ডায়াবেটিক কিটো-অ্যাসিডোসিসে শ্বাসকষ্ট হয়, সতর্ক থাকুন। ফাইল ছবি।
ডায়াবিটিস নিয়ে সে ভাবে তথ্য সংগ্রহের কাজ হয়নি এ দেশে। যেটুকু হয়েছে, তার বেশির ভাগই শহরভিত্তিক। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন এলাকায় আয়োজিত শিবিরে অংশ নিতে এগিয়ে এসেছেন মূলত রোগী, পরিবারে ডায়াবিটিসে আক্রান্ত হয়েছেন এমন মানুষ এবং হাতে গোনা সচেতন কিছু নাগরিক। ডায়াবিটিসের বিরুদ্ধে সামগ্রিক লড়াইয়ে এমন বিক্ষিপ্ত তথ্যই তাই মূল বাধা বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
জনসংখ্যার নিরিখে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে ভারত। ডায়াবিটিস আক্রান্তেও দ্বিতীয় স্থানে। ‘ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবিটিস ফেডারেশন’-এর (আইডিএফ) প্রকাশিত তথ্যে ২০১৭ সালে ভারতে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭ কোটি ২৯ লক্ষ। চিকিৎসকদের আশঙ্কা, যে হারে আক্রান্ত বাড়ছে, তাতে আগামী ছ’বছরে প্রথম স্থানে উঠে আসবে ভারত। আজ, বৃহস্পতিবার বিশ্ব ডায়াবিটিস দিবস। এমন পরিস্থিতিতে এ দেশে ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণের লড়াই শুরু যে জরুরি, মানছেন চিকিৎসকেরা।
সেই লড়াইয়ে ডায়াবিটিস নিয়ে সমীক্ষার কাজ শুরু করেছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)। এই সমীক্ষার খরচও বহন করবে তারা। জাতীয় স্তরে প্রকল্প রূপায়ণের ভার দেওয়া হয়েছে ‘মাদ্রাজ ডায়াবিটিস রিসার্চ ফাউন্ডেশন, চেন্নাই’কে। পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্ব পেয়েছে এসএসকেএম হাসপাতালের এন্ডোক্রিনোলজি ও মেটাবলিজম বিভাগ। এ রাজ্যে প্রকল্পের প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর চিকিৎসক শুভঙ্কর চৌধুরী এবং কো-ইনভেস্টিগেটর চিকিৎসক সুজয় ঘোষ।
সমীক্ষার জন্য নির্বাচন করা হয়েছে ৩৬ জনকে। তাঁদের চেন্নাইয়ে প্রশিক্ষণও হয়েছে। এই সমীক্ষায় ডায়াবিটিসের পাশাপাশি রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, স্থূলতা নিয়েও তথ্য সংগ্রহ হবে। চলতি মাসেই ‘পাইলট স্টাডি’ হিসেবে কলকাতার চেতলা এলাকায় শুরু হয়েছে সমীক্ষা। ছ’টি ভাগে বিভক্ত হয়ে রাজ্যের বিভিন্ন শহর এবং গ্রামে আগামী ছ’মাস সেই কাজই চলবে।
এন্ডোক্রিনোলজিস্ট সুজয় ঘোষ বলেন, “বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমীক্ষা চালাবে দল। দেওয়া হবে নির্দিষ্ট প্রশ্ন সংবলিত ফর্ম। নেওয়া হবে রক্তের নমুনা। পরীক্ষার রিপোর্ট পৌঁছে যাবে বাড়িতেই। এ জন্য টাকা খরচ করতে হবে না, প্রয়োজন শুধু তাঁদের সহযোগিতার।”
এসএসকেএমের এন্ডোক্রিনোলজি বিভাগের প্রধান শুভঙ্করবাবু বলছেন, ‘‘এই সমীক্ষা আগের তুলনায় ডায়াবিটিস নিয়ে অনেক বেশি তথ্য তুলে আনবে। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকল্পের পরিকল্পনা করতে সে সব কাজে লাগবে। প্রাথমিক স্তরেই ডায়াবিটিস এবং রক্তচাপের চিকিৎসার প্রসারে যে সার্বিক পরিকল্পনার ভাবনাচিন্তা করছে রাজ্য, সে কাজেও সাহায্য করবে তথ্য।’’
এই সমীক্ষার সঙ্গেই যাতে থাইরয়েড এবং ভিটামিন ডি-র মতো আরও কিছু পরীক্ষা করা যায়, সে জন্য আইসিএমআরের কাছ থেকে অনুমোদন চেয়ে পাঠানো হয়েছে। শুভঙ্করবাবু জানান, সেই অনুমোদন মিললেই একই সঙ্গে দু’টি লক্ষ্য পূরণ হবে।