স্বামী বলছেন, ডাকাতেরা গুলি করে মেরে ফেলেছে তাঁর স্ত্রীকে। আর স্ত্রী-র বাপের বাড়ির অভিযোগের আঙুল স্বামীর দিকেই।
ভাঙড় থানার ঘুনিমেঘি গ্রামের বাসিন্দা ওই গৃহবধূ বীণা গায়েনের মৃত্যু নিয়ে তাই রহস্য দানা বেঁধেছে। রবিবার গভীর রাতে ওই ঘটনার পরে বীণার স্বামী বাপ্পা গায়েন ও শাশুড়ি রেখা গায়েনকে আটক করেছে পুলিশ। দক্ষিণ ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পূর্ব) অরিজিৎ সিংহ বলেন, ‘‘বাপ্পা ও তাঁর মায়ের বয়ানে অসঙ্গতি মিলেছে। বাপ্পার দাদা বাবানকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’’ দেহটি ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে।
ওই রাতে বাপ্পার বাড়ি থেকে গুলির শব্দ পেয়ে থানায় খবর দেন গ্রামের বাসিন্দারা। রাতেই বাড়ি থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বীণাকে উদ্ধার করে পুলিশ। হাসপাতালে যাওয়ার পথেই মৃত্যু হয় তাঁর। পুলিশের দাবি, জিজ্ঞাসাবাদে বাপ্পা জানান, বাড়িতে ১০-১২ জন ডাকাত চড়াও হয়ে শাসানি দেয়, টাকা ও গয়না দিয়ে দিতে হবে। বীণা বাধা দিলে তাঁকে গুলি করে ডাকাতেরা। বাপ্পার দাবি, ডাকাতদের গুলিতে তাঁর দাদা বাবানও জখম হন।
মৃতার মা ভারতী ঘোষ অবশ্য জামাইয়ের বিরুদ্ধেই পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তাঁর দাবি, ‘‘জামাই পরিকল্পিত ভাবে ডাকাতদের দিয়ে আমার মেয়েকে খুন করিয়েছে। বিয়ের পর থেকেই ও শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করত। বছরখানেক আগেও মেয়েকে খুনের চেষ্টা হয়েছিল।’’ পেশায় গাড়ি মিস্ত্রি বাপ্পার সঙ্গে বীণার বিয়ের কয়েক বছর পর থেকেই অশান্তি শুরু হয়েছিল তাঁদের।
তদন্তকারীদের বক্তব্য, বাপ্পার বয়ানে ধোঁয়াশা রয়েছে। কারণ, তাঁর বাড়িতে গিয়ে পুলিশ দেখেছে, কোথাও কিছু ওলটপালট হয়নি। গয়না ও নগদ টাকাও বাড়িতে রয়েছে। বাপ্পার বক্তব্য, ডাকাতদের অর্ধেক গয়না দেওয়া হয়েছে। তদন্তকারীদের এখানেই প্রশ্ন, বাপ্পা নিজে যতটুকু গয়না দিলেন, ডাকাতেরা তা নিয়েই চুপচাপ চলে গেল কেন? পুলিশের একাংশেরও সন্দেহ, বাপ্পাই দুষ্কৃতী দলকে ‘ভাড়া’ করে এনে ডাকাতির নাটক করে স্ত্রীকে খুন করিয়ে থাকতে পারেন। বাপ্পার দাদা বাবান হাসপাতালে ভর্তি। পুলিশের মতে, ঘটনাটি ‘বিশ্বাসযোগ্য’ করতে বাবানকেও গুলি করা হয়েছে। সন্দিহান পড়শিরাও। তাঁরাও বলেন, ‘‘রাতে ১০-১২ জন ডাকাত এল গ্রামে, আমরা কেউই জানতে পারলাম না? এটা কী করে হয়?’’