সাহসিনী: বুধবার হাসপাতালে নীলাঞ্জনা চট্টোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র
প্রথমেই ওই দম্পতি, বিশেষত নীলাঞ্জনাকে অভিনন্দন। আমিও ওই অবস্থায় পড়লে বাস্তবে কী করতাম, জানি না।
কোনও মেয়ের শারীরিক নিগ্রহ হচ্ছে, যৌন নিগ্রহ হচ্ছে, এমনকি ছুরি বা গুলি পর্যন্ত চালানো হচ্ছে, অথচ লোকে নিগ্রহকারীকে থামানোর বদলে মজা দেখছে— এ রকম সংবাদই সাধারণত সামনে আসে। সেখানে ওঁদের এই পদক্ষেপ একটি দৃষ্টান্ত তৈরি করল।
কিন্তু পরে যখন প্রকাশ্যে আসছে যে, নিগৃহীতা এবং নিগ্রহে অভিযুক্ত একে অপরের পূর্ব-পরিচিত, কোনও বিষয়ে মতপার্থক্য হয়েছে বলেই তার এমন হিংস্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে, তখন মনে হয়, ভবিষ্যতে অন্য কেউ এমন ঘটনায় হস্তক্ষেপ করবেন তো? এমনিতেই কিন্তু পথেঘাটে অপরিচিত কোনও পুরুষ কোনও নারীকে নিগ্রহ করছেন দেখলেই পথচলতি মানুষেরা ধরে নেন, তাঁরা পরস্পরের পরিচিত এবং বিষয়টা ওঁদের নিজস্ব।
আরও পড়ুন: যাত্রারম্ভের আগেই অ্যাপের বিভ্রাটে মেট্রোর যাত্রীরা
আরও পড়ুন: আগামী সপ্তাহে মেট্রো চালু, কোথায় কীভাবে পাবেন ই-পাস
বুধবার আনন্দপুরের ঘটনার গোটা বিষয়টি প্রকাশ্যে আসায় সেই ধারণাটাই আরও বদ্ধমূল হয়ে উঠতে পারে অনেকের মনে। কিন্তু যাঁরা যে কোনও মানুষকেই প্রকাশ্যে অপমান, মারধর, যৌন নিগ্রহ বা যৌন হেনস্থা করাটা আপত্তিকর বলে মনে করেন, তাঁরা অনেকে এখনও এগিয়ে আসবেন বলেই আমার বিশ্বাস।
আশা রাখি, ‘নবকুমারেরা কাঠ কাটিতে যাইবেই’।
বাস্তবে চোখের সামনে কোনও অন্যায় ঘটতে দেখেও প্রধানত দুটো কারণে অনেকেই হস্তক্ষেপ করতে ভয় পান। প্রথমত, ওই লোকেদের কাছে অস্ত্রশস্ত্র থাকতে পারে। অষ্টম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের তথাকথিত প্রেমের ত্রিকোণে যদি অভিভাবক অস্ত্র চালান বা কথায় কথায় বোমা-গুলি-ছুরি চলে, তা হলে তো যে কেউ ভয় পাবেন। সেটাই স্বাভাবিক। প্রশাসন অস্ত্রের এই ঝনঝনা কমাতে কী পদক্ষেপ করছে? বাস্তবে তার প্রতিফলন কই? দৈনন্দিন পরিসরে ছোটখাটো বিষয়ও এখন অস্ত্রের মুখে ফয়সালা করার চেষ্টা দেখছি।
দ্বিতীয়ত, ২০১৫ সালে সুপ্রিম কোর্ট বিস্তারিত গাইডলাইন দিয়ে বলেছে যে, এ রকম অপরিচিত কারও বিপদে কেউ সাহায্য করলে সেই সাহায্যকারীকে কোনও ভাবেই টানাহেঁচড়া করা যাবে না। এই নির্দেশিকা নির্দিষ্ট ভাবে পথ দুর্ঘটনায় আহতকে সাহায্য করার বিষয়ে দেওয়া হলেও ব্যাপারটা তো একই। প্রশ্ন ওঠে, এ সব ক্ষেত্রে সহায়তাকারী যে নিজের সুবিধা ও সময়মতো থানায়, আদালতে গিয়ে নিজের বয়ান বা এজাহার দিতে পারবেন, সে ব্যাপারে পুলিশ ও প্রশাসন সংবাদমাধ্যমে যথেষ্ট প্রচার করে না কেন? লোকে তো পাশে থাকতে চান না এই ভয়েই। তাঁদের মনে হয়, বার বার ডাক পড়বে, অন্যের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে কাজকর্মই শেষে চুলোয় যাবে! এই নির্দেশিকা তো সব রাজ্যের জন্যই বাধ্যতামূলক। কিন্তু কই, এত দিনেও তো তার কোনও প্রচার দেখিনি!
সহনাগরিকের প্রতি মানবিক আচরণ অবশ্যই কর্তব্যের মধ্যে পড়ে, কিন্তু সাধারণ মানুষ তখনই মানবিক হবেন, যখন তাঁরা জানবেন, পুলিশ-প্রশাসনও মানবিক মুখ নিয়ে সাহায্য করতে তাঁদের পাশে আছে। নীলাঞ্জনার চিকিৎসার খরচ রাজ্য সরকার বহন করছে, এটা খুব ভাল কথা। কিন্তু আশ্বাস আর প্রচারটাও জরুরি।