফতরকে দেন পুর কর্তৃপক্ষ। তার পরেই দফতরের তরফে চার সংস্থাকে নিয়োগ করা হয়। সংস্থার নিয়োগ করা মোট ৩১০৬ জন কর্মী দৈনন্দিন ভিত্তিতে অগস্ট পর্যন্ত ওই কাজ করেন। কর্মীদের মজুরি বাবদ খরচ হয় প্রায় ১৩ লক্ষ টাকা। তাঁদের কাজ দেখে এবং পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে পুর কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেন, ওই কর্মীদেরই ধারাবাহিক ভাবে কাজে লাগানো হবে। আদিগঙ্গা পরিষ্কারের কাজ তাঁরা কেমন করছেন, জঞ্জাল অপসারণ দফতরের পাশাপাশি তার তদারকি করবে টালি নালা প্রকল্প দফতরও। জঞ্জাল অপসারণ দফতরের মেয়র পারিষদ দেবব্রত মজুমদার বলেন, ‘‘নিয়মিত লোক রেখে সাফাইয়ের কাজ চলছে।’’
সেই মতোই আদিগঙ্গা পরিষ্কারে প্রতিদিন ৭০ জন কর্মীকে নিয়োগ করেছে পুরসভা। তাঁদের মজুরি বাবদ প্রতি মাসে ৮৯ লক্ষ ৪৬ হাজার টাকা খরচ হবে বলে পুরসভা সূত্রের খবর। পুর আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, আদিগঙ্গার দু’ধারে যে আবর্জনা-ঝোপঝাড় হয়েছে, সেগুলি পরিষ্কারের পাশাপাশি জলে ভাসমান বর্জ্যও সংগ্রহ করছেন ওই কর্মীরা।
যদিও শুধুই পরিষ্কার করে আদিগঙ্গাকে বাঁচানো যাবে কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন পরিবেশকর্মীদের একটা বড় অংশ। তাঁদের বক্তব্য, আদিগঙ্গা বুজে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ তার দু’পাশের দখলদারি। ফলে দখলদারদের হটাতে না পারলে তার সংস্কার হওয়া মুশকিল। আদিগঙ্গা নিয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালতে মামলা করেছেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। তিনি বলছেন, ‘‘শহরের বাইরে আদিগঙ্গা যেখানে ৪০০ ফুট চওড়া, সেখানে শহরের ভিতরে তা মাত্র ১০০ ফুটের মতো। আবর্জনা তো রয়েছেই, সেই সঙ্গে ৭৭টি নালা এসে আদিগঙ্গায় পড়ছে। সেগুলি বন্ধ করতে না পারলে আদিগঙ্গাকে বাঁচানো যাবে না।’’