প্রতীকী ছবি
একটি ফ্ল্যাট থেকে প্রথমে চিৎকার-চেঁচামেচি, পরে এক মহিলা-কণ্ঠের তীব্র আর্তনাদ ভেসে এসেছিল। তার পরেই সব চুপ। দীর্ঘক্ষণ ওই ফ্ল্যাট থেকে সাড়াশব্দ না পেয়ে সন্দেহ হয় প্রতিবেশীদের। তাঁরা পুলিশে খবর দেন। পুলিশের একটি দল গিয়ে ফ্ল্যাটের দরজা খুলে দেখে, শোয়ার ঘরের মেঝেতে পড়ে রয়েছে এক মহিলার রক্তাক্ত দেহ। মাথায় গভীর ক্ষত। দেহের পাশেই পড়ে রক্তমাখা একটি হাতুড়ি।
মঙ্গলবার বেলা ১১টা নাগাদ এই ঘটনা ঘটেছে হাওড়ার মালিপাঁচঘরা থানা এলাকার শ্রীরাম ঢ্যাং রোডে একটি সাততলা বহুতলের পাঁচতলার ফ্ল্যাটে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম সুইটি সাউ (২৮)। আটক করা হয়েছে তাঁর স্বামী শুভম সাউকে। পুলিশের দাবি, সে ছ’বছরের মেয়ে অনন্যাকে নিয়ে পালানোর জন্য ব্যাগ গোছাচ্ছিল। তদন্তকারীদের দাবি, স্ত্রীকে খুন করে পালানোর পরিকল্পনা করেছিল শুভম।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন ফ্ল্যাটের এক প্রতিবেশীর সঙ্গে দেখা হতে শুভম তাঁকে বলে, জানলার পর্দা টাঙাতে গিয়ে তার সঙ্গে স্ত্রীর বচসা হয়েছে। পর্দা টাঙানোর জন্য তার হাতে ছিল একটি হাতুড়ি। রাগের মাথায় সে ওই হাতুড়িটি দিয়ে স্ত্রীর মাথায় মেরেছে। কিন্তু সুইটি যে মারা যাবেন, তা বুঝতে পারেনি। ওই প্রতিবেশীর মারফতই নিমেষের মধ্যে খবরটি ছড়িয়ে পড়ে।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, শুভম একটি অ্যাপ-ক্যাব চালাত। নিজেই গাড়িটি কিনেছিল। এর জন্য তাকে ঋণ নিতে হয়েছিল। কিন্তু সময় মতো ঋণ শোধ করতে না পারায় মাঝেমধ্যেই তাগাদা দিতে আসতেন পাওনাদারেরা। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, গভীর রাতে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বাড়ি ফেরা নিয়েও ওই দম্পতির মধ্যে অশান্তি লেগে থাকত। সৌরভ মাইতি নামে শুভমদের এক প্রতিবেশী বলেন, ‘‘স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই খুব মিশুকে ছিলেন। বছর শেষের ছুটি কাটাতে ওঁদের গ্যাংটক যাওয়ার কথা ছিল। তার আগেই এমন ঘটনা।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, আদতে উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা শুভম বছর দেড়েক আগে শ্যামবাজারের ভাড়া বাড়ি থেকে শ্রীরাম ঢ্যাং রোডের এই ফ্ল্যাটে আসে। তবে সুইটি ছিলেন কলকাতারই বাসিন্দা। ছেলের সঙ্গেই ওই ফ্ল্যাটে থাকেন শুভমের বাবা-মা। ছেলের এমন কাণ্ড দেখে তাঁরাও হতভম্ব। ঘটনা প্রসঙ্গে হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, সাময়িক ক্রোধের বশে ওই যুবক স্ত্রীর মাথায় হাতুড়ি দিয়ে মেরে তাঁকে খুন করেছে। তবে ময়না-তদন্তের রিপোর্ট আসার পরেই এই ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে।’’