সাবধানি: হলে ঢোকার আগে পরীক্ষার উপকরণ জীবাণুমুক্ত করছে ছাত্রেরা। সোমবার, দক্ষিণ কলকাতার একটি স্কুলে। নিজস্ব চিত্র।
করোনার জন্য ২০২০ সালের আইসিএসই বা দশম শ্রেণির বোর্ডের পরীক্ষা শেষ হতে পারেনি। দুটো পরীক্ষা বাকি থাকতেই গোটা প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। একই কারণে এ বছরের আইসিএসই পরীক্ষাও বাতিল হয়ে গিয়েছে। সেই কারণে ২০২২ সালের আইসিএসই পরীক্ষার ব্যাপারে আর কোনও ঝুঁকি নেয়নি সিআইএসসিই বোর্ড। দু’টি সিমেস্টারে ভাগ করে অফলাইনে পরীক্ষা নিচ্ছে তারা। আইসিএসই-র ২০২২-এর প্রথম সিমেস্টারের পরীক্ষা শুরু হল সোমবার। বিভিন্ন স্কুলের অধ্যক্ষেরা জানাচ্ছেন, প্রথম দিন তাঁদের লক্ষ্য ছিল, করোনা-বিধি ঠিক মতো মেনে পরীক্ষা নেওয়া। তাতে নিজেরা সফল বলেই দাবি করেছেন ওই অধ্যক্ষেরা।
রামমোহন মিশন স্কুলের অধ্যক্ষ সুজয় বিশ্বাস জানান, পরীক্ষার দিনগুলিতে প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে দু’টি করে মাস্ক পরে আসতে বলা হয়েছিল। সঙ্গে স্যানিটাইজ়ারও রাখতে বলেছিলেন তাঁরা। সব পরীক্ষার্থীই তা করেছে। পরীক্ষার হলে ঢোকার মুখে ফগিং মেশিনের সাহায্যে প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে জীবাণুমুক্ত করা হয়েছে। হলের ভিতরে কাউকেই ব্যাগ রাখার অনুমতি দেওয়া হয়নি। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরে পরীক্ষার্থীদের বার করা হয়েছে শারীরিক দূরত্ব মেনে। সুজয়বাবু বলেন, ‘‘পরীক্ষার শেষে স্কুলের বাইরেও কেউ যাতে দূরত্ব-বিধি উড়িয়ে আড্ডায় না মাতে, সে দিকেও লক্ষ রাখা হয়েছে। স্কুল থেকে
বেরিয়ে অনেক সময়ে পরীক্ষার্থী বা তাদের মা-বাবারা পরীক্ষা নিয়ে আলোচনা শুরু করেন। এ বার স্কুলের সামনে এই ধরনের জটলা করতে দেওয়া হয়নি।’’
লা মার্টিনিয়ারের সচিব সুপ্রিয় ধর জানান, তাঁদের স্কুলের প্রতিটি ক্লাসরুম এমনিতেই নিয়মিত জীবাণুমুক্ত করা হয়। পরীক্ষার্থীরা যাতে দূরত্ব-বিধি মেনে ক্লাসে ঢোকে, সে দিকে নজর রাখছেন তাঁরা। ক্যালকাটা বয়েজ় স্কুলের অধ্যক্ষ রাজা ম্যাকগি বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলের ২০০ জন পড়ুয়া আইসিএসই পরীক্ষা দিচ্ছে। এই ২০০ জনকে আটটি ক্লাসরুমে ভাগ
করে বসানো হয়েছে। ফলে দূরত্ব-বিধি মেনে পরীক্ষার্থীদের বসাতে
কোনও অসুবিধা হয়নি। শরীরের তাপমাত্রা মেপেই পরীক্ষার্থীদের ঢুকতে দেওয়া হয়েছে।’’
ডন বস্কোর (পার্ক সার্কাস) অধ্যক্ষ, ফাদার বিকাশ মণ্ডল বলেন, ‘‘আমাদের পরীক্ষার হলগুলো খুব বড় বড়। ২২০ জন পরীক্ষার্থীকে তিনটে হলঘরে ভাগ করে বসতে দেওয়া হয়েছে।’’ বিভিন্ন স্কুলের অধ্যক্ষেরা জানিয়েছেন, এ দিন পরীক্ষা শুরু হয়েছে বেলা ১১টায়। শেষ হয়েছে ১২টায়। মাত্র এক ঘণ্টার পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীদের মাস্ক পরে থাকতে কোনও অসুবিধা হয়নি।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, এই পরীক্ষা শুরু হওয়ার ফলে অনেক শিক্ষক, শিক্ষিকা পরীক্ষার কাজে নিযুক্ত হয়েছেন। সেই সঙ্গে অফলাইন ক্লাসও চলছে। সব কিছু একসঙ্গে বজায়
রেখে ক্লাস করানো কি সম্ভব হচ্ছে? না কি অনলাইন ক্লাসের সংখ্যা কিছু কমাতে হয়েছে?
ন্যাশনাল ইংলিশ স্কুলের অধ্যক্ষা মৌসুমী সাহা জানিয়েছেন, তাঁদের স্কুলে আইসিএসই-র অফলাইন পরীক্ষার পাশাপাশি অনলাইন ও অফলাইন ক্লাসও চলছে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের রুটিন এমন ভাবে ফেলা হয়েছে, যাতে অনলাইন ক্লাস ব্যাহত না হয়। সেই সঙ্গে অফলাইন ক্লাসও চলে। ক্যালকাটা বয়েজ়ের অধ্যক্ষ রাজা ম্যাকগি জানান, যাঁরা পরীক্ষার কাজে নিযুক্ত, তাঁরা অনলাইন ক্লাস করছেন না। ডন বস্কোর অধ্যক্ষ, ফাদার বিকাশ মণ্ডল জানান, তাঁদের রুটিন এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে স্কুলে পরীক্ষা চলাকালীন অফলাইন ক্লাস ব্যাহত না হয়। যে সব শিক্ষকের অনলাইন ক্লাস করানোর কথা, তাঁরা সেই ক্লাসও করছেন। তবে যে সমস্ত শিক্ষক পরীক্ষার কাজে যুক্ত রয়েছেন, তাঁদের অনলাইন বা অফলাইন ক্লাস থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
অন্য দিকে, কয়েকটি স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন পরীক্ষার খাতা দেখে বোর্ডের ওয়েবসাইটে নম্বর আপলোড করার কথা থাকলেও কয়েকটি ক্ষেত্রে তা করা যায়নি।