সমস্যা: দমদম রোডের একাংশ জুড়ে দাঁড়িয়ে মালবাহী গাড়ি। পাশ দিয়েই কোনও রকমে চলছে যানবাহন। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
রাস্তার দু’পাশে সার সার দোকান। ফুটপাত দখল করে বসে হকারেরা। ফুটপাত শেষ হতেই রাস্তার উপরের জায়গা গুমটির দখলে। তার পাশেই প্লাস্টিক পেতে মাছ, আনাজ নিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। ট্যাক্সি, অটো, রিকশার স্ট্যান্ডও রাস্তার উপরেই। গাড়ি, লরি, বাস, মালবাহী গাড়ি পার্ক করার জায়গা বলতে সেই রাস্তাই। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ফেলে রাখা ইট, বালি, পাথরকুচির স্তূপ। রাস্তার একাংশ আটকে রয়েছে ১০টির বেশি বাঁশের তোরণও।
উত্তরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা দমদম রোডের হাল দীর্ঘদিন ধরে এমনই। এখন টালা সেতু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গোদের উপর বিষফোড়ার মতো যুক্ত হয়েছে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ। আর তার জেরে সাধারণ মানুষের ভোগান্তিও পৌঁছেছে চরমে। নাগেরবাজার থেকে চিড়িয়ামোড় পর্যন্ত তিন কিলোমিটার রাস্তা যেতে পেরিয়ে যাচ্ছে এক ঘণ্টারও বেশি সময়। সারাদিনই লেগে থাকছে যানজট। একগুচ্ছ বাধা ঠেলে ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠছে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া, অফিসযাত্রী থেকে এলাকার মানুষের। দমদম রোডের পাশেই রয়েছে একাধিক স্কুল, কলেজ। ওই রাস্তা ধরে যাতায়াত করে এলাকার আরও অনেক স্কুলের গাড়িও। অভিভাবকদের অভিযোগ, প্রতিদিন যানজটে টানা আটকে অসুস্থ হয়ে পড়ছে পড়ুয়ারাও।
নাগেরবাজার থেকে দমদম রোড ধরে চিড়িয়ামোড় পর্যন্ত গিয়ে দেখা গেল, রাস্তার অর্ধেক অংশ বেদখল হয়ে রয়েছে। বিভিন্ন দোকানের দাপটে উধাও ফুটপাতও। বাধ্য হয়েই সন্তানের হাত শক্ত করে ধরে চলন্ত গাড়ির পাশ দিয়ে হাঁটতে বাধ্য হচ্ছেন মা। কিন্তু সেখানেও বসেছে বাজার। সে সব এড়িয়ে কার্যত দমদম রোডের মাঝখান দিয়ে হাঁটাচলা করছেন পথচারীরা। এর জেরে রোজ একাধিক দুর্ঘটনা লেগেই রয়েছে বলে অভিযোগ এলাকার অটোচালকদের। অভিযোগ, রাস্তার ধারে গাড়ির পার্কিংয়ের জেরে কলেজ, দোকান, এমনকি এটিএমেও ঢোকা যায় না। নাগেরবাজার, দমদম স্টেশন, চিড়িয়ামোড়ের মতো এলাকায় রাস্তার উপরেই রয়েছে ট্যাক্সি স্ট্যান্ড। যদিও সে সব ট্যাক্সি মিটারে যাতায়াত করে না বলে অভিযোগ।
এলাকার মানুষের অভিযোগ, দক্ষিণ দমদম পুরসভায় দু’বার তৃণমূল ক্ষমতায় এলেও ওই রাস্তা থেকে জবরদখলকারীদের সরানো যায়নি। কয়েক বছর আগে নাগেরবাজার উড়ালপুলের নীচ থেকে দখলকারীদের সরাতে গিয়ে আক্রান্ত হয় পুলিশ। ছাড় পাননি পুরসভার আধিকারিকেরাও। এ দিকে, যানজটের জন্য বাজার এবং হকারদের দায়ী করছে ট্র্যাফিক পুলিশ। বাজার সরাতে গেলে রাজনৈতিক বাধাও আসে বলে জানানো হচ্ছে পুলিশের তরফে। তবে মাঝেমধ্যেই হানা দিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ি ধরপাকড়, ইমারতি দ্রব্য সরানো হয় বলে দাবি পুলিশের। এই প্রসঙ্গে ব্যারাকপুরের ডেপুটি কমিশনরার আনন্দ রায় বলেন, ‘‘ওই রাস্তায় কিছু সমস্যা রয়েছে। তবে মাঝেমধ্যেই অভিযান চালানো হয়। শীঘ্রই বিষয়টি দেখা হবে।’’
টালা সেতু বন্ধ হওয়ার পরে দমদম রোডে চাপ বাড়বে জানা থাকলেও আগে থেকে জবরদখলকারীদের সরানোর কোনও ব্যবস্থা করা হল না কেন? এই প্রশ্নের জবাবে দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ প্রবীর পাল বলেন, ‘‘এত হকারকে পুনর্বাসন দেওয়ার জায়গা দমদমে নেই। তাই হকার উচ্ছেদ না করে রাস্তা দিয়ে যাতে মসৃণ ভাবে গাড়ি যাতায়াত করতে পারে, সেই ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। রাস্তায় না বসে ফুটপাতের কিছুটা অংশে যাতে অস্থায়ী বাজার বসে, তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’ রাস্তায় ইমারতি দ্রব্য ফেলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘মাঝেমধ্যে হানা দিয়ে রাস্তায় ফেলে রাখা মালপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়।’’ অনুষ্ঠান মিটে গেলেই যাতে রাস্তার তোরণ খুলে নেওয়া হয়, সে ব্যাপারেও কড়া নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রবীরবাবু।